এখনও এক বছর বাকি বিধানসভা নির্বাচনের। কিন্তু ভোটার তালিকা নিয়ে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে গত দু’দিনে সরগরম হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপির দিকে আঙুল তুলেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় ভিন্রাজ্যের ভোটারদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। শুক্রবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ নিয়ে কমিশনে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই আবহে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে সমাজমাধ্যমে বার্তা দিল মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। ভোটার তালিকায় সংশোধন করানোর দরকার থাকলে কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে, এক্স হ্যন্ডলে বার্তা দিয়ে তা আরও এক বার মনে করিয়ে দেওয়া হল কমিশনের তরফ থেকে।
শুক্রবার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের এক্স হ্যন্ডলে লেখা হয়, “জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৫০ অনুযায়ী, ভোটারদের নিবন্ধন বিধি ১৯৬০ এবং ভোটার তালিকা সংক্রান্ত ম্যানুয়াল অনুসারে বিএলও, এইআরও, ইআরও এবং সিইও-রা যে কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রাজনৈতিক দলগুলির দ্বারা নিযুক্ত বুথ স্তরের এজেন্টদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য কাজ করেন। কোনও নির্দিষ্ট দাবি বা আপত্তি থাকলে পশ্চিমবঙ্গে ৮০,৬৩৩ জন বিএলও,৩,০৪৯ জন এইআরও,২৯৪ জন ইআরও-র মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সর্ব প্রথম জানাতে হবে।” কমিশনের যুক্তি, কার্ড দেওয়ার পদ্ধতিতে বিএলওরাও থাকেন। ভুয়ো ভোটারের ক্ষেত্রে তা হলে তাদের নজর এড়িয়ে কী ভাবে হচ্ছে? এটায় রাজ্যকে ঘুরিয়ে বার্তা দিল কমিশন টুইটে।
গত বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাদের বৈঠকে জেলায় জেলায় ভোটার তালিকায় ‘ভূতুড়ে’ ভোটার নিয়ে সরব হয়েছিলেন মমতা। সেই ‘ভূত’ তাড়ানোকেই এই মুহূর্তের ‘একমাত্র কাজ’ বলে উল্লেখ করেন দলের সর্বময় নেত্রী। ভোটার তালিকায় গরমিলের কথা বলতে গিয়ে বেশ কিছু নামও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। ভোটার তালিকায় ‘কারচুপি’র বিরুদ্ধে নিজের দলকে সতর্ক হতে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তালিকায় নজরদারির জন্য কোর কমিটিও ঘোষণা করে দেন।
দলের মহা সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘোষণার পর কালক্ষেপ না করে পাল্টা ময়দানে নামে বিজেপি। বিধায়ক এবং দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মৃতদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া, ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করা-সহ একগুচ্ছ দাবি জানানোর পাশাপাশি তৃণমূলের বিরুদ্ধে দক্ষিণবঙ্গের একটি অংশের ভোটার তালিকায় কারচুপির চেষ্টার অভিযোগ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সমস্ত বুথের তালিকাও জমা দেন তিনি। শুভেন্দুর সঙ্গে শুক্রবার কমিশনে যান অগ্নিমিত্রা পাল, বঙ্কিম ঘোষ, মিহির গোস্বামী, সুশান্ত ঘোষ, অসীম সরকার-সহ বিজেপি পরিষদীয় দলের অনেকেই। দলের তরফে কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শিশির বাজোরিয়াও ছিলেন প্রতিনিধি দলে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক আরিজ আফতাব অবসর নেওয়ায় এই মুহূর্তে ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হিসাবে কাজ চালাচ্ছেন দিব্যেন্দু দাস। তাঁর কাছে চিঠি তথা দাবিপত্র জমা দেয় বিজেপি। বিজেপির দাবি, এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় ১৭ লক্ষের বেশি ‘ভুয়ো’ নাম রয়েছে। নির্বাচন কমিশন যেন অবিলম্বে এই সব নাম বাদ দেয়। পাশাপাশি চিঠিতে আর্জি জানানো হয়েছে যে, কোনও ‘প্রকৃত’ ভোটারের নাম যেন তালিকা থেকে বাদ না পড়ে।
প্রসঙ্গত, জানুয়ারি মাসে প্রথম সপ্তাহে প্রকাশিত হয় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। এ পর্যন্ত এক লক্ষ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। মৃত্যুজনিত কারণ ছাড়াও যে ভোটাররা অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছেন অথবা দুটো ভোটার কার্ড রয়েছে, এমন এক লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।