বিষ্ণু, হিজাজির গোলে আইএসএলে জয়ে ফিরল ইস্টবেঙ্গল, কেরলের বিরুদ্ধে চেনা মেজাজে ব্রুজ়োর দল

কেরল – ১ (ডানিশ)

টানা তিন ম্যাচ হারের পর জয়। আইএসএলে গুরুত্বপূর্ণ জয় তুলে নিল ইস্টবেঙ্গল। যুবভারতীতে আগ্রাসী ফুটবল খেলে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ২-১ ব্যবধানে জয় তুলে নিল অস্কার ব্রুজ়োর দল। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে রিচার্ড সেলিস এবং দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস জুটি। ক্রমশ ফর্মে ফিরছেন ক্লেটন সিলভাও। মাঝমাঠে দুরন্ত পিভি বিষ্ণুও। সব মিলিয়ে চোট-আঘাতে জর্জরিত ইস্টবেঙ্গলকে আইএসএলের ১৭তম ম্যাচে বেশ ভাল দেখাল।

রক্ষণ ডোবাচ্ছে প্রায় প্রতি ম্যাচেই। শিক্ষানবিশদের মতো ভুল করছেন হিজাজি মাহের। আনোয়ার আলির সুস্থ হতে এখনও ১৫ দিন। হেক্টর ইয়ুস্তেও পুরো ৯০ মিনিট খেলার মতো ফিট নন। মহম্মদ রাকিপ, প্রভাত লাকরার মতো ডিফেন্ডারেরা চোট পেয়ে বাইরে। এই পরিস্থিতিতে অস্কার দলের মাঝমাঠকেই এক রকম ব্যবহার করলেন রক্ষণ হিসাবে। তাতে মাঝমাঠের দখল নিতেও যেমন সুবিধা হল, তেমনই অনেক বিপজ্জনক দেখাল ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণভাগকেও। কেরলের গোলরক্ষক সচিন সুরেশ সতর্ক না থাকলে এবং সেলসের শট পোস্টে লেগে না ফিরলে শুক্রবার প্রথমার্ধেই ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে যেতে পারত লাল-হলুদ শিবির। দিয়ামানতাকোস এবং ক্লেটনের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন কেরলের গোলরক্ষক।

ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিট ইস্টবেঙ্গলেরই দাপট ছিল। প্রায় সারা ক্ষণই খেলা হয়েছে কেরলের অর্ধে। যদিও নোয়া মাঝেমধ্যেই হানা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে। ১২ মিনিটে প্রথম গোলের সুযোগ পায় ইস্টবেঙ্গল। মহেশের থেকে বল পান বিষ্ণু। তিনি প্রতিপক্ষের বক্সে থাকা দিয়ামানতাকোসকে বল বাড়ান। তাঁর গোলমুখী শটে হাত ছুঁইয়ে দলের পতন রোখেন সচিন। এর পর ১৫ মিনিটে বক্সের ঠিক বাইরে সেলিসকে ফাউল করেন কেরলের এক ডিফেন্ডার। ফ্রিকিক থেকে ভাল শট নেন ক্লেটন। তাঁর শট কোনও রকমে আটকান সচিন। গোলের সামনে ফাঁকায় বল পেয়ে যান সেলিস। কিন্তু গোল করতে পারেননি ভেনেজুয়েলার স্ট্রাইকার। তবে গোলের জন্য বেশি ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি ইস্টবেঙ্গলকে। প্রতি আক্রমণ থেকে কেরলের অর্ধে সেন্টার সার্কেলের মাথায় বল পান বিষ্ণু। একার চেষ্টায় বল নিয়ে পৌঁছে যান কেরলের বক্সে। প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারকে গায়ে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় প্লেসিং করে ২১ মিনিটের মাথায় ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পরও আক্রমণের রাস্তা থেকে সরেনি লাল-হলুদ ব্রিগেড। প্রথম গোলের ৫ মিনিট পরেই ক্লেটনের বুদ্ধিদীপ্ত ভলি ফিস্ট করে বাইরে পাঠিয়ে দেন সচিন। যদিও ইস্টবেঙ্গলের অনুকূলে কর্নার দেননি রেফারি। ৩৭ মিনিটে সেলিসের ৪০ গজের শট পোস্টে গেলে না ফিরলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যেতে পারত ইস্টবেঙ্গল।

১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সামান্য গা-ছাড়া মনোভাব দেখা যায়। সেই সুযোগে মাঠের বাঁ প্রান্ত ব্যবহার করে একের পর এক আক্রমণ তুলে আনে কেরল। চাপ তৈরি হয় ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে। অনভ্যস্ত ডান দিক সামলাতে কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলেন জিকসন সিংহ। এই সময় লাল-হলুদের রক্ষণের দুই ফুটবলার হিজাজি এবং নুনঙ্গা পরিস্থিতি সামাল দেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। চাপে পড়ে যাওয়া ইস্টবঙ্গল পাল্টা আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে। ৭২ মিনিটে কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে মাথা ছুঁইয়ে দলকে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে দেন হিজাজি। এই গোলেই লাল-হলুদের জয় এক রকম নিশ্চিত হয়ে যায়। যদিও ৮৩ মিনিটে নিখুঁত ভলিতে কেরলের হয়ে ব্যবধান কমান ডানিশ ফারুখ। তাতে অবশ্য খুব একটা সমস্যা হয়নি। ৭৯ মিনিটে বিষ্ণুকে তুলে নেন ব্রুজ়ো। তেল দেওয়া যন্ত্রের মতো সারা মাঠ জুড়ে খেললেন তিনি। এ দিন ইস্টবেঙ্গলের ঝকঝকের ফুটবলের নেপথ্যে তাঁর অবদান অনেকটাই। বিষ্ণুই এখন লাল-হলুদের মাঝমাঠের জেনারেল।

শুক্রবারের জয়ের ফলে ১৭ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট হল ইস্টবেঙ্গলের। পয়েন্ট তালিকায় ১১ নম্বরেই থাকল ব্রুজ়োর দল। অন্য দিকে, ১৮ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে আট নম্বরে কেরল। তিন ম্যাচ পর পয়েন্ট নষ্ট করল তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.