বিশ্বকাপের ছবি চ‍্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে, ইংল্যান্ডকে পেয়েই আফগান দাদাগিরি! জাদু জ়াদরানের, বাটলারদের ছুটি

এক দিনের বিশ্বকাপের পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হেরে গেল ইংল্যান্ড। আফগানদের এই জয়ের গায়ে ‘অঘটন’ তকমা সাঁটিয়ে দেওয়া যায় না। কারণ বার বার অঘটন হয় না। সাদা বলের বড় প্রতিযোগিতায় আফগানিস্তানের ধারাবাহিক সাফল্য ক্রিকেট বিশ্বকে আর চমকে দেয় না। পুলকিত করে। ছোট দলের পেরাহান টানবান (আফগানিস্তানের জাতীয় পোশাক) খুলে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আফগানিস্তান এখন সমীহ করা নাম। প্রথমে ব্যাট করে হশমতুল্লা শাহিদির দল ৭ উইকেটে ৩২৫ রান করে। ইব্রাহিম জ়াদরানের নজির গড়া ১৭৭ রানের ইনিংসে ভর করে জস বাটলারদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় আফগানেরা। জবাবে ইংল্যান্ড করল ৪৯.৫ ওভারে ৩১৭। ৮ রানে হারায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে তৃতীয় দল হিসাবে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল ইংল্যান্ডের। কাজে এল না জো রুটের ১২০ রানের লড়াকু ইনিংস।

গোলাগুলি, ভূমিকম্পের মাঝেও তালিবানের দেশ বেঁচে আছে ক্রিকেটে। রশিদ খান, জ়াদরান, মহম্মদ নবি, রহমানুল্লাহ গুরবাজ়েরা প্রমাণ করে দিয়েছেন সাধনার কাছে হার মানতে বাধ্য প্রতিকূলতা। ২০২৩ সালে ভারতের মাটিতে এক দিনের বিশ্বকাপে প্রথম ছয় দলের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল আফগানিস্তান। ইংল্যান্ড ছাড়াও পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দিয়েছিলেন রশিদেরা। আফগানদের ক্রিকেটীয় দাপট চোখ খুলে দিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বের। সেই দাপট যে হঠাৎ বা সাময়িক ছিল না, তা আফগান ক্রিকেটারেরা প্রমাণ করে দেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। গ্রুপ পর্বে নিউ জ়িল্যান্ড এবং সুপার এইট পর্বে অস্ট্রেলিয়াকে হারতে হয় আফগানদের কাছে। দাপুটে ক্রিকেট খেলেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন রশিদেরা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও আফগানিস্তানের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারলেন না বাটলারেরা।

দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতায় লড়াই আফগানদের মজ্জাগত। সে রাজনৈতিক লড়াই হোক, মানবাধিকারের জন্য বা নারী স্বাধীনতার জন্য হোক বা ক্রিকেট মাঠে। লড়াই, লড়াই এবং লড়াই। একটি মন্ত্রে বাধা আফগানদের জীবন। সেই মন্ত্রের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ২২ গজেও। কয়েক বছর আগে আফগানিস্তান নামটা শুনলেই উঠে আসত তালিবানের কথা। গোটা দেশের উপর শাসন কায়েম করতে তখন চারিদিকে তালিবানদের গুলির শব্দ। তার মাঝে ব্যাট, বলের শব্দ শোনার কথা ভাবাই যেত না। তবু ক্রিকেটকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন আফগানেরা। না হলে বিশ্বমঞ্চে বার বার আফগানিস্তান ব্যাট, বলের শব্দ শোনাতে পারত না ক্রিকেট বিশ্বকে। তথাকথিত বড় দলগুলির বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের জয় এখন আর অঘটন নয়।

বুধবার লাহোরের ২২ গজে ম্যাচের শুরুটা ভাল হয়নি আফগানিস্তানের। ৩৭ রানের মধ্যে তিন উইকেট চলে গিয়েছিল তাদের। গুরবাজ় (৬), সেদিকুল্লা অটল (৪) এবং রহমত শাহ (৪) অল্প রান করে আউট হয়ে যান। সেখান থেকে ইনিংস গড়ার কাজটা করেন জ়াদরান এবং অধিনায়ক শাহিদি। তাঁরা ১০৩ রানের জুটি গড়েন। গত ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হারলেও এই ম্যাচে আফগানেরা ব্যাট হাতে পরিণত ক্রিকেট খেললেন। মাঝের ওভারে উইকেট না হারিয়ে ইনিংস গড়লেন জ়াদরানেরা। শেষ দিকে আবার দ্রুত রান তুললেন। জ়াদরান ওপেন করতে নেমে প্রায় পুরো ইনিংস ব্যাট করলেন। শেষ ওভারে আউট হন তিনি। ১৪৬ বলে তাঁর করা ১৭৭ রানের ইনিংসে ছিল ১২টি চার এবং ছ’টি ছক্কা। জ়াদরানের এই ইনিংসই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তাঁকে সঙ্গ দেন অজমতুল্লা ওমারজাই (৩১ বলে ৪১) এবং মহম্মদ নবি (২৪ বলে ৪০)। তাঁরা শেষ দিকে দ্রুত রান করে আফগানিস্তানকে ৩২৫ রানে পৌঁছে দেন। ইংল্যান্ডের হয়ে তিনটি উইকেট নেন জফ্রা আর্চার। শেষ ওভারে লিয়াম লিভিংস্টোন নেন দু’উইকেট। একটি করে উইকেট নেন জেমি ওভারটন এবং আদিল রশিদ।

জয়ের জন্য ৩২৬ রান তাড়া করতে নেমে ৩০ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। ফিল সল্ট (১২) এবং জেমি স্মিথ (৯) দলকে ভরসা দিতে পারেনি। ইনিংসের হাল ধরেন বেন ডাকেট এবং রুট। ডাকেট (৪৫ বলে ৩৮) বড় রান করতে না পারলেও ২২ গজের এক প্রান্ত আগলে রাখেন রুট। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়কের ব্যাটই দলের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল প্রায় শেষ পর্যন্ত। যদিও প্রয়োজনীয় বড় জুটি গড়তে পারল না ইংল্যান্ড। হ্যারি ব্রুক (২১ বলে ২৫), বাটলার (৪২ বলে ৩৮), লিয়াম লিভিংস্টোনেরা (৮ বলে ১০) দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে আউট হলেন। শেষ দিকে রুটের সঙ্গে জুটি বাঁধেন জেমি ওভারটন।

দায়িত্বশীল শতরানের ইনিংস খেলে দলকে জেতাতে পারলেন না রুট। ওমরজ়াইয়ের বলে তাঁর ১১১ বলে ১২০ রানের ইনিংস শেষ হতেই হতাশা নেমে আসে ইংল্যান্ড শিবিরে। ১১টি চার এবং ১টি ছক্কা মারেন রুট। চাপের মুখে ওভারটন (২৮ বলে ৩২), আর্চারদের (৮ বলে ১৪) চেষ্টা কাজে আসেনি। আফগানিস্তানের সফলতম বোলার ওমরজ়াই ৫৮ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিলেন। নবির ৫৭ রানে ২ উইকেট।

এ দিনের জয়ের ফলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা জিইয়ে রাখল আফগানিস্তান। সে জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জিততেই হবে রশিদ খানদের। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ৩ পয়েন্ট। আফগানিস্তান পরের ম্যাচ জিততে পারলে তাদের পয়েন্ট হবে ৪। অস্ট্রেলিয়া ৩ পয়েন্টেই থেকে যাবে। অন্য দিকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ইংল্যান্ড হারিয়ে দিলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ চারে যাবে আফগানেরা। তখন রান রেটের ভিত্তিতে দ্বিতীয় সেরা দল হিসাবে সেমিফাইনালে উঠবে অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এই দু’দলই নিজেদের শেষ ম্যাচ জিতলে তারাই যাবে শেয চারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.