এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে হংকংয়ের বিরুদ্ধে জিতলেও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অবস্থা যে ভাল নয়, সেটা বোঝা গিয়েছিল। শনিবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তাদেরই ব্যাটিংয়ের দৈন্যদশা প্রকট হয়ে গেল। শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের সামনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল বাংলাদেশের টপ অর্ডার। জাকের আলি এবং শামিম হোসেন লড়াই না করলে এ দিন আরও লজ্জার মুখে পড়তে হত বাংলাদেশকে।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আগে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৩৯ তোলে বাংলাদেশ। জবাবে শ্রীলঙ্কা সেই রান তুলে নেয় ৬ উইকেট বাকি থাকতেই। অর্ধশতরান করেন পাথুম নিসঙ্ক। গ্রুপের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে খেলবে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে হারলেই এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নেবে তারা।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ম্যাচ ক্রিকেটবিশ্বে দীর্ঘ দিন ধরেই ‘নাগিন ডার্বি’ বলে পরিচিত। ২০১৮-য় একটি ম্যাচে দানুষ্কা গুণতিলকাকে আউট করে মাথার হাত দিয়ে নেচে উৎসব করেছিলেন নাজমুল ইসলাম। দেখে মনে হয়েছিল ফণা তোলা সাপের নাচের কায়দায় উচ্ছ্বাস করেছেন তিনি। সেই নাচ পরিচিত হয় ‘নাগিন ডান্স’ নামে। তা থেকেই এই দুই দলের ম্যাচ পরিচিত ‘নাগিন ডার্বি’ হিসাবে। ওই ম্যাচের পর বহু বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দেশ। প্রতিটি ম্যাচই ছিল নাটকীয়তায় ভরা। শনিবারের ম্যাচকে কার্যত একপেশে বানিয়ে জিতেছে শ্রীলঙ্কা।
টসে জিতে আগে বল করার সিদ্ধান্ত নেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চরিত আসালঙ্কা। বাংলাদেশের শুরুটা যতটা খারাপ হতে পারে, হয়েছিল তার চেয়েও বেশি খারাপ। প্রথম এবং দ্বিতীয় ওভারে কোনও রান হয়নি। দুই ওভারেই একটি করে উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ওভারে নুয়ান থুশারা ফিরিয়ে দেন তানজ়িদ হাসানকে। পরের ওভারে দুষ্মন্ত চামিরা ফেরান আর এক ওপেনার পারভেজ় হোসেন ইমনকে।
নজিরও গড়লেন শ্রীলঙ্কার দুই বোলার। থুশারা এবং চামিরাই প্রথম বোলার, যাঁরা একই ম্যাচে একটি ওভারে মেডেন দিয়েছেন, আবার উইকেটও নিয়েছেন। দুই বোলার একই ম্যাচে এই কাজ করেছেন, এই নজির এশিয়া কাপের ইতিহাসে আর নেই। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হওয়া এশিয়া কাপে প্রথম বার মেডেন ওভারে উইকেট নেওয়ার নজির গড়েছিলেন পাকিস্তানের মহম্মদ আমির। এর পর ভারতের ভুবনেশ্বর কুমার, পাকিস্তানের শাহনওয়াজ় দাহানি এবং হংকংয়ের আতিক ইকবাল এই নজির গড়েন।
পঞ্চম ওভারে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওয়ানিন্দু হাসরঙ্গ ফেরান তৌহিদ হৃদয়কে। এর পর মেহেদি হাসানও (৯) ফেরেন। এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কামিল মিশারার থ্রো। ডিপ স্কোয়্যার লেগের থেকে সরাসরি থ্রোয়ে তিনি রান আউট করে দেন হৃদয়কে। জাকেরের সঙ্গে কিছুটা লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক লিটন দাস। তিনিও ২৮ রানে ফিরে যান।
জাকের এবং শামিম বুঝে গিয়েছিলেন, দলের পতন বাঁচাতে তাঁদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তাই রান রেটের খেয়াল না রেখে ক্রিজ় কামড়ে লড়াই করেন তাঁরা। ভাগ্যও সহায়তা করেছে। দশম ওভারে হাসরঙ্গের বলে জাকেরের অফস্টাম্প ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। আলো জ্বলে উঠলেও বেল পড়েনি। ফলে আউট দেননি আম্পায়ারও। শ্রীলঙ্কার স্পিনারদের দাপটে বাংলাদেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। তবে উইকেট হারায়নি। জাকের ৩৪ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। শামিম ৩৪ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন।
১৩৯ রান যে শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়, তা আগেই বোঝা গিয়েছিল। তবে দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার কুশল মেন্ডিসকে (৩) ফিরিয়ে লড়াই করার বার্তা দিয়েছিলেন মুস্তাফিজ়ুর রহমান। সেই লড়াই ফিকে হয়ে যায় নিসঙ্ক এবং মিশারার ব্যাটিংয়ে। দু’জনেই আগাগোড়া বাংলাদেশের বোলারদের উপরে দাপট দেখিয়েছেন।
শেষের দিকে সহজ ম্যাচ নিজেরাই কঠিন করে ফেলে শ্রীলঙ্কা। অর্ধশতরান করেই নিসঙ্ক আউট হন। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পর পর ফিরে যান কুশল পেরেরা (৯) এবং দাসুন শনাকা (১)। তবে আসালঙ্কাকে (অপরাজিত ১০) নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে জিতিয়ে দেন মিশারা (অপরাজিত ৪৬)।