কলকাতা হাইকোর্টের সামনে সাংবাদিক রোজিনা রহমানের ওপর হামলা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন উদ্বেগ

এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় বঙ্গ টিভি (Bongo TV)-র সাংবাদিক রোজিনা রহমান-এর উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। অভিযোগ, হামলাকারীরা তৃণমূল (Trinamool)-এর ঘনিষ্ঠ, এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন কালো কোট পরিহিত ছিলেন, যা ইঙ্গিত করে যে তারা আইনজীবী হতে পারেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ঘটনাটি ঘটে যখন রোজিনা রহমানের ফটোগ্রাফার কলকাতা হাইকোর্টের কাছে সাংবাদিকদের উপস্থিত এলাকায় ছবি তুলছিলেন। সেই সময় কিছু লোক তাকে ঘিরে ধরে, ভিডিও রেকর্ডিংয়ের অভিযোগ তোলে এবং তার অস্বীকার সত্ত্বেও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

যখন রোজিনা রহমান ঘটনাস্থলে হস্তক্ষেপ করেন, তখন তাকেও আক্রমণ করা হয় বলে অভিযোগ। হামলাকারীরা রোজিনা ও তার ফটোগ্রাফারকে মারধর করে এবং তাদের ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন যে এই হামলা একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন, এই হামলার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্প্রতি দেওয়া এক ভাষণ ও কুনাল ঘোষের নেতৃত্বে হাইকোর্টে একটি সমাবেশের যোগসূত্র থাকতে পারে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, সরকার-বিরোধী ডিজিটাল সাংবাদিকদের উপর আক্রমণের মাত্রা বাড়ছে। স্বাধীন ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমগুলি সরকারের বর্ণিত প্রচার-নেতৃত্বাধীন কাহিনির বিরোধিতা করছে, যার ফলে তারা শাসক দলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে।

এই ঘটনার আরেকটি বিতর্কিত দিক হল প্রধানধারার সংবাদমাধ্যমের নীরবতা। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে কিছু প্রবীণ সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু তারা হস্তক্ষেপ করেননি বা পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে সরব হননি।

সমালোচকরা বলছেন, ডিজিটাল সাংবাদিকরা অতীতে যখন মূলধারার সাংবাদিকদের উপর সরকারী চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, অথচ এখন মূলধারার সংবাদমাধ্যম তাদের নীরব থাকার মাধ্যমে আত্মরক্ষা করছে। অনেকে মনে করছেন, সরকার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে প্রভাবিত করছে, আর কিছু সাংবাদিক প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন।

হামলার পর রোজিনা রহমান কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এবং CCTV ফুটেজ পর্যালোচনা করার অনুরোধ জানান। পুলিশ তাকে অভিযোগের স্ট্যাম্পযুক্ত রিসিপ্ট কপি দিলেও, তদন্ত সুষ্ঠুভাবে হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে।

একাধিক সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন যে থানাসহ বেশ কিছু পুলিশ স্টেশন নবান্নের (Nabanna) নির্দেশে চলে, ফলে এই ঘটনার তদন্তে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা রয়েছে।

এই হামলার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সাংবাদিকরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং রোজিনা রহমানের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ওয়াকিবহাল মহল পুলিশের ভূমিকা নজরে রাখতে সচেতন করেছেন এবং রোজিনাকে কলকাতা পুলিশের কমিশনার ও কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দিয়েছেন।

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষের মানুষজন দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এই ঘটনা শুধু রোজিনা রহমানের উপর হামলা নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় পরীক্ষা। যদি পুলিশ ও প্রশাসন দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এটি আরও সাংবাদিক নিপীড়নের পথ প্রশস্ত করতে পারে, যা গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুতর সংকেত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.