দীঘার জগন্নাথধাম প্রকল্প জাহান্নাম হচ্ছে নাতো ?

১৯৫৯ সালে মরুতীর্থ হিংলাজ সিনেমার শুটিং যেখানে হয়েছিল সেখানেই এখন জগন্নাথধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে, দীঘাতে। দর্শকদের মরুভূমির চিত্র তুলে ধরতেই পরিচালক তখন এই স্থানটি নির্বাচন করেছিলেন । কিছুদিন পূর্বে ওখানে গিয়ে যে বালির পাহাড় দেখেছি তাতে অনুমান করতে পারছি যে ৬৩ বছর আগে ওখানকার অবস্থা কি ছিল। পশ্চিম ভারতের মরুভূমীতে সবুজায়ন করা হয়েছে বা হচ্ছে, আর আমরা দীঘার বালিয়াড়িকে কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত করছি । একদিকে বৃষ্টির জল মাটির নিচে পৌঁছাচ্ছে না, অন্যদিকে নির্বিচারে জল আমরা তুলছি । জলের অভাবে দীঘা একদিন না – ফতেপুরসিক্রী হয়ে পড়ে । সেটাই ভাবনা ।
“ঝাউবনে ছায়ায় ছায়ায় চলনা দীঘার সৈকত ছেড়ে “- পিন্টু ভট্টাচার্যের সেই গানটা মনে আছে ? উন্নয়নের “ঢেউ সাগরে ” – ঝাউবন আজ প্রায় উধাও। উপগ্রহ চিত্র থেকে দেখা গেল যে ঝাউবনের ভূগোলটা এখন ইতিহাস। গত ২০২১ এর ইয়াসের সময় উন্নয়ন ও সৌন্দর্যায়নের নির্মাণগুলো যেভাবে জলে ডুবেছিল – তাতে কিন্তু সত্যিই একটা অশনি সংকেত দিয়েছে । সমুদ্রের এত কাছে গিয়ে বিপদ ডাকার কি যে দরকার তা বুঝিনা ।
দীঘার জঞ্জালের পাহাড় কেউ কি কখনো দেখেছে ? তাও আবার বনাঞ্চলের মধ্যেই তা করা হয়েছে । এটা যে কতবড় অপরাধ তা বলে বোঝাতে পারবো না। দীঘার ধাপাটা বনের মধ্যেই, একেবারে “ঢেউ সাগরের ” পাশেই। প্রায় ২৫০০০ স্থায়ী বসবাসকারী, ৫০০০ এর কাছাকাছি হোটেল,রিসোর্ট, গেস্ট হাউস, হোমস্টে তে মোট গড়ে পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ ভ্রমণকারী নাকি এখানে প্রত্যহ আসেন। তাদের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন পরিকাঠামোই নেই । হচ্ছেটা কি ? দীঘা কেন এখনো পঞ্চায়েতের আঁচলে শুয়ে আছে জানিনা। যে স্থানের জন্য উন্নয়ন সংস্থা (Development Board) তৈরি হয়েছে – তার কোনো পুরসভা নেই । তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও এখনো ঠিকঠাক নয় । সমুদ্রটাকে এত নোংরা করার যে কি দরকার তা বুঝিনা।


ওখানে এখন সাজ,সাজ রব । সত্যিই দীঘাকে সুন্দর করে গড়ে তোলা হচ্ছে । কিন্তু সৌন্দর্যায়ন যে ধংসায়ণ নয় তা আমরা কবে বুঝবো ? বুঝতে বুঝতে সব না শেষ হয়ে যায় । জানিনা বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা কবে হবে বা আদৌ হবে কিনা । প্লাস্টিকের পাহাড় যে কিভাবে অতিক্রম করা যাবে তা জানিনা। গাড়ির ধোঁয়া ও শব্দদানবের দাপটে জনজীবন ওখানে বিপর্যস্ত।
আমার সাম্প্রতিক দীঘা যাত্রা যে , এতটা দাগা দেবে তা ভাবতেই পারিনি । যেভাবে আজকাল মানুষ সমুদ্রমুখী হচ্ছে তাতে মনে হয় – ” পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে “। সমুদ্রের ঢেউ দেখতে ভাল, এর গর্জনে একটা ছন্দও আছে তা ঠিক কিন্তু তাই বলে আমরা যদি স্থায়ীভাবে জলদেবতাকে আলিঙ্গন করতে চাই – তাহলে সত্যিই বিপদ। কেন্দ্র ও রাজ্য দুতরফকেই ব্যাপারটা অনুধাবন করতে হবে ।
উপায় না পেয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে তাই পৌঁছে গিয়েছি গতকাল । আদালত চিন্তিত হয়ে এই মামলাটি গ্রহণ করে নির্দেশ প্রদান করেছে । তবে একটা জিনিস শিখলাম, এতদিনেও আমি সাবালক হতে পারিনি । বিচারপতিরা দেখালেন যে আমি কয়েকটা জিনিস – মিস্ করে গিয়েছি। পরিবেশ আদালতের কাছে আমার কৃতজ্ঞ। Development does not mean destruction – এটা আশাকরছি আদালত দেখবেন ।

                                        সুভাষ দত্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.