পুণ্যসলিলা সরযুতটে ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের জন্মভূমি মােক্ষদায়িনী অযােধ্যায় ভব্য রামমন্দির পুনর্নির্মাণের কাজ ৫ আগস্ট ২০২০ ভূমিপূজন ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুভারম্ভ হবে। এই মহানলগ্নে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদী, পূজ্যসন্ত, বিদ্বজ্জন, শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন। রামজন্মভূমি মন্দিরের শিলান্যাস স্বাধীন ভারতে সবচেয়ে মহান অনুষ্ঠান বলে পরিগণিত হবে। শ্রীরামমন্দির সামাজিক সমরসতা, রাষ্ট্রীয় একাত্মতা এবং হিন্দুত্বের ভাব জাগরণের দেদীপ্যমান প্রতীক। শত শত বছরের তপস্যা, রামভক্তদের বলিদান, আপামর দেশবাসী ও বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হওয়ার এই পবিত্র মুহূর্ত আমরা এক বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে উদযাপন করতে চলেছি।
ভারতীয় ইতিহাস, পরম্পরা, সংস্কৃতি অযােধ্যার সঙ্গে যুক্ত। শ্রীরাম আর অযােধ্যার কোনাে পার্থক্য নেই। ভারতের আধ্যাত্মিক জগও অযােধ্যার ইতিহাস এবং ভারতীয় সাংস্কৃতিক ভাবধারার অভিব্যক্তিতে ভরপুর। ভগবান শ্রীরামচন্দ্র ভারতের রাষ্ট্রীয় একাত্মতার প্রতীক। ভারতের উত্থান-পতনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সেইজন্য বিদেশি আক্রমণকারী ও ভারতবিরােধী চক্রের বিরােধিতার কেন্দ্রবিন্দুতে সব সময় উঠে এসেছে অযােধ্যা ও শ্রীরামচন্দ্রের নাম। তাই বিদেশি আক্রমণকারীরা প্রায় ৫০০ বছর ধরে অযােধ্যা ও ভারতের শ্রদ্ধাকেন্দ্রের উপর বারে বারে আক্রম করেছে। সতত সংঘর্ষ হয়েছে। স্বাধীনােত্তর ভারতে শ্রীরামজন্মভূমি ফিরে পেতে প্রায় ৭০ বছর আইনি লড়াই চলেছে। গত ৯ নভেম্বর ২০১৯ সুপ্রিমকোর্ট রামমন্দির পুনর্নির্মাণের পক্ষে রায় দেয়। রামলালা বিরাজমান যেখানে সেখানেই মন্দির নির্মাণের কাজ আরম্ভ হবে।।
ভারত তথা বিদেশের রামভক্তরা দূরদর্শনের পর্দায় শিলন্যাস অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন। ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আগ্রহ করা হয়েছে ৫ আগস্ট বেলা ১১-৩০ মিনিট থেকে ১২-৩০ মিনিট পর্যন্ত নিজ নিজ আরাধ্য দেবতার মূর্তির সামনে ভজন, কীর্তন, পূজা অনুষ্ঠান করুন। পরে পুস্পাঞ্জলি ও নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে রামমন্দির নির্মাণের জন্য ধন সমর্পণ করার সংকল্প নিন। করােনা আবহের বর্তমান পরিস্থিতিতে সমস্ত নিয়ম মেনে অনুষ্ঠান করতে হবে। সন্ধ্যায় মঠ, মন্দির, গ্রাম মহল্লায় নিজ নিজ বাড়িতে পরম্পরা অনুসারে সাজসজ্জা ও প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে দীপােৎসব পালন করুন। শিলান্যাসের জন্য সারাদেশ থেকে পবিত্র নদীর জল এবং তীর্থক্ষেত্রের মাটি একত্রিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, কোচবিহারের মদনমােহন বাড়ি, জল্পেশ মন্দিরের মাটি এবং গঙ্গাসাগর, ত্রিবেণী, তিস্তা, তাের্সা ও বীরভূমের জয়দেবের মাটি ও অজয়নদের জল অযােধ্যায় পাঠানাে হয়েছে। সবার পরশে পবিত্র তীর্থ নীরে, পুণ্যভূমি ভারতের মাটি একত্রিত করে ভারতের স্বাভিমানের প্রতীক হিসেবে রামমন্দিরের পবিত্র শিলান্যাস অনুষ্ঠানের শুভ মুহূর্তের সাক্ষী আমরা। সকলেই থাকব।।
শ্রীরামমন্দির নির্মাণ এক সংঘর্ষময় ইতিহাস। সে সম্পর্কে আমরা কম-বেশি সকলে অবগত আছি। সংঘর্ষের এই দীর্ঘ লড়াইয়ে হিন্দু সমাজ কখনােই পরাজিত হয়নি। সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকেনি। স্বাধীন ভারতে রামজন্মভূমি মন্দির নির্মাণের জন্য বিভিন্ন সময় নানা ধরনের জনজাগরণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। রামলালার তালা খােলা, রামশিলা পূজন, রামপাদুকা যাত্রা, রামজানকী রথযাত্রা, করসেবা, শ্রীরামজপযজ্ঞ অনুষ্ঠান এবং এলাহাবাদ হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় অযােধ্যা বিতর্কের সমাপ্তি হয়। সমস্ত মত, পন্থ, সম্প্রদায়, সাধুসন্তদের ইচ্ছানুসারে এবং সর্বোচ্চ। আদালতের নির্দেশে ৫ আগস্ট ২০২০ ভারতীয়ত্বের পুনঃপ্রতিষ্ঠার শুভসূচনা হতে। চলেছে পবিত্র অযােধ্যাধামে। করােনা। মহামারীর আতঙ্কের মধ্যেও এই অনুষ্ঠান সমাজকে অনুপ্রেরণা দেবে।
শ্রীরাম কেবল ভারতের নয়, সমগ্র বিশ্বের মহাপুরুষ। তার সময়কালে সমাজে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান ছিল না— ছিল কেবল মানবতা। মানবতার কল্যাণেই তিনি ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আজ আমরা জাতি, সম্প্রদায়ে বিভক্ত, পূজাপদ্ধতি, আচার আচরণে ভিন্নতা থাকলেও কিন্তু আমরা সকলে একই সনাতন সংস্কৃতির ধারক বাহক। সকলেই ভারতমাতার সন্তান। এই মনােভূমিকা নিয়েই রামমন্দিরের পুনর্নির্মাণ— যা স্বাধীন ভারতে সবচেয়ে মহত্ত্বপূর্ণ কাজ।
ডাঃ শচীন্দ্রনাথ সিংহ
(লেখক বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যকর্তা)