চীনকে ভাতে মারতে হবে

‘Exit The Dragonforcsmall car start পণ্যের বয়কটের ডাক দিয়েছে আমূল গার্ল, টুইটারের কড়াকড়ি সত্ত্বেও চিনি কম করো’ শিরোনামে। এর আগেও আমূল পাক-ভারত উত্তেজনায় ‘pack up and leave! শিরোনামে টুইটারে আমূল গার্ল সরব হয়েছিল। পাকিস্তানের গোলার চাইতেও ভয়ংকর লাল চীন, তাদেরই পরোক্ষ মদতে পাকিস্তান নেপাল সীমান্ত এলাকায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। চীনকে চাপে রাখতেই প্রতিবেশী সার্কভুক্ত দেশগুলোকে অতিরিক্ত আর্থিক সাহায্য করে আসছিল ভারত। সম্প্রতি ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে থ্রি ইডিয়ট খ্যাত শিক্ষা সংস্কারক সোনম ওয়াংচুক এক ভিডিয়ো বার্তায় চীনের বুলেটের পরিবর্তে নাগরিকদের ওয়ালেটে জবাব দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর আত্মনির্ভর ভারতের সূত্র ধরে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কার্যসূচিকে ভর করে চীনা দ্রব্য বর্জনে। স্বদেশি জিনিসপত্র ব্যবহারে শামিল হতে বলেছেন। চীনা সরকারের মুখপত্র ‘দ্য গ্লোবাল টাইমস’ তাদের এক সম্পাদকীয়তে প্রকাশ করে, ‘চীনা পণ্যে ভারতবাসীর অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে, তাই প্রতিবারের মতো চীনা পণ্য বর্জনের আহ্বান নিছক এক লোক দেখানো ও অরণ্যে রোদন। বেশিরভাগ ভারতীয় গরিব ও নিম্নবিত্ত। সেই অনুযায়ী চীন অতি সূক্ষ্ম চিন্তাধারায় দাম ও চাহিদার জটিল শর্ত সহজেই পূরণ করে নেয়। তাই অন্য বহুজাতিক কোম্পানি ও ভারতীয় কোম্পানির তৈরি পণ্য গুণমানে ভালো হলেও অতিরিক্ত দামের সুবাদে সেই গ্রহণযোগ্যতা এখন পর্যন্ত আদায় করতে পারেনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাস ট্যাগ‘বয়কট চায়না’র যথেষ্ট জনপ্রিয়তা মিললেও চীনারা সেটাকে কেবল তাদের প্রতি অপমান, প্রতিশোধ মেটানো এবং দেশপ্রেমের হাওয়া তোলার এক কৃত্রিম মাধ্যম মনে করছে। মেড ইন ইন্ডিয়া বা মেক ইন ইন্ডিয়াতে ভারত যথেষ্ট এগিয়ে থাকলেও সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীল হতে নিঃসন্দেহে কিছুটা সময় তো লাগবেই। কারণ চীনা পণ্যের অনেক বিকল্প ভারত এখনো খুঁজে পায়নি, আর যেগুলো কিছুটা হলেও উৎপাদিত হচ্ছে তা চীনা পণ্যের সঙ্গে মোকাবিলায় পেরে উঠতে পারছে না। ইলেকট্রনিক জিনিস যেমন স্মার্টফোন, ক্যামেরা, ল্যাপটপ প্রভৃতি ভারতে উৎপাদিত হলেও ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের জন্য চীনের উপরই ভরসা করতে হচ্ছে। তাছাড়া অজস্র খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, খনি শিল্পে ব্যবহার্য ভারী যন্ত্রাংশ, ছাতা, কলম, চশমা, ঘড়ি, ফেন্সি সামগ্রী, গাড়ি, খেলনা, মেশিন তৈরির অজস্র হার্ডওয়ার চীন থেকেই আমদানি করা হচ্ছে। সফটওয়ারের জগতেও চীনা অ্যাপ টিকটক, ইউসি ব্রাউজার ভারতে রমরমা। তবে চীনা পণ্য বয়কটের ডাকে ‘রিমোভ চায়না’অ্যাপের মাধ্যমে চাইনিজ অনেক অ্যাপ বর্তমানে মোবাইল থেকে বাদ পড়েছে। চীনা সফটওয়ার ভারতীয়রা সহজে পরিত্যাগ করলেও তাদের হার্ডওয়ার পণ্য ত্যাগ করা এতো সহজতর নয়। চীনা দ্রব্য বর্জনে বৃহত্তর ভারতীয়দের প্রথমে স্বদেশি পণ্য ব্যবহারে প্রাথমিকতা এবং সরকারের উপভোক্তাদের প্রতি লক্ষ্য রেখে দেশীয় পণ্যের কাঁচামালের জোগান, তার চাহিদা, দামে তীক্ষ্ণ নজর খুবই দরকার।

প্রতিদিনের বিভিন্ন মিডিয়া হাউসের ভারত-চীন উত্তেজনার সংবাদে মানুষ হতভম্ব। অনেক মিডিয়া দাবি করছে দুই দেশের সীমান্তে সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম ক্রমশ আরও সুসজ্জিত হচ্ছে। কেউ বলছে চীন ভারতের কয়েক কিলোমিটার ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে। কোনো মিডিয়া বলছে উচ্চ স্তরের সেনা বৈঠকে সব ঠিক হয়ে আসছে। ইত্যাদি। জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের দুষ্ট প্রতিবেশী পাকিস্তানের দৃশ্য অদৃশ্য জঙ্গি কার্যকলাপ, সীমান্তে উত্তেজনা প্রভৃতি ভারত বিরোধী গতিবিধিতে চীন উস্কানি দিয়ে আসছিল। সম্প্রতি নেপাল চীনের পরোক্ষ মদতে পাকিস্তানি কায়দায় লিম্পিয়াধুরা, লিপুলেখ গিরিপথ ও কালাপানি অঞ্চলের ভারত-ভূখণ্ডের ৪০০ বর্গকিলোমিটার দাবি করে তাদের সংসদে এক বিতর্ক নকশা অনুমোদন করেছে। এমতাবস্থায় প্রতিবেশী চীন ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির সময় থেকেই জাতীয় সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে হুমকি স্বরূপ। তাই তাদের অর্থনীতিতে লাগাম না টানতে পারলে বা ভারতের অর্থনীতি চীনের পর্যায়ে পৌঁছাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে বিভিন্ন পর্যায়ে আমাদের সেই মাশুল দিতেই হবে। চীন বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হলেও মাত্র কয়েক দশক আগে তারা ভারত থেকে পিছিয়ে ছিল। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত প্রতি ব্যক্তির আয় ১৫৫ মার্কিন ডলারের। বিপরীতে ভারতের ২১০ মার্কিন ডলার ছিল। বিশ্ব ব্যাঙ্কের এক রিপোর্ট অনুযায়ী মাত্র ৪ দশক আগে পর্যন্ত চীন ভারত থেকে প্রায় ২৬ শতাংশের বেশি গরিব ছিল। কিন্তু ১৯৭৮ সালের পর চীনের নীতি নির্ধারণের আমূল সংশোধনে তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ-সহ ভারত থেকে প্রায় ৫ গুণ ধনী দেশে পরিণত হতে পেরেছে। চীনের উল্লেখযোগ্য বৈপ্লবিক পরিবর্তনগুলি ছিল ভূমি সংস্কার, শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক বিস্তার এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ঈর্ষণীয় সাফল্য। এসব ক্ষেত্রে ভারত কিছুটা প্রভাব বিস্তার করলেও স্বাধীনতার পর থেকেই প্রায় প্রত্যেক সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার ঘেরাটোপে পুরোপুরি সেটা ব্যর্থ হয়েছে।

চীনের অর্থনৈতিক সংশোধনী ১৯৭৮ সালে শুরু হলেও ১৯৯১ সাল পর্যন্ত চীনের। প্রতি ব্যক্তি আয় ৩৩১ ডলারের বিপরীতে ভারতের ৩০৯ ডলার ছিল। কিন্তু ২০১৫ সাল আসতে আসতে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার দৌড়ে ভারত পুরোপুরি ছিটকে যায় অর্থাৎ ২৫ বছরের ব্যবধানে চীনের প্রতি ব্যক্তি আয় ৭৯২৫ ডলারের তুলনায় ভারত মাত্র ১৫৮২ ডলারের পৌঁছতে পারে যা চীনের থেকে প্রায় ২৪ গুণ কম। ১৯৭৮ সালের আগে চীনের অর্থনৈতিক কাঠামো এতোই দুর্বল ছিল যে দেশের ৯০ শতাংশ লোক খুব গরিব ছিল। শহরাঞ্চলে মাত্র ২০ শতাংশ মানুষের বসবাস ছিল কিন্তু ২০১৭ সালের পরিসংখ্যানে চীনের অর্থনৈতিক শেয়ার বিশ্ব অর্থনীতির বাজারে ১.৮ শতাংশ থেকে ১৮.২ শতাংশের দখল নেয়। আজ চীনের পরিচিতি পৃথিবীর সর্বোচ্চ শক্তিশালী বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডারের দেশের জিডিপিতে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে, বিদেশি নিবেশকদের তৃতীয় আকর্ষিত বাণিজ্যিক কেন্দ্র চীন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত চীনে বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসারে আগের তুলনায় ১৭,৫০০ গুণ বৃদ্ধি পায়। চীনের পণ্য সহজলভ্য হওয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে চীনের শ্রমিক ভারতের তুলনায় প্রায় ১.৬ গুণ বেশি উৎপাদন করার ক্ষমতা রাখে। ফলস্বরূপ তাদের উৎপাদনশীলতাও ভারতের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি। বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় আন্তর্জাতিক বাজারে চীন-আমেরিকা সর্বদাই অহি-নকুল সম্পর্ক। আমেরিকা ইতিমধ্যে চীন থেকে তাদের ২০০টিও বেশি কোম্পানি গুটিয়ে ভারতে স্থাপনের চিন্তায় রয়েছে, সেই সঙ্গে আমেরিকায় চীনের কোম্পানিগুলো থেকে সর্বমোট আনুমানিক ৩০ হাজার কোটি ডলার অতিরিক্ত শুল্ক আদায়ের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। পরিণামের চিন্তা না করে চীনও আমেরিকান কোম্পানিগুলোর উপরে ৫ থেকে ২৫ শতাংশ কর বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সম্প্রতি আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র এক উদ্ধৃতিতে বলেছেন, ভারত এখন এক উদীয়মান শক্তি এবং ভারতে বিনিয়োগ চীনের থেকে বেশি সুরক্ষিত ও বিশ্বাসযোগ্য।তাই চীনে স্থাপিত সমস্ত শিল্প, কারখানা ভারতে স্থানান্তরের একান্ত ইচ্ছা। প্রকাশ করেছে তারা। ভারত কৌশলে আত্মনির্ভরশীলতার ডাকে স্বদেশি পণ্য ব্যবহারে চীনকে বয়কট করতে এবং সুসম্পর্কের আগাম বার্তায় আমেরিকার বাজারে ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলির জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। উল্লেখ্য যে, এই মুহূর্তে ভারত ৩০০টির বেশি মোবাহল ফোন উৎপাদনকারী ইউনিট স্থাপন করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি আমেরিকা জি সেভেন সদস্যভুক্ত দেশে ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করতে চেষ্টা করছে এবং ভারত-সহ ৮টি দেশকে এক জোট করে করোনা সংক্রান্ত মামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চীনকে ঘিরতে ইন্টার পার্লামেন্টারি অ্যালায়েন্স অন চায়না (আইপিএসি) গঠন করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চীন ও পাকিস্তানকে মোকাবিলা করতে আমেরিকা অবশ্যই ভারতের সুপার বিকল্প। কিন্তু ভারত – আমেরিকার বন্ধুত্বকে চীন মোটেই ভালো চোখে দেখছে না। চীনা সরকারের মুখপত্র ‘গ্লোবাল টাইমস’ভারতকে আমেরিকা থেকে দূরে থাকার সতর্কবার্তা দিয়েছে। অন্যথায় সীমান্ত, অর্থনৈতিক বাজার, আন্তরাষ্ট্রীয় সুরক্ষা, সার্বভৌমত্বে ভারতকে চরম দুর্ভোগ পোহানোর হুমকি দিয়ে রেখেছে।

চীন নিজেদের দেশে উইঘুর মুসলমান, কাজখদের প্রতি চরম বর্বর হলেও পাকিস্তানের জৈশ-ই-মহম্মদের মাসুদ আজাহারদের প্রতি অত্যন্ত নরম মনোভাব পোষণ করে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্থায়ী পরিষদের সবকটি দল মাসুদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও চীন বার বার ভেটো প্রয়োগ করে পাক জঙ্গিটিকে বাঁচিয়ে দেয়।

চীনের সামরিক, অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি সর্বোপরি ভারতের জন্য অশনি সংকেত। অথচ আমরাই চাহিদা, বিলাসিতায়। পরোক্ষভাবে প্রতিদিন চীনের বাজার চাঙ্গা রাখছি। ইন্দো-চীনের বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারের অর্থাৎ ৬ লক্ষ কোটি টাকার, যার মধ্যে ভারত প্রায় ৫ লক্ষ কোটির পণ্য আমদানির বিপরীতে মাত্র ১ লক্ষ কোটির পণ্য চীনে রপ্তানি করতে পারে। এই জানুয়ারি মাসে চীন ৪১,৫৯৬ কোটি মূল্যের পণ্য ভারতে রপ্তানি করেছে এবং ভারত মাত্র ১০,৪০০ কোটির। করোনা মহামারীতেও ফেব্রুয়ারি মাসে চীন ৭৯৯৯ কোটি মূল্যের পণ্য আমদানির বিপরীতে বিশাল ৩১,৭৬৪ কোটির রপ্তানি বাণিজ্য ভারতের সঙ্গে করতে সক্ষম হয়। চীনের উন্মুক্ত বাজার ভারত। চীন প্রতি বছর প্রায় ২.২৫ লক্ষ কোটির ইলেকট্রনিক জিনিস, ১০,০০০ কোটি মূল্যের চাইনিজ পুতুল, ১২০০০ কোটি মূল্যের সূতির কাপড়, ১৫০০০ কোটি মূল্যের ফেন্সি আসবাবপত্র প্রভৃতি পণ্য ভারতে রপ্তানি করে। তাই চীনের বাজার কেবল টিকটক, দীপাবলির চাইনিজ পণ্যে সীমাবদ্ধ নয় যে এগুলো বর্জন করলেই তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো ভারতে বিপর্যস্ত হয়ে যাবে। ২০১৭ সালেও এর কম ডোকলাম সীমান্তে ভারত-চীনের শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনায় ভারতের কূটনৈতিক জয় হয়েছিল। প্রতিবেশী দেশগুলোকে আশ্বস্ত রাখতে অবশ্যই ভারতকে লাল চোখের মোকাবিলা সাহসিকতার সঙ্গে করতে হবে। চীনা পণ্য বর্জনের প্রতিজ্ঞা করেত হবে সমস্ত ভারতীয়কে। মরসুমি আন্দোলনের মতো হুজুগ নয়, কঠোর ভাবে বর্জন করতে হবে। চীনা পণ্য। এবারও সেলিব্রেটি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ জনগণ চীনা পণ্য বর্জনের খোলা চিঠি লিখছেন। উল্লেখ্য, সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তির (WTO) বাধ্যবাধকতায় সরাসরি বিদেশি পণ্য বর্জনের কথা বলতে পারে না। এ কাজটি পুরো সমাজকেই করতে হবে। এবং তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রতিজ্ঞায় আবদ্ধ হতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভারতই। চীনের বড়ো বাজার। চীনা দ্রব্য বর্জন করেই তাকে ভাতে মারতে হবে। আর ভাতে মারলেই তার চোখ রাঙানি বন্ধ হবে।

রঞ্জন কুমার দে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.