আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেবির কাছে চিঠি পাঠানোর জন্যই কি মহুয়ার উপর অসন্তুষ্ট মমতা?

নদিয়া জেলার প্রশাসনিক বৈঠক চলছিল। আর তার মধ্যেই হঠাৎ মেজাজ হারিয়ে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে হাজির সবার সামনেই একেবারে ধমক দিয়ে দিলেন দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে। বলেছিলেন, মহুয়া এখানে আমি একটা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, কে কার পক্ষে বিপক্ষে দেখার আমার দরকার নেই…” কিন্তু দলের সাংসদকে কেন এমন ধমক দিলেন মমতা, তাও আবার একেবারে ভরা বৈঠকের মাঝে!

প্রাথমিকভাবে অনেকেই মনে করছিলেন, প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে কোনও জটিলতা রয়েছে দলের অন্দরে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যতেও সে কথা স্পষ্ট। কিন্তু সেই নিয়ে কোনও বার্তা দেওয়ার থাকলে বা কোনওভাবে সতর্ক করার হলে, তা তো আলাদা ভাবেও করতে পারতেন দলনেত্রী। তাহলে কি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, যাতে মমতা ভীষণভাবে বিরক্ত? এমন একটি তত্ত্বও উঠে আসতে শুরু করেছে বঙ্গ রাজনীতির অন্দর মহলে।

উল্লেখ্য, অতীতে মহুয়া মৈত্রকে একাধিকবার শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছিল। এদিকে আবার সম্প্রতি নবান্নে এসেছিলেন গৌতম আদানি। মমতার সঙ্গে দেখা করেন। বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় তাঁদের মধ্য়ে। দিনটা ছিল ২ ডিসেম্বর। মোদী ঘনিষ্ঠ আদানির সঙ্গে মমতার এই সাক্ষাৎ ঘিরে শুরু হয়েছে বিভিন্ন জল্পনা। সেই সঙ্গে রাজ্যে আদানি গোষ্ঠীর বিনিয়োগের বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলেন আদানিদের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও বাণিজ্য সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন তিনি।

২ ডিসেম্বর মমতা-আদানি সাক্ষাৎ পর্বের এক সপ্তাহ পরেই ৮ ডিসেম্বর টুইটে বোমা ফাটান মহুয়া। বেআইনি মালিকানাকে বৈধ করতে চাইছে বলে অভিযোগ করে সেবিকে চিঠি লিখেছিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ৷ সেবিকে পাঠানো ওই চিঠির প্রথম পাতা টুইটারেও তুলে ধরেছিলেন মহুয়া ৷ সঙ্গে টুইটারে লিখেছিলেন, “আদানি পাওয়ারের ডি-লিস্টিংয়ে অনিয়মের কথা তুলে ধরে সেবি চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো আমার চিঠি ৷”

আর ঠিক তার পরের দিনই ৯ ডিসেম্বর নদিয়ার প্রশাসনিক বৈঠক চলাকালীনই মহুয়া মৈত্রকে কড়া ধমক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকেই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেবির কাছে চিঠি পাঠানো এবং সেই কথা টুইটারে তুলে ধরা… এইসবের জন্যই মহুয়ার উপর অসন্তুষ্ট মমতা?

সেবিকে পাঠানো সেই চিঠিতে মহুয়া মৈত্র দুটি প্রশ্ন তুলে ধরেছেন ৷ সাংসদের বক্তব্য, আদানি পাওয়ার লিমিটেডের চারটি বেআইনি মালিকানাধীন সম্পত্তিকে বৈধ করার চেষ্টা চলছে। এই নিয়ে আদানিরা গোপনে আর্থিক লেনদেনও করেছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি ৷ এর পাশাপাশি এপিএল-এর ডি-লিস্টিং করে সংখ্যালঘু শেয়ার হোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলেও তাঁর অভিযোগ।

একে তো মোদী ঘনিষ্ঠ আদানির সঙ্গে নবান্নে মমতার সাক্ষাৎ নিয়ে যথেষ্ট জল ঘোলা হচ্ছে। অনেক সময়েই বিভিন্ন ধরনের টিপ্পনি শুনতে হচ্ছে, যা রাজ্যের শাসক দলের জন্য মোটেই সন্তোষজনক নয়। আর এর মধ্যে মহুয়া মৈত্রের এই ধরনের টুইট খুব স্বাভাবিকভাবেই দলের তথা সরকারের অস্বস্তি আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সম্ভবত সেই কারণেই মমতার স্নেহ-বৃত্তের থেকে মহুয়ার ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে থাকতে পারে। ভরা বৈঠকে সবার সামনে এই ধমক কি সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.