রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে কম টাকায় ভালো চিকিৎসা পাওয়ার আশায় ভিড় করেন বহু মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে হাসপাতালগুলির সুবিধা-অসুবিধার খবর রাখেন। তবুও এসএসকেএম, আরজি কর বা মেডিক্যাল কলেজের মতো হাসপাতালগুলিতে গেলেই দেখা যায় মানুষের অসহায়তার ছবি। ক্যান্সার আক্রান্তের মতো রোগীরা বেড না পেয়ে হাসপাতালের বাইরে পড়ে থাকেন। আর মানুষের সেই অসহায়তার সুযোগ নিয়েই রমরমিয়ে চলছে দালাল চক্র। টাকার বিনিময়ে বিকোচ্ছে হাসপাতালের বেড।
সেই অভিযোগ সামনে এনেছেন খোদ আরজি কর হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান। ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ বা ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে রোগীর পরিবারের কাছ থেকে। সম্প্রতি আরজি করে সেই চক্রের তদন্তে তিনজনের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
কী ভাবে সামনে এল সেই দালাল চক্র?
গত বুধবারের ঘটনা। আরজি কর হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সুস্মিতা কুণ্ডুর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলেন, ‘আমি হাসপাতালের স্টাফ, আমার একজন রোগীকে ভর্তি করে দেবেন?’ ড. সুস্মিতা কুণ্ডু রাজি হয়ে যান। এরপর রোগীকে ভর্তি করার প্রক্রিয়া শুরু হলে কোথায় উধাও হয়ে যান ওই ব্যক্তি। ড. কুণ্ডু যখন রোগীর কাছে জানতে চান, ওই ব্য়ক্তিকে চেনেন কি না, রোগী জানান, তিনি চেনেন না। ওই ব্য়ক্তির নাম, ফোন নম্বর, কিছুই নেই রোগীর কাছে। তখন তিনি জানতে চান, ওই ব্য়ক্তি কত টাকা নিয়েছেন। রোগী জানান, ২০০০ টাকা নেওয়া হয়েছে বেডের জন্য।
শুধু তাই নয়, হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সুগত দাশগুপ্ত আর জি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়ে একটি চিঠি চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠি এসেছে TV9 বাংলার হাতে। সেখানে তিনি স্পষ্ট অভিযোগ করেছেন, তাঁর হাসপাতালে বেডও টাকার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতালের নীচুতলার কর্মীরা বেআইনিভাবে এই কাজ করছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। অধ্যক্ষ তাঁর কাছে জানতে চান, কাউকে ধরা সম্ভব হচ্ছে কি না। ড. দাশগুপ্ত জানান, কাউকেই ধরা সম্ভব হয়নি। প্রয়োজনে তাদের ধরতে পুলিশের সাহায্য় নেওয়া হোক, এমন আর্জিও জানিয়েছেন তিনি।
কত টাকায় বিকোচ্ছে বেড?
শুধুমাত্র আর জি কর হাসপাতাল নয়, অন্যান্য সরকারি হাসপাতালেও একই ছবি। জানা যাচ্ছে, আর জি কর হাসপাতালে ২০০০ টাকার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে সাধারণ বেড। আর সিসিইউ-র বেড পেতে দিতে হচ্ছে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এসএসকেএম হাসপাতালের সিসিইউ-র বেড বিকোচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে সিসিইউ-র বেড বিকোচ্ছে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়
কেন টাকা দিয়ে বেড নিচ্ছেন রোগীরা?
বেসরকারি হাসপাতালে যে বেডে চিকিৎসা করাতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়, সরকারি হাসপাতালে সেই বেড বিনামূল্যে পাওয়া যায়। তাই দরিদ্র মানুষ এখানে আসেন চিকিৎসা করাতে। অথচ দেখা যাচ্ছে, বেড পাচ্ছেন তাঁরাই, যাঁরা টাকা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, আর যাঁদের পকেটে থাকছে সুপারিশের চিঠি। বাকি সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। রোগী যাতে প্রাণে বেঁচে যান তার জন্য টাকা দিতে দ্বিধা বোধ করছেন না অনেকে। সুপারিশে চিঠি না থাকলে বেড পাওয়া কঠিন, তাই এই পথেই সুবিধা নিচ্ছেন অনেকে। ভয়ে মুখও খুলছে না রোগীদের পরিবার।
কী ব্যবস্থা?
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে আরজি কর হাসপাতাল। তাতে রয়েছেন সিসিইউ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সুগত দাশগুপ্ত, ডেপুটি সুপার ড. ত্রিদিব মুস্তাফি ও নার্সিং-এর বিভাগীয় প্রধান। রোগী কল্যান সমিতির চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায় জানান, ওই অভিযোগের কথা শুনেছেন তিনি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।