রামের রথ টানল রহিম। তবে রামও সেজেছিলেন রহিমের লোক। রামনবমী উপলক্ষ্যে বিজেপি, আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদ, বজরং দল প্রভাবিত রামনবমী উৎসব সমিতির শোভাযাত্রায় রামপুরহাটে এমনই ছবি ধরা পড়েছে। রামের জন্মদিনে রাম রহিমকে মিলিয়ে দিল বিজেপি প্রভাবিত রামনবমী উৎসব সমিতি। রথের সওয়ারি জানিয়েছেন, আগে পেট। পরে ধর্ম। আর আল্লা – ঈশ্বর তো একজনই। ফলে রামের রথ টানতে বাধা কোথায়।
রবিবার ছিল রামনবমী উৎসব। এই উপলক্ষ্যে তৃণমূল ও হিন্দু সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক মিছিল বের করা হয় রামপুরহাট শহরে। সকালে রামপুরহাট পুরসভার মাঠ থেকে তৃণমূল প্রভাবিত রামনবমী উদযাপন কমিটির শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রার সামনের সারিতে ছিল আদিবাসী নৃত্য। তারপরেই কীর্তনের দল। পিছনের সারিতে হাঁটতে দেখা যায় কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূল নেতাদের। তবে তাদের মুখে একটি বারের জন্যও জয় শ্রীরাম ধ্বনি শোনা যায়নি। আর আদিবাসী নৃত্য এবং কীর্তন দল গুলিকে নিয়ে আসা হয়েছে পারিশ্রমিক দিয়ে। এমনকি জেলা কীর্তন ও শিল্পী সংসদের পক্ষ থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের কীর্তন তৃণমূল প্রভাবিত শোভাযাত্রায় হাঁটানো হয়।
সংগঠনের জেলা সম্পাদক রাজু রায় বলেন, “আমাদের কাছে দলের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল। সেই ডাকে সাড়া দিয়েই আমরা সকলকে সংগঠিত করেছিলাম। আদিবাসী নৃত্য ও কীর্তনের মতো তিনশো দল এদিন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে। ফলে শোভাযাত্রা দেখে মনে হতেই পারে বাদনা পরব কিংবা কীর্তনের ধুলোট চলছে। তবে বেলা ১১ টার পর বিশ্বহিন্দু পরিষদ কিংবা বিজেপি প্রভাবিত রামনবমী উৎসব সমিতির শোভাযাত্রা ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। রামপুরহাট শহর এবং লাগোয়া গ্রামগঞ্জের মানুষ সেই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রায় জয় শ্রীরাম ধ্বনিতে রামপুরহাট শহরকে মুখরিত করে তোলে। অধিকাংশের পরনে ছিল গেরুয়া পাঞ্জাবী, কপালে গেরুয়া তিলক ও ফেটি। তাদের শোভাযাত্রা বিকেল পর্যন্ত রামপুরহাট শহরকে স্তব্ধ করে দেয়। রামনবমীর শোভাযাত্রায় শুধু কীর্তন কিংবা আদিবাসী নৃত্য কেন? প্রশ্নে তৃণমূলের রামপুরহাট শহর কার্যকারী সভাপতি সৌমেন ভকত বলেন, “রামের জন্মদিন। সেখানে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে। কীর্তনের দল আদিবাসী নৃত্য থাকাটা কোন অপরাধ নয়। আমরা শুধুমাত্র তাদের যাওয়া আসার খরচ দিয়েছি মাত্র”। যদিও কীর্তন দলে অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করলে আড়ই হাজার টাকা করে ভাতা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ বললেন, সরকারি কার্ড করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এদিকে এদিন বিজেপি প্রভাবিত রামনবমী উৎসব সমিতিতে রাম সেজেছিলেন তারিবুল ইসলাম ওরফে সাদ্দাম। আর রথ টেনেছেন মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের সেন্টু শেখ। সেন্টু বলেন, “আগে পেট। তারপর ধর্ম। উৎসব সমিতি ভাড়া করেছে তাই এসেছি। আল্লা আর ঈশ্বর একজনই”। সুনীল প্রসাদ বলেন, “আমাদের ধর্ম মানব ধর্ম। তাই তো আমরা সাদ্দামকে রাম সাজিয়েছি। আর রামের রথ টানছেন সেন্টু শেখ। আমাদের যারা সাম্প্রদায়িক বলে তাদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছি। আমাদের শোভাযাত্রায় প্রাণ ছিল। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। আমাদের কীর্তনের দল কিংবা আদিবাসী নৃত্যর দলকে ভাড়া করতে হয়নি। কাউকে পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হয়নি”।