মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) রাজনৈতিক জীবনে তো বটেই সামগ্রিক ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বা তৃণমূলের (TMC) পরিভাষায় বললে বলা যায় ‘ঐতিহাসিক’ একটি লোকেসন।
মমতার সেই কংগ্রেসের (INC) দিনগুলো থেকে হাজরা মোড় নেত্রীর বিবিধ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাক্ষী, তাঁর উত্থানের দর্শক।

মধ্য কলকাতার ডোরিনা ক্রসিং বা কলেজ স্কোয়ারের মতো, একটা সময় হাজরা মোড় (Hazra Crossing) হয়ে উঠেছিল দক্ষিণ কলকাতার রাজনৈতিক আন্দোলনের ঠিকানা।
এই স্মৃতি বিজড়িত হাজরা মোড় থেকেই যেমন মমতার উঠে আসা, একই ভাবে মমতার হাত ধরে তৃণমূলেরও উঠে আসা।

শুধুমাত্র ব্যক্তি মমতা বা একটি রাজনৈতিক দল নয়, হাজরা মোড় থেকে উঠে এসেছিল একটি ঠিকানাও। প্রথমে সারা রাজ্যে তারপর গোটা দেশে পরিচিত হয়েছিল ৩০ বি হরিশ চট্টোপাধ্যায় স্ট্রিট। মমতার বাসভবন, টালির বাড়ি। এই ঠিকানাটার সঙ্গে রাজ্য রাজনীতিতে পরিচিতি পেয়েছিল একটি পরিবারও। নিম্ন মধ্যবিত্ত একটি পরিবার। তৎকালীন কংগ্রেস রাজনীতির অভিজাত পরিমণ্ডলের মধ্যে মাথা তুলেছিল একেবারেই ছাপোষা, অভাবের সঙ্গে নিত্য লড়াই করা একটি পরিবার।
তারপর আদি গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। দীর্ঘ চড়াই উতরাই পেরিয়ে মমতা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। পরপর দু’বার মমতা মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।
যে কোনও পত্তনের মধ্যেই সম্ভবত নিহিত থাকে পতনের বীজ!
সেই বীজ বেড়ে ওঠে অগোচরে। একদিন মহীরুহ হয়ে ছায়া ফেলে পত্তনের সাফল্যে।
শেষ কয়েক বছরে মমতা দেখেছেন শুরুর দিনের কাছের মানুষ, ভরসার মানুষ তাঁর হাত ছেড়ে চলে গেছেন।
কেন চলে গেছেন?

সব সফল রাজারই একটি নবরত্ন সভা থাকে। সে বিক্রমাদিত্য হোন কিংবা আকবর, বা বঙ্গের কৃষ্ণচন্দ্র। সাফল্যের জয়ধ্বনি রাজার নামে দেওয়া হলেও, সাফল্যের পিছনে নবরত্নের ভূমিকা কিছু কম থাকে না, বরং কোনও কোনও ক্ষেত্রে বেশিই থাকে।
তাঁদের কেউ যখন সঙ্গত্যাগ করে তখন শুধু তাঁকে আক্রমণ করেই কাজ সারলে চলে না, আত্মসমীক্ষারও দরকার হয়।
মমতা এখন প্রায় প্রতিদিন দল ভাঙার শব্দ পাচ্ছেন। আরও পাবেন। তবে শুধু দলই নয়। রাজনৈতিক ভাবে ভাঙবে তাঁর পরিবারও।
শুভেন্দু অধিকারী কয়েকদিন আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বলেছেন, হরিশ চট্টোপাধ্যায় স্ট্রিটের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারেও পদ্ম ফোটাবেন তিনি।
এখনও পর্যন্ত যা খবর, মমতার পরিবারেও ফুটবে পদ্ম। ফেব্রুয়ারি মাস পড়লেই শুরু হবে, শুধুমাত্র দল নয়, রাজনৈতিক ভাবে মমতার পরিবার ভাঙার দিন গোনা।
সূত্রের খবর, এই ভাঙ্গনটি অনুষ্ঠিত হবে সেই হাজরা মোড়েই।
মমতার স্মৃতি বিজড়িত হাজরা মোড়।