মুর্শিদাবাদ জেলার মুর্শিদাবাদ থানার ডাঙ্গাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত হুলাসপুর গ্রামে দ্বিশতাধিক বছরের এক পীরস্থান, ‘বদর সাহেবের মাজার’ নামে যা পরিচিত। ১৯৫৬ সালের রেকর্ড মোতাবেক হুলাসপুর গ্রামের মহম্মদ আশিক আহমেদের পরিবার এটি দান করেছিল। এখানে বিঘা চারেক জমি আছে। হিন্দু মুসলমান সকলে এখানে মানত করে। বছরে এক বার মেলা হয়। মাজারের কাছেই থাকেন, রহিমসা এটি দেখাশোনা করেন। কিন্তু দখল করে আজ পর্যন্ত কেউ চাষাবাদ বা অন্য কিছু করেনি। স্থানীয় জমি মাফিয়াদের নজর পরে এই মাজারের ওপর।
সাম্প্রদায়িক মিলনের এই মাজারটিকে ঈদগাতে বদলে দিতে তোরজোড় শুরু করে উম্মর শেখ (পিতা-সামেদ শেখ), রহিম বক্স (পিতা-রব্বানি শেখ), তাজেম আলি শেখ (পিতা-পঞ্জু শেখ) প্রমুখ। এনারা সকলেই শাসক দলের সমার্থক। গত ২৫ শে জুলাই তারা মাজার ভেঙ্গে ছোট ঘর তৈরি করা শুরু করলে স্থানীয় হিন্দু এবং মুসলমানরা তাদের মিনতি করে, বলে, ‘মাজার নষ্ট কোর না’।
মাজারের অধিকারী মহম্মদ আশিক আহমেদ কোর্টে যান, ১৪৪ ধারা জারি হয়, থানায় জানানো হয়। থানা থেকে অফিসার আসেন এবং ঈদগা নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে যান। কিন্তু এসবে কর্ণপাত না করে মাজারে একটি গেট ও ছোট ঘর নির্মাণ করে গত ১২ আগস্ট সেখানে ঈদের নামাজ পড়া হয়। থানায় বারংবার এই ঘটনা জানানো হয় কিন্তু থানা আসেনা বা কোন ব্যবস্থা নেয় না। পরে ২০ আগস্ট বাউল ফকির সংঘের আবেদনে থানা থেকে আসেন, কিন্তু কোন আইনি পদক্ষেপ নেন না।
ইসলামি মৌলবাদীরা পশ্চিমবঙ্গের নানা স্থানে প্রাচীন মাজার, দরগা, নজরগা দখল করে ঈদের নামাজ পড়ছে। নদিয়া জেলায় মায়াপুরের সন্নিকটে সোনাডাঙ্গায় মানিক পীরের মাজারে মহরমের মেলা হত, উৎসব হত, আয়োজন করত হিন্দু-মুসলমানরা। নদিয়ার কালীগঞ্জ থানার ঘোঁড়াইক্ষেত্রতে ছিল প্রাচীন একটি মাজার, শেখ ফরিদের। সম্প্রতি জোর করে শাসক দলের প্রচ্ছন্ন মদতে এগুলি দখল করে কোথাও কবরখানা কোথাও ঈদগা করা হয়েছে। যেসব মাজার গ্রামের বা এলাকার হিন্দু-মুসলমানের সমন্বয় ও মিলনের ক্ষেত্র ছিল, সেগুলি সুপরিকল্পিতভাবে ‘মুসলমানি’ রূপ দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদকে প্রসারিত করা হচ্ছে।
শাসক দলের একাংশ কথিত সংখ্যালঘু ভোটের বাধ্যবাধকতায় তাঁদেরই সাধারণ মানুষের কথা তোয়াক্কা না করে শরিয়তি ইসলামকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বামপন্থীরা তো বাংলার গ্রামগঞ্জের খবর রাখেন না। তারা হিন্দু মৌলবাদ ছাড়া চোখে দেখেন না কিছু।
আসলে মৌলবাদ হিন্দু ও ইসলামি বেশে, জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে বাংলার পুণ্যভূমির দখল নিচ্ছে। দুই মৌলবাদ পরস্পরকে শক্তিশালী করছে।
মৌলবাদ বিরোধী মানুষদের উক্ত জায়গাগুলিতে তথ্যানুসন্ধানে আসুন, আবেদন রাখছি। উল্লাসপুরে বাউল ফকির সংঘ ব্যাপকভাবে হিন্দু মুসলমানের কাছে মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে। ধর্ম সমন্বয়ের পুণ্য ভূমিকে কলুষিত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
মুর্শিদাবাদের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। ধন্যবাদ।