একদা লাল গড় আরামবাগে শুভেন্দুর মিছিলে গেরুয়া ইউফোরিয়া, ছয়ে ছয় করার ডাক

 একটা সময় আরামবাগ মহকুমা ছিল সিপিএমের দুর্ভেদ্য দুর্গ। সিপিএমের জোনাল পার্টি অফিসই যেন থানা, এসডিপিও দফতর। আর সেখান থেকে মোজাম্মেল হোসেনরা নির্দেশ না দিলে গাছের পাতাও নাকি নড়ত না।

’১১ সালে পরিবর্তনের পর সেই আরামবাগের রং বদল হলেও ঢং বদল হয়নি। অনেকে বলেন, সিপিএম যে ভাবে আধিপত্য বিস্তার করেছিল তার কয়েকগুণ আগ্রাসী কায়দায় আরামবাগ, খানাকুল, গোঘাট, পুরশুড়ায় দখলদারি কায়েম করেছে তৃণমূল। বিষ্যুদবার বিকেলে সেই আরামবাগেই শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির রোড শোয়ে গেরুয়া স্রোত বয়ে গেল। কাতারে কাতারে মানুষ যোগ দিলেন সেই মিছিলে। আর রোড শো শেষে সায়ন্তন বসু, শুভেন্দু অধিকারীরা তীব্র আক্রমণ শানালেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

আরামবাগ লোকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে ছটি পড়ে হুগলি জেলায়। অন্যটি পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা। এদিন শুভেন্দু ডাক দেন, বিধানসভা ভোটে ছয়ে ছয় করতে হবে। কয়েকদিন আগে চন্দ্রকোণায় যে কথা বলেছিলেন, এদিনও সেই একই কথা বলেন প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “উনিশের লোকসভা ভোটে আরামবাগ লোকসভা বিজেপি জিতেছে। ১৬টা মেশিনে গণ্ডগোল করে জোর করে বিজেপিকে হারানো হয়েছে।” ‘ভাইপোর’ তোলাবাজি নিয়ে এদিনও তুলোধোনা করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, “এই আরামবাগ, পুরশুড়া, ঘাটাল, চন্দ্রকোণা, কোতলপুর, জয়পুরের নদী-নালা কেটে বালি পাচার করছে। গাড়ি গাড়ি থেকে তোলা তুলছে। আর সেসব দেখাচ্ছে বলে আরামবাগ টিভির সম্পাদক সফিকুল ভাইকে জেলে পুড়েছিল।”

সিপিএম জমানায় অন্য দলের পতাকা নিষিদ্ধ ছিল আরামবাগ মহকুমায়। ২০০৩-এর পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেনি। ২০০৪-এর লোকসভায় প্রয়াত অনিল বসু জিতেছিলেন চার লক্ষ ৯২ হাজার ভোটে। ব্যবধান দেখলেই বোঝা যায় কেমন ভোট হয়েছিল।

এদিন শুভেন্দু বলেন, “২০০৩ সালে যখন এখান থেকে তৃণমূল পার্টিটা উঠে গেছিল তারপর আমিই এসেছিলাম এ অঞ্চলে। অভয় ঘোষদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এসেছিলাম। এবার সেই তৃণমূলকে পুরো সাফ করতে হবে।”

প্রসঙ্গত, বিরোধীদের অভিযোগ, বাম জমানায় গোঘাটে যাবতীয় সন্ত্রাসের কাণ্ডারী ছিলেন দুই ঘোষ। অভয় এবং তিলক। অনেকের বক্তব্য, বিরোধীদের উপর এমন মধ্যযুগীয় কায়দায় অত্যাচার চালানো হত যা শুনলে শিউরে উঠতে হয়। এমনকি সিপিএমের নেতা পশু চিকিৎসক দেবু চট্টোপাধ্যায় সে সবের বিরোধিতা করতে গিয়ে অনিল বসু অ্যান্ড কোম্পানির রোষানলে পড়েছিলেন।

গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদারের নাম না করে তাঁকেও বিঁধতে চান নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেতা। এদিন শুভেন্দু বলেন, “গোঘাটের বিধায়ক লোকসভার পর ঘরে ঢুকে গেছিল। আবার বেরিয়েছে ছটা নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে। এদের সবাইকে এবার হারাতে হবে।” তাঁর কথায়, “আপনারা এখানে ছয়ে ছয় করুন, নন্দীগ্রামে আমি মাননীয়াকে ৫০ হাজার ভোটে হারিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেব।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.