দুর্গা পুজো, কালী পুজোয় মণ্ডপগুলিকে কন্টেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। ক্রিসমাসেও জমায়েত, ভিড়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আদালত। এবার গঙ্গাসাগর মেলা!
করোনা পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলাকে কন্টেইনমেন্ট জোন করার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, “মানুষের জীবন আগে। পরে বিশ্বাস।”
যদিও এদিনের শুনানিতে রাজ্য জানায়, তারা এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছে। তবে কার্যত কোভিড পরিস্থিতি মেডিক্যালি নিয়ন্ত্রন করা অসম্ভব বলেও জানিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে রাজ্যের দাবি, কেন্দ্র আলাদা কোনও গাইডলাইন দেয়নি। তবে কিছুটা হলেও কম সংখ্যাক পুণ্যার্থী আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে বলে জানানো হয় রাজ্যের তরফে।
যদিও পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, “সরকার বা প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা নিয়ে আদালতের আগ্রহ নেই। কী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা অগ্রাধিকারের বিষয়।” প্রধান বিচারপতি বলেছেন, “একসঙ্গে অনেক মানুষ জলে স্নান করলে ড্রপলেট থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত নিয়ে দুপুর দুটোর মধ্যে হলফনামা জমা দিক। তারপর এই মামলা নিয়ে আদালত তার নির্দেশ দেবে।”
তিনি আরও বলেন, “এদিন আদালতে আসার পথে আমি দেখেছি, ইডেন গার্ডেন্স, বাবুঘাট চত্বরে বহু পুণ্যার্থী মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যা অনভিপ্রেত।”
প্রধান বিচারপতি এ-ও জানতে চান, গতবছর কত মানুষ এসেছিলেন গঙ্গাসাগরে? রাজ্য জানায়, ২৫ লক্ষ মানুষ এসেছিলেন। বিচারপতি এ কথা শুনে স্পষ্ট বলেন, “আমরা মানুষের স্বাস্থ্য নিয়েই চিন্তিত। দরকারে মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসুন।” মামলাকারী তরফের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “গঙ্গাসাগর মেলা আইন ১৯৭৬-এ উল্লেখ আছে মানুষের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে বিশেষ কারণ দেখিয়ে রাজ্য এই মেলা বন্ধ করতে পারে। সেই অধিকার আছে এই আইনে।”
বিচারপতি এ-ও জানান, দুর্গাপুজো, ছটপুজোর সঙ্গে গঙ্গাসাগর মেলার পরিস্থিতির তুলনা হয় না। একমাত্র কুম্ভমেলার সঙ্গে তুলনা হয়। বাকি পুজোগুলোয় এত বিপুল মানুষ স্নান করতে নামেন না। সব মিলিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের পরামর্শ “বিকল্প খুঁজুন, প্রয়োজনে এমন ব্যবস্থা করুন যাতে মানুষ জল নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে।”
শেষমেশ রাজ্যের মুখ্যসচিব, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আলোচনা করে আগামীকাল হলফনামা দিতে নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি শুক্রবার, আগামীকাল দুপুর দুটোয়।
গঙ্গাসাগরে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর সমাগম হয়। কথায় বলে, সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। কার্যত সব উৎসবই শিকেয় উঠেছে। ব্রিটেনের নতুন স্ট্রেন আসার পর বিপদ আরও বেড়েছে বলেই মত অনেকের। ইউরোপের বহু শহরে নতুন করে লকডাউন জারি করতে হয়েছে। এখন দেখার গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে আগামীকাল চূড়ান্ত কী নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।