করোনা টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ দিন পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে, শুরুতে এমনটাই জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন টিকার ক্ষেত্রে এই নিয়মই আছে। তবে সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড টিকার ক্ষেত্রে দুটি ডোজের মাঝের সময়সীমা ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন সরকারি প্যানেলের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যবধানও যথেষ্ট নয়। কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ নেওয়ার অন্তত ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ নিলে তবেই শরীরে তার কার্যকারিতা বাড়বে।
কোভিশিল্ড টিকা যে ফর্মুলায় তৈরি তাতে এর দুটি ডোজের সময়সীমার মধ্যে ব্যবধান বাড়ালে রোগ প্রতিরোধ শক্তি আরও বাড়বে, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ ইমিউনাইজেশন (এনটিএজিআই) জানিয়েছে, টিকার ডোজে বেশি পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি করতে হলে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে লম্বা সময়ের বিরতি রাখতেই হবে। সব টিকার ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়, শুধুমাত্র কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
এর কারণও আছে। অক্সফোর্ড টিকার দুটি ডোজের এফিকেসি নিয়ে আগেও প্রশ্ন উঠেছিল। বলা হয়েছিল, অক্সফোর্ডের চ্যাডক্স টিকার প্রথম ডোজ যতটা কার্যকরী হচ্ছে, সে তুলনায় দ্বিতীয় ডোজের প্রভাব কম। অক্সফোর্ড টিকার একটি ডোজ দিলে নাকি তা ৯০ শতাংশ কার্যকরী হচ্ছে। অথচ যদি টিকার সম্পূর্ণ ডোজ অর্থাৎ ২৮ দিনের ব্যবধানে দুটি ডোজ দেওয়া হয় স্বেচ্ছাসেবকদের তাহলে নাকি টিকার কার্যকারিতা ফের ৭০ শতাংশে নেমে যাচ্ছে। যদিও সারা গিলবার্টের টিম পরে জানায়, টিকার দুটি ডোজ গড়ে ৭০ শতাংশের বেশি কার্যকরী। এই গড় হিসেব কেন আনা হচ্ছে সে নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়, অক্সফোর্ড ফের নতুন ট্রায়াল করে দাবি করে টিকার দুটি ডোজই ৯০ শতাংশ কার্যকরী। প্রথম ডোজেই শরীরের ইমিউন কোষগুলো সক্রিয় হয়ে উঠছে, তাই দ্বিতীয় ডোজের আগেই সুরক্ষা বলয় তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তাই কিছুটা ব্যবধানে যদি দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয় তাহলে সেটি বুস্টার হিসেবে বেশিদিন কার্যকরী থাকবে।
অক্সফোর্ডের টিকার ফর্মুলাতেই কোভিশিল্ড বানিয়েছে সেরাম। যদিও কোভিশিল্ড টিকার দুটি ডোজের কার্যকারিতা নিয়ে আলাদা কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। তবে কোভিশিল্ড টিকারও সম্পূর্ণ ডোজ যদি কিছুটা ব্যবধান রেখে দেওয়া যায় সেই প্রস্তাবই করেছেন সরকারি প্যানেলের বিশেষজ্ঞরা। সাধারণত কোভিড টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার ২৮ দিন পরে দ্বিতীয় ডোজ দিলে, তার অন্তত ১৪-১৫ দিন পর থেকে ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কোভিশিল্ড টিকার ক্ষেত্রে প্রথম ডোজ দেওয়ার ৪২ দিন অথবা ৫৬ দিন পরে দ্বিতীয় ডোজ দিলে অ্যান্টিবডির পরিমাণ বাড়বে। এখন সেটাই আরও বাড়িয়ে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করার প্রস্তাব দেওয়া হল।
তাছাড়া ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ ইমিউনাইজেশনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, কোভিড সারিয়ে ওঠার অন্তত ৬ মাস পরে টিকার ডোজ নিলে শরীরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ বাড়বে। এখন করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসার ১৪ দিনের মাথাতেই টিকা নেওয়া যায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সারিয়ে উঠলে এমনিতেও মাস তিনেক অ্যান্টিবডি টিকে থাকে শরীরে। এরপরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ কমতে থাকে। তাই সেই সময়টা যদি টিকার ডোজ নেওয়া যায় তাহলে অ্যান্টিবডি আরও কয়েকমাস বেশি স্থায়ী হবে। সরকারি প্যানেল আরও জানিয়েছে, অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা ও সদ্য প্রসব হয়েছে এমন মহিলারা টিকার ডোজ বেছে নিতে পারবেন। প্রসবের পরে যে কোনও সময় টিকা নেওয়া যাবে।