উত্তরবঙ্গের বিজেপি প্রার্থীদের অলিখিত মেন্টর আসলে অরবিন্দ মেননই। ভোটের ময়দানে উত্তরবঙ্গের বিজেপি প্রার্থীরা সমস্যায় পড়লে প্রথম ফোনটি করছেন মেননকেই। কাছাকাছি থাকলে সশরীরে সেই প্রার্থীর কাছে হাজির হবেন তিনি।
টানা দশ বছর মধ্যপ্রদেশে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। মধ্যপ্রদেশে বিজেপির ‘শক্তিশালী’ সংগঠনের পিছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। গত ছ’মাস ধরে দক্ষিণ ভারতীয় অরবিন্দ মেননের ঠিকানা উত্তরবঙ্গের অলি-গলি। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কখনও চা বাগানের শ্রমিক বস্তি, কখনও গভীর রাতে আলিপুরদুয়ারের জঙ্গল ঘেরা অখ্যাত গ্রামে বসে তিনি বৈঠক সেরেছেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। তাঁর উপর যে গুরু দায়িত্ব। যেনতেন প্রকারে উত্তরবঙ্গে থেকে অন্তত তিন-চারজন বিজেপি প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতেই হবে!
উত্তরবঙ্গের বিজেপি প্রার্থীদের অলিখিত মেন্টর আসলে অরবিন্দ মেননই। ভোটের ময়দানে উত্তরবঙ্গের বিজেপি প্রার্থীরা সমস্যায় পড়লে প্রথম ফোনটি করছেন মেননকেই। কাছাকাছি থাকলে সশরীরে সেই প্রার্থীর কাছে হাজির হবেন তিনি। বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার প্রচারের প্রথম দিনই বুঝে গিয়েছিলেন জেলা বিজেপির একাংশ তাঁকে প্রার্থী হিসেবে মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না। সক্রিয় রাজনীতিতে তিনি আনকোরা। দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন সুকান্ত। এই পরিস্থিতিতে ‘দেবদূতের’ মতো সুকান্তর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন মেনন। প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে বালুরঘাটের ব্লকে ব্লকে ঘুরেছিলেন তিনি। ‘বিক্ষুব্ধদের’ সঙ্গে প্রার্থীর ‘মিটমাটও’ করে দিয়েছেন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায়।
সাতটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন অরবিন্দ। সেই তালিকায় বাংলাও আছে। তাঁর কথায়, ‘সংগঠনের কাজ করার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পড়ে থাকতে হয়েছে। ফলে সেই সব এলাকার ভাষাগুলিও রপ্ত হয়ে গিয়েছে।’ সর্বভারতীয় স্তরে নানা দায়িত্ব তাঁকে সঁপেছেন অমিত শাহরা। যেমন, দেশের আনাচে-কানাচে কোথায় বিজেপি অফিস তৈরি হচ্ছে তার উপর নজরদারি চালানোর দায়িত্ব অরবিন্দর। এ ছাড়াও, নমামি গঙ্গে, গুড গর্ভন্যান্সের মতো কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলি দেশজুড়ে প্রচারের ভারও তাঁর উপর। মাস ছয়েক আগে অরবিন্দকে বাংলার ভোট সামলানোর বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন অমিত। এর পরই বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছেন। উত্তরবঙ্গকেই ‘ফোকাস’ করেছেন মধ্যপ্রদেশের এই বিজেপি নেতা। ভোট ঘোষণার অনেক আগেই চষে ফেলেছেন উত্তরবঙ্গের প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্র। দফায় দফায় বৈঠক করেছেন ওই সব কেন্দ্রের একেবারে বুথস্তরের বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে।
আরএসএস থেকে উঠে আসার সুবাদে পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করতে পছন্দ করেন অরবিন্দ। তাঁকে দেখা যায় না টিভির পর্দায়। কিন্তু এ রাজ্যের নিচুতলার বিজেপি কর্মীরা বলছেন, অরবিন্দর চেষ্টায় উত্তরবঙ্গে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অনেকটাই কমেছে। অরবিন্দ নিজে বলছেন, ‘দেখবেন দাদা উত্তরবঙ্গে আমরা খুব ভালো রেজাল্ট করব। আমাদের প্রার্থীরাও অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। গোটা বাংলাই আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি। উত্তরবঙ্গে আগে ভোট বলে আপাতত ওখানেই পড়ে আছি।’
খাতায়-কলমে গোটা বাংলার নির্বাচন সামলানোর ভার তাঁর উপর পড়লেও উত্তরবঙ্গের আসনগুলি নিয়ে অনেক বেশি আশাবাদী অরবিন্দ। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘উত্তরবঙ্গে এমন কোনও বিজেপি কর্মী নেই যাঁর কাছে মেননজির নম্বর নেই। তার থেকেও বড় কথা উনি নিজে বুথস্তরের বিজেপি কর্মীদের নামে চেনেন।’ প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে রাজ্য বিজেপির তাবড় নেতারা যখন সংগঠন শিকেয় তুলে টিকিট পাওয়ার দৌড়ে নেমেছিলেন, তখন মেনন কলকাতা থেকে বহু দূরে উত্তরবঙ্গের জেলায় জেলায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করছিলেন।