২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও নিজেদের প্রতিবাদে অনড় রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল এবং হাসপাতালের ইন্টার্ন এবং জুনিয়র ডাক্তাররা। বরফ যে সহজে গলবে না তার আভাস আগেই দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, “অনেক হয়েছে আর নয়। এ বার শেষ দেখে ছাড়ব।” নিজেদের সেই অবস্থানেই অনড় রইলেন তাঁরা। প্রেস বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট জানালেন, “দাবি না মানলে অবস্থান উঠবে না।”
মঙ্গলবার থেকে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে আউটডোর। বেশ কিছু জায়গায় বন্ধ ইমার্জেন্সি পরিষেবাও। ভোগান্তিতে নাজেহাল অসংখ্য রোগী এবং রোগীর পরিজনরা। বেশ কিছু জায়গায় বিক্ষোভকারী ডাক্তারদের উপর চড়াও হয়েছে রোগীর পরিজনেরা। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদ-ধর্না তুলে নিতে বলা হয়েছিল। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে গোটা ব্যাপারটায় নজর রাখছেন। খতিয়ে দেখছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আধিকারিকরাও। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হবে। এ বার যেন ইন্টার্ন এবং জুনিয়র ডাক্তাররা ধর্না তুলে নেন। কারণ এই ধর্নার আর প্রয়োজন নেই।” স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছিল, “মেডিক্যাল পরিষেবা সবসময়ই জরুরিভিত্তিক। দীর্ঘক্ষণ ধরে সেই পরিষেবা বন্ধ থাকা মানে সাধারণ মানুষ এবং রোগীদের হয়রানি হওয়া, যা কখনই কাম্য নয়।” বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলা হয়, “তাঁদের ধর্না সাধারণ মানুষের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এই মন্তব্যের পাল্টা হিসেবে বিক্ষোভকারীরা প্রেস বিবৃতিতে বলেন, “কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন তাঁদের ধর্নায় এবং তাঁদের দাবিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলেই এমনটা হচ্ছে।” পাশাপাশি বেশ কিছু বিশেষণ ব্যবহার করে প্রশাসন এবং কর্তৃপক্ষকে কটাক্ষও করেন তাঁরা। বলা হয়, “মাত্র ৫ জনকে গোটা ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। যা তাণ্ডবকারীদের সংখ্যার মাত্র ১০ শতাংশ।” বিক্ষোভকারীরা এও বলেন, “আহত ইন্টার্নকে প্রশাসন সবচেয়ে উন্নত চিকিৎসা দিচ্ছে, কারণ পুলিশ হামলাকারীদের হাত থেকে ওই তরুণকে রক্ষা করতে পারেনি। আর চিকিৎসার সমস্ত টাকাপয়সা ওই আহত ইন্টার্ন এবং তাঁর পরিবারের তরফেই দেওয়া হচ্ছে।” এখানেই থামেননি বিক্ষোভকারীরা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় তোপ দেগেছেন তাঁরা। এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উদ্দেশে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যতক্ষণ না তাঁদের সব দাবি মানা হবে ততক্ষণ অবস্থান চলবে।
বিক্ষোভকারীদের কথায়, “যাঁরা অন্যদের প্রাণ বাঁচান, এ বার তাঁদের নিরাপদে রাখার সময় এসেছে।” নিজেদের আন্দোলনের নাম দিয়েছেন, ‘save the saviour movement’। সব শেষে বিক্ষোভে সামিল ইন্টার্ন এবং জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে তাঁদের প্রেস বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, “আমাদের আবেদন, ‘সচেতন’ কর্তৃপক্ষ যেন আমাদের সব দাবি বুঝে নিয়ে সেই মতো পদক্ষেপ নেন। তাহলেই আমরা দ্রুত নিজেদের কাজে ফিরে যাব। আপনাদের বারবার আমাদেরকে বলতে হবে না।”
শরীরী ভাষা থেকে প্রেস বিবৃতি সবেতেই বিক্ষোভকারীরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, এ বার নিজেদের সব দাবি তাঁরা আদায় করে নেবেন।