রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফের ধুন্ধুমার অবস্থা সরকারি হাসপাতালে।

এ বার অকুস্থল খাস কলকাতার বুকে এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অভিযোগ, চিকিৎসার গাফিলতিতে মৃত্যু হয়েছে ট্যাংরার এক বৃদ্ধের। তার পরই গভীর রাতে হাসপাতালে ভাঙচুর চালান রোগীর পরিজনরা। কম যাননি জুনিয়র ডাক্তাররাও।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, জুনিয়র ডাক্তাররাও পাল্টা মারধর করেন রোগীর পরিজনদের। দু’পক্ষের সংঘর্ষ এতটাই তীব্র আকার নেয় যে গুরুতর আহত হন দু’জন ইন্টার্ন। এর পর আরও মারমুখী হয়ে ওঠেন জুনিয়র ডাক্তাররা। হাসপাতালের গেট আটকে ‘শাট ডাউন’ নোটিস লাগিয়ে দেন। ফলে এই মুহূর্তে পুরোদস্তুর অচলাবস্থা চলছে হাসপাতালে।

ঘটনার সূত্রপাত ঘটে সোমবার রাতে। মহম্মদ সাহিদ নামে ৮৫ বছরের ওই বৃদ্ধকে পরশু ভর্তি করা হয়েছিল এনআরএসে। রোগীর পরিজনদের বক্তব্য, সোমবার সকাল পর্যন্ত ভাল ছিলেন তিনি। কিন্তু বিকেল পাঁচটার পর থেকে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন সাহিদ। চিকিৎসকদের বারবার ডাকা সত্ত্বেও কেউ আসেননি। এর পর সন্ধ্যায় ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।

উত্তেজনা আরও বাড়ে এর ঘন্টা খানেক পর। রোগীর পরিজনদের বক্তব্য, প্রায় ৫ ঘন্টা কেটে গেলেও বডি ছাড়া হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, রাত দশটা নাগাদ চিকিৎসকদের সঙ্গে এক প্রস্ত ধস্তাধস্তি হয় রোগীর আত্মীয়দের। তখনই আহত হন এক জন জুনিয়র ডাক্তার। তার পর রাত ১১ টা নাগাদ হস্টেল থেকে প্রায় চারশ জন জুনিয়র ডাক্তার ও পড়ুয়া হাতে লাঠি, উইকেট, ডাণ্ডা নিয়ে বেরিয়ে আসেন। তাঁরা হাসপাতালের গেটে তালা লাগিয়ে দেন। অন্যদিকে রোগীর পরিবারের লোকেরাও বাইরে থেকে প্রচুর লোক জন নিয়ে আসেন। তাঁরা তালা ভাঙার চেষ্টা করেন। দু’পক্ষের ধুন্ধুমার শুরু হয়ে যায়। রোগীর পরিবারের লোক জন যেমন ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। তেমনই পাল্টা মারেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ইটের আঘাতে ফের আহত হন এক জুনিয়র ডাক্তার।

হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীর পরিবারের লোকজন ভয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাত ১ টা নাগাদ বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ নামানো হয়। তাতে সংঘর্ষ থামানো যায় ঠিকই। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়ে দেন, তাঁদের সতীর্থরা যতক্ষণ না সুস্থ হচ্ছেন এবং পুলিশ রোগীর পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ততক্ষণ হাসাপাতালে অচলাবস্থা চলবে।

এই অবস্থায় হাসপাতালের সুপার, ডেপুটি সুপার রাতেই একবার জুনিয়র ডাক্তার ও পড়ুয়াদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হন। সকালে ফের বৈঠক করেন তাঁরা। হাসপাতালে চলে আসেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা প্রণব কুমার মিত্র। তিনি বিক্ষোভরত ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে তাতেও তাঁদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে পারেননি।

সার্বিক ভাবে গোটা হাসপাতালে এখনও অচলাবস্থা চলছে। হাসপাতালের আউটডোরে এ দিন কোনও রোগীর চিকিৎসা হয়নি। ইমার্জেন্সিও বন্ধ। হাসপাতালের একটি সূত্রের মতে, ইতিমধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে বিক্ষোভরত ডাক্তারদের একপ্রস্থ হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধেও পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। হাসপাতালও তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁদের দাবিতে এখনও অনড়।
পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় এখন সেটাই দেখার।
