সিঙ্গুরে বিজেপির ধরনামঞ্চ বাঁধায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠলো পুলিশের বিরুদ্ধে।

রাজনৈতিক আন্দোলন! তার হাত ধরেই আবারও শিরোনামে উঠে এল সিঙ্গুরের নাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কৃষকস্বার্থ দেখছে না, এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার থেকে সিঙ্গুরে ধরনায় বসছে বিজেপি। তার আগে রবিবার সেই ধরনামঞ্চ বাধার সময় তৈরি হল উত্তপ্ত পরিস্থিতি। পুলিশের বিরুদ্ধে মঞ্চ বাঁধায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুললেন সায়ন্তন বসুরা। অভিযোগ, হাইওয়ের পাশে কেন মঞ্চ বাঁধা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পুলিশ। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্রও পুলিশ দেখাতে বলে, এমনই অভিযোগ।

স্থানীয় বিজেপি নেতা সঞ্জয় পাণ্ডের অভিযোগ, “আমাদের লোকজন এখানে মঞ্চ তৈরি করার জন্য এসেছিল। সেই গাড়ির লোকজনকে বলা হয়েছে এখানে বাঁশ ফেলতে দেওয়া হবে না। কিন্তু বিজেপি প্রশাসনের এই নির্দেশ অবমাননা করেনি। আমরাও বলেছি গাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাও। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি আমাদের কোনও আপত্তির কথাও বলেনি, অনুমোদনও এখনও পর্যন্ত আমাদের দেয়নি। কিন্তু আমার বক্তব্য, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের জায়গায় আমরা কর্মসূচি করব, তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের কী অধিকার রয়েছে আমাদের আটকানোর?”

আগামী ১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর তিনদিন সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমিতেই বিজেপি বিক্ষোভের সুর চড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। বিরোধী দলনেতা শনিবারই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করে জানিয়ে এসেছেন, ইয়াশ, টানা বৃষ্টির জেরে কপালে হাত বাংলার কৃষকদের। কিন্তু সরকার অন্নদাতাদের দুর্দিন একেবারে ভাবলেশহীন। তাই ময়দানে নামছেন তাঁরা।

এরপরই রবিবার থেকে সিঙ্গুরে ধরনামঞ্চের ম্যারাপ বাঁধার কাজ শুরু করতে যায় বিজেপি। অভিযোগ, পুলিশ তাতে বাধা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতা দুধকুমার ধাড়ার বক্তব্য, “হাসি পাচ্ছে এসব কথা শুনে। যারা কৃষকদের শেষ করার জন্য, কর্পোরেট সংস্থার দালালি করার জন্য তিনটে কালা কৃষি আইন চালু করেছিল। কৃষকদের টানা এক বছরের আন্দোলন ওদের বাধ্য করেছে পিছু হঠতে। তারা কৃষকদের নিয়ে কিছু করবে এটা তো শুনেই কেমন লাগছে। তবু এসব করছে বলব কুমীরের কান্না। এই কুমীরের কান্নায় সিঙ্গুরের মানুষ বা বাংলার মানুষ কোনওভাবেই বিশ্বাস করবে না।”

রবিবার সকালেই বাঁশ, দড়ি-সহ ধরনামঞ্চ তৈরির জিনিসপত্র নিয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতারা হাজির হন। কিন্তু পুলিশি বাধার মুখে তাঁরা ফিরে যান বলে অভিযোগ। দুপুরের দিকে সেখানে যান বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। তিনি জানান, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও বাধা নেই। তারা অনুমতিও দিয়েছে। তবে পুলিশের কাছ থেকে এখনও কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সায়ন্তন বসুর বক্তব্য, “অসময়ের ভারী বর্ষায় কৃষকদের এত ক্ষতি হয়েছে। এখানে এমএসপির জন্য রীতিমতো পয়সাকড়ি, কাটমানি দিতে হয়। সারের দীর্ঘদিন ধরে বাড়ছে। তার জন্য এখানে অবস্থান শুরু হবে মঙ্গলবার থেকে। এনএইচএকে আমরা চিঠিও দিয়েছি। যেটা দুঃখজনক, পুলিশ সহযোগিতার পরিবর্তে মজন্তালি সরকার হয়ে বাধা দিচ্ছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ কোনও বাধা দিচ্ছে না। তারা সহযোগিতা করছে। পুলিশ যদি বাধা দেয় তা হলে কিন্তু মঙ্গলবার কুরুক্ষেত্র হবে। হুগলি পুলিশসুপারের অফিস কিন্তু ঘেরাও হবে। তার দায়িত্ব কিন্তু আমরা নেব না। রাস্তায় আরও বড় আন্দোলন হবে। হাজার হাজার কৃষক সেদিন পথে নামবেন তবে।”

এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা সিঙ্গুর বেছে নিয়েছি কারণ বাম সরকারের অদূরদর্শিতা এবং তৃণমূল কংগ্রেসের হঠকারী আন্দোলন একটা শিল্প সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটিয়েছে। সিঙ্গুরের কৃষকরা হয়ত জমি ফেরত পেয়েছিলেন, কিন্তু জমির ফসল ফেরত পাননি। সেখানে কোনও অবস্থাতেই কোনও মঞ্চ তৈরি করতে দেবে না রাজ্য সরকারের প্রশাসন।”

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রবিবারই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, “আমরা আন্দোলন থেকে পিছু হঠব না। আমরা আন্দোলন করবই। আমি নিজে ১৬ তারিখ যাব। পুলিশ গ্রেফতার করলে করবে। লাঠিচার্জ করলে করবে, গুলি চালালে চালাবে। আমরা পুলিশের সঙ্গে লড়াইয়ে নামতে বাধ্য হব এবার। পুলিশ যা করছে তা দলদাসেরা করে। পুলিশকে বলব সংবিধান অনুসারে আচরণ করুক।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.