“কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাকে ভয় শূন্য দেখতে চেয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন ‘চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত’। অর্থাৎ ভয় শূন্য বাংলা দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বাংলায় ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে”। সোমবার বীরভূমের মহম্মদ বাজার থানার গনপুরে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আক্রমণ করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শা।
এদিন বক্তব্যের প্রথম থেকেই রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন অমিত শা। বীরভূমে এসে তিনি প্রথমেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রণাম জানান। বলেন, “রাষ্ট্রগানের নির্মাতা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের জন্মভূমিকে প্রণাম। তিনি এখানে শান্তিনিকেতন থেকে বীরভূমের নামকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। এই বীরভূমে রয়েছেন বিশ্ববন্দিত মা তারা। তার পাশেই আটলা গ্রামে বামাখ্যাপার জন্মভূমি। কথিত আছে মা তারার আগে বামাখ্যাপার ভোগ হয়। আধুনিকীকরণের নামে সেই তারাপীঠের পরম্পরা নষ্ট করে দিচ্ছে বাংলার সরকার। তারাপীঠের মহাশ্মশানে বহু মহাপুরুষের সমাধি তুলে ফেলে দেওয়া হয়েছে। একজন কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে শ্মশানের পবিত্রতা কিছুটা হলেও পরম্পরা নষ্ট করা থেকে থেকে আটকে রেখেছেন। আমাদের সরকারে এলে শ্মশানের পবিত্রতা ফিরিয়ে দেব। পরপম্পরা নষ্ট করতে দেব না”।
আদিবাসী ও গরিব মানুষদের উন্নয়ন প্রসঙ্গে অমিত শা বলেন, “এখানে আদিবাসীদের জন্য ডিস্ট্রিক্ট মিনারেল ফান্ডের মাধ্যমে সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। স্বাধীনতার পর এরকম সাহায্য প্রথম দিয়েছে মোদী সরকার। আদিবাসী অধ্যুষিত প্রতিটি ব্লকে স্কুল করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বহু জায়গায় কাজ হয়েছে। বনবন্ধু কল্যাণ প্রকল্পে সাত হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালে স্বাধীনতা দিবসের ৭৫ বছর পূর্তির আগেই প্রতিটি আদিবাসীদের পরিবারে পাকা বাড়ি, শৌচাগার, পানীয় জল, বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে বিজেপি সরকার। কেউ গরিব থাকবে না। ৫০ কোটি মানুষ পাঁচ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবীমা পাবে। বাংলার উন্নয়নের জন্য ৪ কোটি ২৪ লক্ষ ৮৫৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। অমদের সরকার আদিবাসী কৃষকদের প্রতিবছর ৬ হাজার টাকা করে ভাতা দেবে। ৬০ বছর হয়ে গেলে পেনশন দেবে। বাংলার আদিবাসী ও গরিব মানুষের জন্য যখন এত কিছু করছে কেন্দ্রীয় সরকার, তখন মমতার সরকার এখানে সিণ্ডিকেট চালু করে অশান্তির সৃষ্টি করছে। মা মাটি মানুষের সরকার রাজ্যের জন্য কিছু করেনি, যা করেছে দলের গুণ্ডাদের জন্য করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাকে কাঙাল করে দিয়েছে। বাংলার উন্নয়ন একমাত্র করতে পারে বিজেপি সরকার। মোদী সরকার বাংলাকে সোনার বাংলা করতে পারে”।
চিটফান্ড প্রসঙ্গ টেনে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বলেন, “আপনারা মোদী সরকার বানিয়ে দিন। ৯০ দিনের মধ্যে চিটফান্ডে অভিযুক্তদের জেলের ভিতর পাঠাব”। তিনি আরও বলেন, “আমরা এই জেলার মানুষ প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ভারতরত্ন সম্মান দিয়েছি। তিনি চিরকাল কংগ্রেস করেছেন। তবুও আমরাই তাকে সম্মান দিয়েছি। ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাব। পাকিস্তানে বোমা নিক্ষেপ করে আমাদের জওয়ানরা যখন আতঙ্কবাদীদের মারছে, তখন মমতার চেহারা শুকিয়ে যাচ্ছে। এরা আতঙ্কবাদিদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বলতে বলছে। মমতা আতঙ্কবাদীদের নিয়ে এলু এলু খেলছে। কিন্তু আমরা ইটের জবাব পাথরে দেবে”।