“পাঁচ দিন ধরে ওপিডি বন্ধ, এটা আমরাও চাই না। আলোচনার রাস্তা খোলাই আছে, আমরা কাজে ফিরতে চাই,” শনিবার রাতে সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানালেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা।
রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সংকট তীব্র। মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনের পরেও নিজেদের অবস্থানে অনড় আন্দোলনকারীরা।শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অচলাবস্থা কাটেনি। আন্দোলনকারী ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা নবান্নে যাবেন না। অন্য দিকে, এ দিনই রাজভবন থেকে প্রেস বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আন্দোলনকারী ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টা সুনিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, এনআরএস হাসপাতালে ডাক্তার নিগ্রহকে কেন্দ্র করে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই আচরণে তিনি যে দুঃখ পেয়েছেন তাও এ দিন তাঁকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন রাজ্যপাল।
এ দিন রাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ডাক্তাররা প্রস্ন তোলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো আমাদের সঙ্গে কথাই বলেননি, কী ভাবে জানলেন আমরা কী চাই।” পাশাপাশি, তাঁদের এও দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যেটা ইগোর লড়াই, সেটাই আমাদের কাছে বাঁচার লড়াই।”
শনিবার সন্ধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি আবেদন জানিয়েছিলেন, জুনিয়র ডাক্তাররা যেন নবান্নে এসে তাঁদের সমস্যা এবং দাবিদাওয়ার ব্যাপারে কথা বলেন। পাশাপাশি তাঁরা যেন ডিউটিতে ফেরেন সে ব্যাপারেও আবেদন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর সব আবেদনই ফিরিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। নিজেদের প্রেস বিবৃতিতে তাঁরা জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রী সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। ওঁর চেষ্টায় সততা নেই। উনি বলেছেন আমরা নবান্নে যাইনি। যার মানে দাঁড়ায় আমরা সমাধানের বিরুদ্ধে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের আন্দোলন চলবে।” এ দিন রাতের প্রেস বিবৃতিতে একই বক্তব্য রাখেন তাঁরা। ডাক্তারদের দাবি, “আমরা আলোচনার রাস্তা সবসময় খোলা রেখেছি। রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অবনতি হোক সেটা আমরাও চাই না। মুখ্যমন্ত্রী সকলের মাতৃসমা। উনি একটা হাত বাড়ান, আমরা দশটা হাত বাড়িয়ে দেবো।”
বস্তুত, এনআরএস-এর আহত ইন্টার্ন পরিবহ মুখোপাধ্যায়কে হাসপাতালে দেখতে যাবেন বলেও যাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইটের আঘাতে মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব ভেঙেছিল পরিবহর। মঙ্গলবার রাত থেকে মল্লিকবাজারের ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সে ভর্তি ছিলেন ডোমজুড়ের বাসিন্দা এই তরুণ। মৃত্যুকে ছুঁয়ে ফিরে এসেছেন বছর ২৬-এর পরিবহ। দু’ঘণ্টার অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। পরিবহও নিজেও বলেছেন তিনি ভালো আছেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে এ দিন আন্দোলনকারীরা বলেন, “পরিবহ যে এখন সম্পূর্ণ সে কথা কে বলেছে মুখ্যমন্ত্রীকে। পরিবহর দৃষ্টিশক্তির সংস্যা হচ্ছে। হয়তো আর কোনও দিন তার সার্জেন হওয়া হবে না। ”
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, সব আলোচনাতেই তাঁরা রাজি। কিন্তু যা কথা হবে তা নবান্নে নয়, এনআরএস-এ এসেই বলতে হবে মুখ্যমন্ত্রীকে।