গতকাল ২০শে সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্র সংগঠন এবিভিপির আয়োজনে ভারতীয় ভাষা পরিষদ হলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল “পশ্চিমবঙ্গ মাতৃভাষা দিবস”। পশ্চিমবঙ্গের বুকে উর্দু ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঙ্গলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার্থে আত্মবলিদানকারী দুই বীরাত্মা ভাষাতীর্থ দাড়িভিটের রাজেশ সরকার এবং তাপস বর্মনের স্মরণে এবং দাড়িভিটের ভাষা আন্দোলনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে পশ্চিমবঙ্গের জন্যে-এর সহযোগিতায় অখিল ভারতীয় ছাত্র পরিষদের এই ‘পশ্চিমবঙ্গ মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপন।

ঠিক এক বছর আগে, ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, বাংলাভাষার জন্য প্রাণ দিল ইসলামপুর ব্লকের দাড়িভিট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র রাজেশ সরকার এবং একাদশ শ্রেণীর ছাত্র তাপস বর্মন। অভিযোগ বিদ্যালয়ে প্রয়োজন বাঙ্গলা শিক্ষকের, অথচ নিয়োগ করা হচ্ছে উর্দুর শিক্ষক। তাই দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পড়ুয়ারা৷ স্কুল লাগোয়া রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তারা৷ উর্দুর আগ্রাসন থেকে বাঙ্গলা ভাষাকে রক্ষা করতে গিয়ে দুটো তরতাজা প্রাণ মায়ের কোল খালি করে বিদায় নেয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে দুই ভাষাবীর তাপস সরকার ও রাজেশ বর্মনের ছবিতে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তারপর সংস্কার ভারতীর কিশোর কিশোরীরা নিবেদন করে বাঙ্গলা ভাষার মাধুর্য্য বিষয়ক অনুপম সঙ্গীত আলেখ্য। তারপর দাড়িভিটের ঘটনা ও তার বিশ্লেষণ মূলক একটি সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। বক্তৃতামালায় সাংবাদিক শ্রী রন্তিদেব সেনগুপ্ত বঙ্গভূমি ও ভারতের ইতিহাস চর্চায় ইসলামিক ও কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণ, অবাঞ্ছিত সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের উল্লেখ করেন ও তার ক্ষতিকর প্রভাব আলোচনা করেন। বাঙ্গলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় বুদ্ধিজীবী ও সমাজপ্রমুখদের অনীহার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক ডঃ রবিরঞ্জন সেন দাড়িভিট আন্দোলনের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেন। বিভিন্ন পর্যায়ে উর্দুর আগ্রাসনের ইতিহাস তুলে ধরেন।

পরিবেশবিদ ও মানবাধিকার কর্মী ডঃ মোহিত রায় উর্দুর বেশে ইসলামীকরণকে প্রতিহত করতে সমগ্র হিন্দু সমাজের সব সংগঠনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি স্পষ্ট বলেন, পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ গুলি চালায় শুধুই হিন্দু সম্প্রদায়ের দিকে। পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্ব বজায় রাখতে ‘বাঙ্গালী’ শব্দের অর্থ সম্পর্কে সচেতন করেন। বাঙ্গলাভাষার মর্যাদা রক্ষায় একটি দাবি সনদও পেশ করা হয়।

সমগ্র অনুষ্ঠানে দর্শকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ছাত্র থেকে চাকুরিজীবী, সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। ভাষাতীর্থ দাড়িভিটের দুই ভাষাবীর রাজেশ ও তাপসের স্মৃতি সমগ্র শ্রোতার মনের মনিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছে। আগামী দিনে মাতৃভাষাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে রাজেশ তাপসের এই আত্মত্যাগ পথ দেখাবে, আশা আয়োজকদের।

সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শ্রী প্রকাশ দাশ মহাশয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.