সাফ কাপ সুনীলদের, সাডেন ডেথে কুয়েতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত, ফাইনালের নায়ক গুরপ্রীত

সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন হল ভারত। ফাইনালে কুয়েতকে হারালেন সুনীল ছেত্রীরা। মঙ্গলবারের ফাইনালের নায়ক অবশ্য ভারতের গোলরক্ষক গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু। তাঁর দক্ষতায় সাডেন ডেথে ম্যাচ জিতল ভারত। টাই ব্রেকারের প্রথম এবং সাডেন ডেথের প্রথম শট বাঁচান তিনি।

টান টান উত্তেজনায় শেষ হল সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়, তার পর টাই ব্রেকার এবং শেষে সাডেন ডেথে এল ফাইনালের ফল। ভারতের জয়ের পর গোটা স্টেডিয়াম এক সঙ্গে গলা মেলাল ‘বন্দেমাতরম’ গানে। সঙ্গে উড়ল জাতীয় পতাকা। সুনীলদের নিয়ে উচ্ছ্বাস ফেটে পড়ল কান্তিরাভা স্টেডিয়ামের গ্যালারি।

টাই ব্রেকারে ভারতের হয়ে গোল করেন সুনীল, সন্দেশ ঝিঙ্ঘন, লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে এবং শুভাশিস বোস। সাাডেন ডেথে ভারতের গোলদাতা মহেশ সিংহ। কুয়েতের প্রথম শট-ই আটকে দেন গুরপ্রীত। তাতে আরও বেশি চাঙ্গা হয়ে ওঠেন সমর্থকেরা। কিন্তু ভারতের হয়ে টাই ব্রেকারের চতুর্থ শটটি নিতে গিয়ে দলকে চাপে ফেলে দেন উদান্ত সিংহ। বারের উপর দিয়ে চলে যায় তাঁর শট। এর ফলে সমতায় ফেরার সুযোগ পায় কুয়েত। টাই ব্রেকার শেষ হয় ৪-৪ গোলে। সাডেন ডেথের প্রথম শটে মহেশ ভারতকে এগিয়ে দেওয়ার পর গুরপ্রীত কুয়েতের প্রথম শট রুখে দিয়ে দলকে চ্যাম্পিয়ন করলেন।

ফাইনালেও সুনীলদের আগ্রাসী খেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন কোচ ইগর স্তিমাচ। অথচ ভারতীয় দল শুরু করল কিছুটা মন্থর ভাবে। ১৫ মিনিটে কুয়েত গোল করার পর ধীরে ধীরে খেলায় ফেরেন সুনীলেরা। ৩৮ মিনিটে ভারত সমতায় ফেরে ছাঙতের গোলে। প্রথম গোলের সুযোগ পেয়েছিল ভারত। ম্যাচের ৪ মিনিটে সুনীলের হেড সরাসরি কুয়েতের গোলরক্ষকের হাতে যায়। এর মিনিট ২ পরেই কর্নার পায় ভারত। কিন্তু তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। শুরুতে কুয়েতের দাপটই ছিল বেশি। ১৫ মিনিটে সুপরিকল্পিত আক্রমণ থেকে গোল করেন আলখালদি। পিছিয়ে পড়ে খেলার দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন ভারতীয় ফুটবলারেরা। ১৯ মিনিটে সুনীলের শট আটকে দেন কুয়েতের গোলরক্ষক। কুয়েতের ফুটবলারেরা কিছুটা শারীরিক ফুটবল খেললেও গুটিয়ে যায়নি ভারতীয় দল। সমানে সমানে লড়াই করলেন মাঝমাঠের ফুটবলারেরা। ধীরে ধীরে মাঝমাঠের দখল নিয়ে নেয় ভারত। তবে ৩৪ মিনিটে পেশিতে টান লাগায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন আনোয়ার আলি। নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার মাঠ ছাড়ায় কিছুটা ক্ষতি হয় ভারতের। যদিও অন্য ফুটবলারেরা হাল ছাড়েননি। বরং সমতা ফেরাতে নতুন উদ্যমে লড়াই শুরু করেন বাকিরা। ৩৮ মিনিটে সাহাল সামাদ একা বল নিয়ে অনেকটা উঠে পাশ দেন সুনীলকে। তিনি আবার বল ফিরিয়ে দেন সাহালকে। তিনি বল সাজিয়ে দেন ফাঁকায় থাকা ছাঙতেকে। মঙ্গলবারই বর্ষসেরা ফুটবলার হওয়া ২৫ বছরের মণিপুরের ফুটবলার গোল করতে ভুল করেননি। ভারত সমতায় ফেরার পর কিছুটা গাজোয়ারি ফুটবল শুরু করে কুয়েত। মাঠে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রথম থেকেই কড়া হাতে ম্যাচ করেছেন রেফারি। প্রয়োজনে কার্ড দেখাতে দ্বিধা করেননি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে কুয়েতের কোচকেও হলুদ কার্ড দেখান তিনি। ১-১ ফলেই শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে দু’দলই কিছুটা সতর্ক ভাবে শুরু করে। ৪৮ মিনিটে ভারতের একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন কুয়েতের গোলরক্ষক। ৫২ মিনিটে সুনীলকে লক্ষ্য করে কুয়েতের বক্সে একটি ভাল বল বাড়ান সাহাল। কিন্তু ভারতীয় দলের অধিনায়ক বলের নাগাল পাননি। আক্রমণের ঝাঁঝ ছিল ভারতীয় দলেরই বেশি। ভারতের নাগাড়ে আক্রমণে কিছুটা চাপে পড়ে যায় কুয়েতের রক্ষণ। ৭১ মিনিটে মহেশ এবং রোহিত কুমারকে এক সঙ্গে মাঠে নামিয়ে রক্ষণ সংগঠন মজবুত করার চেষ্টা করেন ভারতের সহকারী কোচ মহেশ গাউলি। যদিও মাঠে নেমেই মাথা গরম করে হলুদ কার্ড দেখেন রোহিত। একটা সময় সুনীলকে হাতজোড় করে সতীর্থদের মাথা ঠান্ডা রাখতে অনুরোধ করতেও দেখা গেল। চড়া মেজাজে ফাইনালে দু’দলের ফুটবলারেরাই মাথা গরম করলেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশ কয়েক বার কার্ড দেখাতে হল রেফারিকে।

আক্রমণ-প্রতিআক্রমণ নির্ভর খেলা হলেও দ্বিতীয়ার্ধে গোল করতে পারেনি কোনও দলই। যদিও গোল করার মতো একাধিক পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন দু’দলের ফুটবলারেরাই। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। গোল হয়নি অতিরিক্ত সময়ের প্রথম অর্ধেও। ৯৯ মিনিটে অবশ্য সুনীলের ফ্রি-কিক থেকে বল পেয়েও সহজ সুযোগ নষ্ট করেন উদান্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.