টানা চার ম্যাচে হার চেন্নাইয়ের, ধোনি-রুতুরাজদের হারিয়ে চারে উঠে এল শ্রেয়সের পঞ্জাব

কী ভাবে জয়ে ফিরবে তা বুঝতেই পারছে না চেন্নাই সুপার কিংস। বোলারেরা ভাল খেললে ব্যাটারেরা হতাশ করছেন। আর ব্যাটারের রান করলে তা বাঁচাতে পারছেন না বোলারেরা। আরও একটি ম্যাচ হারল তারা। চলতি আইপিএলে টানা চারটি ম্যাচ হারল চেন্নাই। মঙ্গলবার চণ্ডীগড়ের মাঠে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের চেন্নাইকে ১৮ রানে হারিয়ে জয়ে ফিরল পঞ্জাব কিংস। শেষ দিকে ঝোড়ো ইনিংস খেললেও দলকে জেতাতে পারলেন না ধোনি।

টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পঞ্জাবের অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ার। খলিল আহমেদের প্রথম বলেই পয়েন্টের উপর দিয়ে ছক্কা মারেন প্রিয়াংশ। শুরুতেই তিনি বুঝিয়ে দেন, এই ম্যাচে তাঁর ব্যাটকে চুপ করিয়ে রাখা কঠিন। প্রিয়াংশকে ভাল দেখালেও বাকি ব্যাটারেরা সমস্যায় পড়েন। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই প্রভসিমরন সিংহকে শূন্য রানে ফেরান মুকেশ চৌধরি। তিন নম্বরে নেমে শ্রেয়স একটি ছক্কা মারলেও বড় রান করতে পারেননি। খলিলের বলে ৯ রানের মাথায় বোল্ড হন তিনি। পঞ্জাবের মিডল অর্ডারও এই ম্যাচে ব্যর্থ। মার্কাস স্টোইনিস ৪, নেহাল ওয়াধেরা ৯ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ১ রান করেন। ৮৩ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায় পঞ্জাবের।

দেখে মনে হচ্ছিল, ১৫০ রান করতেও সমস্যায় পড়বে পঞ্জাব। কিন্তু প্রিয়াংশের ব্যাট থামেনি। একের পর এক বড় শট মারেন তিনি। পেসার থেকে শুরু করে স্পিনার, কাউকে রেয়াত করেননি তিনি। প্রিয়াংশের সঙ্গে জুটি বাঁধেন শশাঙ্ক সিংহ। অর্ধেক দল সাজঘরে ফিরে গেলেও রান তোলার গতি কমেনি পঞ্জাবের।

উইকেট নিতে মাথিশা পাথিরানার হাতে বল তুলে দেন রুতুরাজ। প্রথম ওভারে ২৩ রান দেন তিনি। তার মধ্যে ২২ রান আসে প্রিয়াংশের ব্যাট থেকে। মাত্র ৩৯ বলে শতরান করেন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে আইপিএলে দ্রুততম শতরান করলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত ৪২ বলে ১০৩ রান করে নুর আহমেদের বলে আউট হন প্রিয়াংশ। সাতটি চার ও ন’টি ছক্কা মারেন তিনি।

প্রিয়াংশ ফেরার পর পঞ্জাবের রান টেনে নিয়ে যান শশাঙ্ক ও মার্কো জানসেন। গত বারের ফর্মেই এ বার রয়েছেন শশাঙ্ক। আরও একটি অর্ধশতরান করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২১৯ রান করে পঞ্জাব। শশাঙ্ক ৫২ ও জানসেন ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন

২২০ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা খারাপ করেনি চেন্নাই। দলের দুই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র ও ডেভন কনওয়ে পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে রান করছিলেন। রাচিনকে বেশি আগ্রাসী দেখাচ্ছিল। বুদ্ধি করে খেলছিলেন তাঁরা। প্রায় প্রতি ওভারে বাউন্ডারি আসছিল। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরেই পঞ্জাবকে খেলায় ফেরান ম্যাক্সওয়েল। ৩৬ রানের মাথায় ক্রিজ় ছেড়ে বেরিয়ে বড় শট মারতে গিয়ে স্টাম্প আউট হন রাচিন। অধিনায়ক রুতুরাজ এই ম্যাচে ব্যর্থ। মাত্র ১ রান করে লকি ফার্গুসনের বলে আউট হন তিনি।

কনওয়ে চলতি মরসুমে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলছেন। আগের ম্যাচে রান না পেলেও এই ম্যাচে ভাল খেললেন তিনি। তাঁকে সঙ্গ দেন চার নম্বরে নামা শিবম দুবে। গত বার মিডল অর্ডারে চেন্নাইয়ের হয়ে যে ভূমিকায় তাঁকে দেখা যেত, এই ম্যাচে সেটা করলেন শিবম। জরুরি রানরেট বাড়লেও হাল ছাড়েননি তাঁরা। কনওয়ে অর্ধশতরান করেন।

চেন্নাইয়ের জয়ের জন্য দরকার ছিল এই জুটির ক্রিজ়ে থাকা। কিন্তু সেটাই হল না। ফার্গুসনের বলে ৪২ রান করে বোল্ড হলেন শিবম। তিনি আউট হওয়ার পরে নামেন ধোনি। শেষ চার ওভারে জিততে দরকার ছিল ৬৭ রান। অর্থাৎ, প্রতি ওভারে ১৭ রান করে দরকার ছিল। ব্যাটে রান না পেলেও এই ম্যাচে অধিনায়কত্ব ভাল করলেন শ্রেয়স। যত ক্ষণ শিবম ছিলেন তত ক্ষণ যুজবেন্দ্র চহলকে বল দেননি তিনি। শিবম আউট হতেই তাঁকে দিয়ে বল করালেন।

শেষ তিন ওভারে জিততে দরকার ছিল ৫৯ রান। বলের গতির হেরফের করছিলেন পেসারেরা। পাশাপাশি ভাল ফিল্ডিংও করে পঞ্জাব। কয়েকটি চার বাঁচান ফিল্ডারেরা। সিঙ্গল, ডাবলসে কোনও সমস্যা হচ্ছিল না পঞ্জাবের। ধীরে ধীরে জয় থেকে দূরে সরছিল চেন্নাই। ১৩ বল বাকি থাকতে রিটায়ার্ড আউট হন কনওয়ে। ৪৯ বলে ৬৯ রান করে মাঠ ছাড়েন তিনি। তাঁর বদলে নামেন রবীন্দ্র জাডেজা। মুম্বইয়ের তিলক বর্মার পর এ বার চেন্নাইয়েরও এক ব্যাটার রিটায়ার্ড আউট হলেন। তবে সেই সিদ্ধান্ত কাজে লাগল না। দলকে জেতাতে পারলেন না জাডেজা।

প্রথম কয়েকটি বল ব্যাটে-বলে না হলেও ফার্গুসনের ওভারের শেষ দু’টি বলে জোড়া ছক্কা মারেন ধোনি। তাতে আশা বাড়ে চেন্নাইয়ের। শেষ ১২ বলে দরকার ছিল ৪৩ রান। ধোনি লড়াই ছাড়েননি। ১৯তম ওভারে অর্শদীপ সিংহের বলে আরও একটি চার ও একটি ছক্কা মারেন তিনি। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৮ রান। যশ ঠাকুরের প্রথম বলে চহলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ধোনি। ১২ বলে ২৭ রান করেন তিনি। ধোনি আউট হতেই চেন্নাইয়ের জয়ের আশা শেষ হয়ে যায়। ২০১ রানে থেমে যায় চেন্নাইয়ের ইনিংস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.