প্রতারক, বিশ্বাসঘাতক তকমা দিয়ে ফিফাকে একেবারে আদালতে নিয়ে গেল জার্মানি

বিশ্বকাপের আয়োজক কাতারকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে নতুন সমস্যায় ফিফা। ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চলেছে জার্মানি। ফিফা বিশ্বকাপে ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী নিষিদ্ধ করায় ক্ষুব্ধ তারা। নাম না করে ফিফাকে প্রতারক বলেছে জার্মানি।

কাতার প্রশাসনের বৈষম্যমূলক আইনের প্রতিবাদে ইউরোপের সাতটি দেশের অধিনায়কেরা ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী পরে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফিফা কড়া নির্দেশিকা জারি করে এবং উয়েফার উপর চাপ তৈরি করায় সুর নরম করতে বাধ্য হয়েছে দেশগুলি। সেই সাত দেশের অন্যতম জার্মানি ফিফার এই আচরণ মেনে নিতে পারছে না। জাপানের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর আগেই ফিফার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানাল জার্মানির ফুটবল সংস্থা। ক্ষোভপ্রকাশ করে সংস্থার এক কর্তা বলেছেন, ‘‘আমাদের একটা চরম পরিস্থিতির মধ্যে ফেলা হয়েছিল। এক রকম ব্ল্যাকমেল করা হয়েছে। ওরাই আমাদের এই পথে যেতে বাধ্য করেছে।’’

আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে ফিফার বিরুদ্ধে মামলা করার কথা জানিয়েছে জার্মান ফুটবল সংস্থা। শাস্তি এড়াতে জার্মানির অধিনায়ক ম্যানুয়াল ন্যয়ার বুধবার জাপান ম্যাচে ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী না পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও জার্মানির ফুটবল সংস্থা এত সহজে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছে না। ক্রীড়া আদালত থেকে ফিফার নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ আনতে চায় তারা। রবিবার স্পেনের বিরুদ্ধে ন্যয়ার যাতে ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী পরেই মাঠে নামতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে চাইছে জার্মানির ফুটবল নিয়ামক সংস্থা। বুধবারই ফিফার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লুসানের আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতের আবেদন জানিয়েছে জার্মানি। পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শুনানির আবেদন করা হয়েছে।

জার্মানির ফুটবল সংস্থার কর্তা স্টিফেন সিমোন বলেছেন, ‘‘প্রতিযোগিতার ডিরেক্টর ইংল্যান্ড শিবিরে গিয়ে এক রকম হুঁশিয়ারি দিয়ে এসেছেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের নানা অভিযোগ তোলা হবে বলে জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য আমাদের যুক্তিগ্রাহ্য মনে হয়নি। আমরাই প্রথম ‘ওয়ান লব’ বাহুবন্ধনী পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে ইংল্যান্ড-সহ ছ’টি দেশকে পাশে পেয়েছি।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমরা প্রাথমিক ভাবে ‘ওয়ান লাভ’ বাহুবন্ধনী না পরার সিদ্ধান্ত নিলেও এটাই চূড়ান্ত নয়। বিষয়টা আমাদের কাছে খুবই দুঃখের। আমরা মানুষগুলো একই আছি। আমাদের মূল্যবোধের কোনও পরিবর্তন হয়নি। আমরা ওই ধরনের প্রতারক নই, যারা প্রথমে নিজেদের মূল্যবোধের দাবি করেও পরে অবস্থান বদলে ফেলে। আমরা বিশ্বাসঘাতক নই।’’

কেন আইনি পথে হাঁটছে জার্মানি? এর পিছনেও রয়েছে অর্থনৈতিক কারণ। ফিফার নির্দেশ জানার পর জার্মানির একটি বহুজাতিক সংস্থা ফুটবল দলকে আর স্পনসর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সংস্থার অন্যতম এক শীর্ষ কর্তা বলেছেন, ‘‘আমরা বৈচিত্রের সমর্থক। ফুটবল হল সেই বৈচিত্র। ফিফার এই জঘন্য আচরণ আমাদের সংস্থা এবং সংস্থার কর্ণধারের ভাবমূর্তির পরিপন্থী। এক জন ফুটবলপ্রেমী হিসাবেও ফিফার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমরা এই বিশ্বকাপের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাই না।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.