kalipuja 2023: গভীর রাতে পুজোর সময়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েন মা কালী…

রাতের অন্ধকারে পুনর্ভবা নদী পেরিয়ে  একদল ডাকাত জঙ্গলে ঘেরা মানিকোড়ায় এই জাগ্রত কালীর কাছে পুজো দিতে আসত। সূর্য ওঠার আগেই পুজো দিয়ে আবার নিজেদের ডেরায় ফিরে যেত তারা। প্রায় ৩০০ বছর আগেকার ঘটনা। একদা ডাকাতদের হাতে পূজিতা এই কালী এখন মানিকোড়া কালী নামে পরিচিত। এলাকার পুরনো মানুষজনের মুখে মুখে এখনও শোনা যায় মায়ের কাছে ডাকাতদের পুজো দিতে আসার হাড়হিম করা কাহিনি। 

সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে এই পুজোয় অবশ্য ঘটেছে নানা পটপরিবর্তন। আজ থেকে শখানেক বছর আগে স্থানীয় এক জমিদার জঙ্গলে ঘেরা এই পরিত্যক্ত পুজোর বেদি খুঁজে পেয়েছিলেন। সেটা ব্রিটিশ আমল। তার পর থেকে বংশপরম্পরায় জমিদারদের উদ্যোগেই এই পুজো হয়ে আসছিল। তারপর একসময় জমিদারি প্রথা উঠে গেল। জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ার পরে গ্রামবাসীদের উদ্যোগেই মালদার হবিবপুর থানার জাজইল গ্রাম পঞ্চায়েতের মানিকোড়া এলাকার এই কালীপুজো হয়ে আসছে। 

এই পুজো কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক সজলকুমার রায় বলেন, এই পুজো নিয়ে অনেক গল্পকথা রয়েছে। পুনর্ভবা নদীর ওপারে বর্তমান বাংলাদেশ থেকে রাতের অন্ধকারে ডাকাতদল এই কালীর পুজো দিতে আসত। এক সময়ে ডাকাতদলের আনাগোনা বন্ধ হয়। তারপর স্থানীয় জমিদার জঙ্গল আবৃত এই পুজোর স্থানটি খুঁজে পেয়ে মায়ের পুজো শুরু করেন। তবে, জমিদারি-পর্ব শেষ হলে গ্রামবাসীরাই এই পুজোর উদ্যোগ নেন। সাত দিন ধরে চলে মেলা। আগে মোষ বলি হত। এখন আর মোষ বলি হয় না। তবে রাতভর চলে পাঁঠাবলি। 

কথিত আছে, কোনও এক সময় গ্রামে শাঁখা ফেরি করতে এসেছিলেন এক শাঁখারি। গ্রামের পথে এক মেয়ে তাঁর কাছে শাঁখা পরতে চাইল। শাঁখারি তাঁর হাতে শাঁখা পরিয়ে দিয়ে মেয়েটির কাছে দাম চাইলেন। তিনি দাম চাইতেই ওই মেয়েটি জানায়, তাঁর কাছে পয়সা নেই, শাঁখার দাম দেবে তাঁর বাবা। কালীমন্দিরের সেবায়েতকে তাঁর বাবা বলে সম্বোধন করেন। শাঁখারি কালীমন্দিরে গিয়ে সেবায়েতের কাছে শাঁখার দাম চাইতেই অবাক হয়ে যান ওই সেবায়েত। তিনি বলেন, তাঁর তো কোনও মেয়ে নেই! কে তবে শাঁখা পরেছে? হঠাৎ তাঁর নজর যায় পাশের পুকুরের দিকে। তিনি দেখতে পান, জলের উপরে একটি মেয়ে দুহাত উঁচু করে রয়েছে। দুটি হাতে রয়েছে একজোড়া নতুন শাঁখা। মুহূর্তে সেবায়েত বুঝে যান, ওই মেয়ে আর কেউ নন, স্বয়ং মা কালী। মুহূর্তের মধ্যেই শাঁখার দাম মিটিয়ে দেন তিনি।

লোকমুখে শোনা যায়, পুজোর গভীর রাতে চক্ষুদানের পুজো ও সেই পুজোর বিধিবদ্ধ পাঁঠাবলির সময়ে মা কালীর মূর্তি কেঁপে ওঠে ও মা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। যাতে মূর্তিটি না নড়ে যায় ,তাই আগে দেবী মূর্তিটিকে লোহার শিকলে বেঁধে রাখার চল ছিল। এখন চক্ষুদান ও পাঁঠাবলির সময় দেবীর মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মৃন্ময় রায় জানিয়েছেন, দেবীমাহাত্ম্যের নানা কাহিনি এখনও মানুষের মুখে-মুখে ফেরে। পুরনো রীতি মেনে এখনও মশাল জ্বালিয়ে মায়ের পুজো করা হয়। পুজোর দিন গোটা এলাকার মানুষ নিরামিষ খেয়ে থাকেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং ভিন রাজ্য থেকেও ভক্তরা পূজা দিতে আসেন এই মন্দিরে এবং মানত করেন। গ্রামের যেকোনো শুভ অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে এখনও আগে মায়ের পুজো দেওয়াই রীতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.