নব ভারত নির্মাণে বিশ্বভারতীর ভূমিকা অপরিসীম : প্রধানমন্ত্রী

নতুন ভারত নির্মাণে বিশ্বভারতীর ভূমিকা অপরিসীম। দেশের একতার প্রতীক হল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, আত্মনির্ভর ভারতের ভাবনাও বিশ্বভারতীতে শামিল। এই অভিযান ভারতকে শক্তিশালী করার অভিযান। আত্মনির্ভর ভারতের এই ভাবনা শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বকে দিশা দেখিয়েছে। এদিন বেলা এগারোটা নাগাদ বিশ্বভারতীর শতবর্ষের অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল বক্তৃতা রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরও। বিশ্বভারতীর শতবর্ষের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বভারতীর শতবর্ষ হওয়া প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে অত্যন্ত গর্বের। এই দিনে এই তপোভূমির পুণ্য স্মরণ করার সুযোগ পেয়ে আমি সত্যি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। নব ভারত নির্মাণে বিশ্বভারতীর ভূমিকা অপরিসীম। কবিগুরুর এই প্রতিষ্ঠান দেশকে শক্তি যুগিয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে মিলে অধ্যন ও জীবনচর্যার শিক্ষা দিয়েছে বিশ্বভারতী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বহু পণ্ডিত দেশের উন্নয়নে সাহায্য করেছেন। ভক্তি আন্দোলনের পথিক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ভক্তির পথেই বহু মণীষী দেশের গর্ব বাড়িয়েছেন। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের চর্চা না করলে এই ভক্তি আন্দোলনের প্রকৃত রূপ বোঝানো যাবে না। তিনি বিবেকানন্দের মতো শিষ্য পেয়েছিলেন। কয়েকশো বছর ধরে চলেছে এই ভক্তি আন্দোলন। এই আন্দোলনে প্রভাবতি হয়ে হাজার হাজার মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে শামিল হয়েছেন। জ্ঞানের এই আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ এক নয়া দিশা দিয়েছেন। বিশ্বভারতীকে তিনি যে স্বরূপ দিয়েছিলেন, তা জাতীয়তাবাদের এক উদাহরণ হয়ে উঠেছে। মোদীর কথায়, বিশ্বভারতী সব ধর্মকে সম্মান করে। ভারতে যেটা সর্বশ্রেষ্ঠ, সেটা গোটা বিশ্বকে প্রেরণা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, আত্মনির্ভর ভারতের ভাবনাও এখানে শামিল। এই অভিযান ভারতকে শক্তিশালী করার অভিযান। আত্মনির্ভর ভারতের এই ভাবনা শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বকে দিশা দেখিয়েছে। গুরুদেবের ভাবনায় ছিল আত্মনির্ভরতা, আমাদের দেশের কৃষি, বাণিজ্য সব কিছু আত্মনির্ভর দেখতে চেয়েছিলেন।  আত্মনির্ভরতার জন্য গুরুদেব আত্নশক্তির কথা বলেছিলেন। তাঁর সেই ভাবনা আজও সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। ক্ষুদিরাম বসুর মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ক্ষুদিরাম বসুর কথা ভাবুন, ১৮ বছর বয়সে বলিদান দিয়েছিলেন। প্রতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রাণ দিয়েছিলেন অল্প বয়সেই। ইতিহাসে এমন আরও অনেকের নাম হয়তো লেখাই নেই। আমাদের নতুন লক্ষ্য তৈরি করতে হবে, সেই যাত্রায় আমাদের পাথেয় হবে গুরুদেবেরই ভাবনা।করোনা-পরিস্থিতি এবং পৌষমেলা না হওয়ার কথা তুলে ধরে মোদী বলেছেন, ‘এই মহামারি আমাদের শিখিয়েছে, ভোকাল ফর লোকাল। বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের বলছি, পৌষমেলায় আগত শিল্পীদের সন্ধান করুন, তাঁদের পণ্য অনলাইনে কী ভাবে বিক্রি করা সম্ভব, তা নিয়ে কাজ করুন। গুরুদেবের গান ছিল যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে। সেই গানকে পাথেয় করেই এগিয়ে চলতে হবে। পড়াশোনা ও শিক্ষার মধ্যে যে পার্থক্য, সেটা গুরুদেবের একটি বাক্যের মাধ্যমেই বোঝানো সম্ভব।’প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার মনে নেই, আমাকে কী পড়ানো হয়েছিল, কিন্তু আমার মনে আছে, যেটা আমি শিখেছিলাম। গুরুদেব বলতেন, চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত। অর্থাৎ আমরা এমন এক ব্যবস্থা তৈরি করি যাতে আমাদের জ্ঞানের কোনও সীমা না থাকে। আমাদের মাথা যেন সব সময় উঁচু থাকে। বিশ্বভারতীর ১০০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, ১০০ বছরের জ্ঞান রয়েছে।’ একটু আবেগপ্রবণ হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন গুরুদেবের কথা স্মরণ করি, নিজেকে সামলাতে পারি না। এই বিশ্বভারতী দেখিয়ে দেয়, বহু ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও আমরা এক।’ সবশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সবাই সফল হোন, এগিয়ে যান এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.