কোভ্যাক্সিন টিকা মানুষের শরীরে দুর্দান্ত কাজ করেছে, এমনটা আগেই জানিয়েছিল ভারত বায়োটেক। টিকার দুই পর্যায়ের ট্রায়াল রিপোর্ট সামনে এনে সম্প্রতি সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাস থেকে দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা দেবে কোভ্যাক্সিন টিকা। এই টিকার ডোজে তৈরি অ্যান্টিবডি টিকে থাকবে অন্তত ৬-১২ মাস। সক্রিয় থাকবে টি-কোষও। সংক্রমণজনিত জটিল রোগের আশঙ্কা থাকবে না।
ভারত বায়োটেক জানাচ্ছে, প্রথম পর্যায়ে ট্রায়ালের পরে যে স্বেচ্ছাসেবকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল তাঁদের ওপর পরীক্ষা করেই এই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। টিকার ডোজে ২৮ দিন পর থেকে অ্যান্টিবডি তৈরি শুরু হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ট্রায়াল শুরুর তিন মাস পরে দেখা গেছে স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে সক্রিয় টি-লিম্ফোসাইট কোষও।
কীভাবে কাজ করেছে কোভ্যাক্সিন টিকা?
ভারত বায়োটেক জানিয়েছে, টিকার ডোজে ‘মেমরি-বি’ কোষ তৈরি হয়েছে স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে। এই কোষের কাজ হল সংক্রামক ভাইরাসকে চিনে রাখা। ‘অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স’ (Adaptive Immune Response ) তৈরি করা। মেমরি-বি কোষ বিভাজিত হয়ে যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে তার কার্যকারিতা থাকে অনেকদিন। বিশেষত, পরবর্তীকালে যদি একই রকম সংক্রামক ভাইরাস শরীরে ঢোকে তাহলে মেমরি-বি কোষ আগে থেকেই সক্রিয় থাকায় প্রতিরোধ শক্তি জাগিয়ে তুলতে পারবে। করোনার যে কোনও প্রতিষেধকের কাজই হল এই মেমরি-বি কোষকে সক্রিয় করে তোলা। সেই সঙ্গেই যদি টি-কোষ বা টি-লিম্ফোসাইট কোষ অ্যাকটিভ হয় তাহলে সংক্রামক ভাইরাল স্ট্রেন সমেত আস্ত কোষকেই নষ্ট করে দেওয়া সম্ভব। বি-কোষ ও টি-কোষ যদি একই সঙ্গে সক্রিয় থাকে, তাহলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণে বেড়ে যায়। যে কোনও সংক্রামক ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা বলয় তৈরি হয়। কোভ্যাক্সিন টিকার ডোজে তেমনটাই হয়েছে বলে দাবি ভারত বায়োটেকের।
আইসিএমআর ও পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি) থেকে সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেন নিয়ে ল্যাবোরেটরিতে তার স্ক্রিনিং করে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট BBV152 বানিয়েছে ভারত বায়োটেক। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, করোনার ভাইরাল স্ট্রেন নিষ্ক্রিয় করে ভ্যাকসিন ক্যানডিডেট ডিজাইন করা হয়েছে। বায়োসেফটি লেভেল-৩ ল্যাবোরেটরির সুবিধা থাকায় ভারত বায়োটেকের ভাইরোলজিস্টরা সংক্রামক ভাইরাল স্ট্রেনের বিশেষ অংশ চিহ্নিত করে তাকে আলাদা করে নিয়েছেন। এরপরে সেই সংক্রামক স্ট্রেনকে বিশেষ বিজ্ঞানসম্মত উপায় পিউরিফাই করে তাকে নিষ্ক্রিয় বা ইনঅ্যাকটিভ (Inactive) করেছেন । এই নিষ্ক্রিয় ভাইরাল স্ট্রেন দুর্বল, তার সংক্রমণ ছড়ানো বা দেহকোষে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় বাড়ার ক্ষমতা নেই। কাজেই মানুষের শরীরে প্রয়োগ নিরাপদ ও সুরক্ষিত। অথচ এই ভাইরাল স্ট্রেন শরীরে ঢুকলে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করতে পারে।
কোভ্যাক্সিন টিকা প্রাণীদের শরীরে খুব ভাল কাজ করেছে বলে আগেই দাবি করেছিল ভারত বায়োটেক। রেসাস প্রজাতির বাঁদরদের (Rhesus macaques) শরীরে কোভ্যাক্সিন টিকা ইনজেক্ট করা হয়েছিল। ২০টি বাঁদরকে চারটি দলে ভাগ করে টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। একটি দলকে প্ল্যাসেবো সাপোর্টে রাখা হয়, অন্য তিনটি দলকে তিনটি ভিন্ন ডোজে ০ থেকে ১৪ দিনের ব্যবধানে টিকা দেওয়া হয়। টিকার ডোজ দেওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে ইমিউনোগ্লোবিউলিন (IG) অ্যান্ডিবডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় বাঁদরদের শরীরে।