প্যাঙ্গংয়ের পাহাড়ি এলাকা থেকে ভারতকে সেনা সরাতে বলে ফের নতুন করে ছক কষছে চিন। এমনটাই দাবি ভারতীয় সেনাবাহিনীর। এতদিন উত্তর ও দক্ষিণ প্যাঙ্গং লেকের পাহাড়ি এলাকায় গ্যাঁট হয়ে বসেছিল চিনের লাল সেনা। উঁচু পাহাড় চূড়োয় ভারতের স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স মোতায়েন থাকায় সেখানে সুবিধা করতে পারেনি। তাই পাহাড়ি উপত্যকায় যুদ্ধট্যাঙ্ক সাজিয়ে বসে গিয়েছিল। এতদিন পরে হঠাৎ সেই পাহাড়ি উপত্যকায় থেকেই সেনা সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব খুব একটা ভাল ঠেকছে না ভারতের। পার্বত্য বাহিনীকে কৌশলে সরিয়ে দিয়ে লাল সেনা নতুন করে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাতে পারে বলেই সন্দেহ সেনাবাহিনীর।
চুসুল সীমান্তে শেষবার দুই দেশের সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকে এমনই প্রস্তাব দিয়েছিলেন চিনের সেনা কম্যান্ডাররা। তাদের প্রস্তাব ছিল, সিরিজাপ রেঞ্জ থেকে সেনা সরিয়ে নিতে তারা রাজি। ভারতকেও তাদের সেনা সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এই সিরিজাপ রেঞ্জ হল আকসাই চিনের দক্ষিণের একটি পাহাড়ি উপত্যকা। প্যাঙ্গং লেকের উত্তরভাগে পড়ে। ওই এলাকা চিন দখল করে রেখেছে। যদিও ভারত দাবি সিরিজাপ রেঞ্জ ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকাতেই পড়ে। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পরে ওই রেঞ্জে তিনটি পোস্ট তৈরি করে টহলদারি শুরু করে ভারতের বাহিনী।
জুন মাসে গালওয়ানের সংঘাতের পরে উত্তর প্যাঙ্গং লেক সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকাগুলিতেও ঢুকে পড়ে চিনের লাল ফৌজ। তাদের ঠেকাতে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ পাওয়া পার্বত্য বাহিনী মোতায়েন করা হয়। উত্তর ও দক্ষিণ প্যাঙ্গং লেকের একাধিক উঁচু পাহাড়ি এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় ভারত। ফলে কালা পাহাড় সহ বেশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাহাড় চূড়া হাতছাড়া হয়ে যায় চিনের। প্যাঙ্গং লেকের পাহাড়ি খাঁজ ফিঙ্গার পয়েন্ট ১ থেকে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৮ অবধি এলাকার দখল নিতে এখন মরিয়া চিন। আর সেটা কিছুতেই হতে দেবে না ভারত। এই মুহূর্তে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ এর কাছে মুখোমুখি অস্ত্র তাক করে বসে আছে দুই দেশের বাহিনী। ফিঙ্গার পয়েন্ট ৮ এর কাছে নতুন করে সামরিক কাঠামো বানাচ্ছে চিনের সেনা। ফলে ওই এলাকায় টহল দিতে পারছে না ভারতীয় বাহিনী।
সেনার এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, চিনের কোনও প্রস্তাবই মানা হবে না। গত ৩০ বছর ধরে সবধরনের চুক্তি ভেঙে চলেছে তারা। সীমান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তিও লঙ্ঘন করেছে। লিদাখের ফিঙ্গার পয়েন্টগুলি থেকে যে মুহূর্তে ভারত তার সেনা সরাবে, সেই মুহূর্তেই আক্রমণ করবে চিন। এটাই তাদের স্ট্র্যাটেজি। ভারত খুব ভাল করে এই কৌশলের সঙ্গে পরিচিত।
গতকাল, বুধবার লাদাখে ভারতীয় সেনার প্রস্তুতি দেখতে গিয়েছিলেন সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানে। কৈলাশ রেঞ্জের রেজাং লা ও রেচিন লা তে সেনা প্রস্তুতি দেখেন তিনি। কৈলাস রেঞ্জের এই দুই এলাকা ভূকৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিন সবসময় চেষ্টা করে এই রেঞ্জগুলি নিজেদের দখলে নিয়ে নিতে। তাহলে আকসাই চিন থেকে কারাকোরাম পাস হয়ে প্যাঙ্গং লেক সংলগ্ন যে কোনও পাহাড়ি খাঁজেই তাদের অনুপ্রবেশে সুবিধা হবে। একই সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর ওপরেও নজর রাখা যাবে।
ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, চিন যতই কৌশল করুক না কেন, ভারত তার স্ট্র্যাটেজি সাজিয়েই রেখেছে। পাহাড়ি এলাকায় আরও বেশি সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের ১০ হাজার জওয়ানকে পাঠানো হয়েছে। এখন সীমান্তে ভারতীয় সেনার সংখ্যা ৯০ হাজার। আইটিবিপির ফোর্স মোতায়েন হলে সংখ্যা লাখে পৌঁছবে। ভারতের যুদ্ধট্যাঙ্ক ও একাধিক মিসাইল তৈরি আছে লাদাখে। আকাশে চক্কর কেটে সর্বক্ষণ নজর রাখছে বায়ুসেনার কমব্যাট এয়ারক্রাফ্ট। কাজেই কোনওদিক দিয়েই সুবিধা করতে পারবে না চিন।