রাষ্ট্রপুঞ্জে মাসুদের অডিও পেশ ভারতের, তাকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে ঘোষণা করার দাবি আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সের

রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সামনে জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারের অডিও রেকর্ডিংয়ের একটি ক্লিপ পেশ করল ভারত। মাসুদের সন্ত্রাসী মানসিকতার পরিচয় রয়েছে ওই অডিও ক্লিপে। এর পরে মঙ্গলবারই আমেরিকার তরফে জানানো হয়, মাসুদ আজহার আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে সব রকম বৈশিষ্ট্য পালন করছে। উগ্র ও সন্ত্রাসবাদ ছড়াচ্ছে। তাকে আন্তর্জাতিক জঙ্গির তকমা দেওয়া হোক।

ভারতের পেশ করা ওই অডিও ক্লিপে রয়েছ, জইশ প্রধান মাসুদ আজহার ভারতের বিরুদ্ধে কী ভাবে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে এবং উগ্র সন্ত্রাসবাদে উস্কানি দিয়ে চলেছে। পেশ করা দু’টি অডিওই জইশ প্রধানের নিজের গলায় রেকর্ড করা। শেষতম অডিওটি জইশ প্রকাশ করে, ভারতীয় বায়ুসেনার বালাকোট হামলার পরে। যেখানে মাসুদ তার নিজের মৃত্যু নিয়ে জল্পনা উড়িয়ে দেয়।

পাকিস্তানের সরকারি সূত্রে খবর, জইশ প্রধান পাকিস্তানের হাসপাতালে চিকিত্‍‌সাধীন। তার দু’টি কিডনিই বিকল। ডায়ালিসিস চলছে। যদিও পাকসেনা মাসুদের উপস্থিতি নস্যাত্‍‌ করে জানায়, জইশ প্রধান পাকিস্তানে নেই। সরকারি দাবি উড়িয়ে পাকিস্তানের মাটিতে জইশের উপস্থিতির কথাও অস্বীকার করে পাকসেনা। যদিও তার পরে আরও একটি অডিও প্রকাশ করে পাকসেনার দাবিকে ভুল প্রমাণ করে জইশ নিজেই।

তবে, পাকসেনা স্বীকার না করলেও, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে সম্প্রতি জইশের ৪০ জনকে আটকের কথা জানায় ইসলামাবাদ। তার মধ্য়ে মাসুদের ভাই ও ছেলেও রয়েছে।

গত মাসের ১৪ তারিখে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় শহিদ হন ৪৪ জন সেনা। ঘটনার পরেই দায় স্বীকার করে জইশ ই মহম্মদ। এর ১২ দিন পরে, ২৬ তারিখ ভোর রাতে পাক অধিকৃত বালাকাটে এয়ারস্ট্রাইক চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার খবর আসে।

কেবল পুলওয়ামা নয়, জইশ এর আগেও একাধিক হামলা করেছে ভারতে। সন্ত্রাসের রাজত্বে মাসুদ চেনা নাম। মাস খানেক আগের পুলওয়ামা হোক বা পাঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটিতে হামলা হোক, বা উরির সেনাশিবিরে হামলাই হোক– ভারতের বুকে ঘটে যাওয়া একাধিক জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড এই মাসুদ। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে তার সংগঠনের জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেই বোমা ফেলেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। তাকে অনেক দিন ধরেই গ্লোবাল টেররিস্ট তকমা দেওয়ার দাবি করছে ভারত। এর পরেই পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপড়েন তুঙ্গে ওঠে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি বলে ঘোষণা করার পক্ষে ভোট দেয় আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স। যদিও এর আগে এই চেষ্টা রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে আগেও করেছিল এই তিন দেশ, কিন্তু প্রতিবারই বাধা দেয় চিন।

নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো দিতে সক্ষম পাঁচটি রাষ্ট্রের মধ্যে একটি হল চিন। বারবার সেই ভেটো-পাওয়ার কাজে লাগিয়েই তারা মাসুদকে রক্ষা করে চলেছে। যদিও মাসুদের ব্যাপারে রাষ্ট্রপুঞ্জ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই ট্রাম্প প্রশাসন মঙ্গলবার নিজেদের মনোভাব স্পষ্ট করেছে। মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র রবার্ট প্যালানডিও বলেন, “জইশ প্রধান মাসুদকে গ্লোবাল টেররিস্ট তকমা দেওয়া উচিত। সেটা না দিলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।”

আদতে শেষ তিন বছর ধরেই চিনের আপত্তিতে পুলওয়ামা-সহ ভারতে ঘটে যাওয়া একাধিক জঙ্গি হানার চক্রী মৌলানা মাসুদ আজাহারকে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ঘোষিত জঙ্গির তকমা দেওয়া যাচ্ছে না। পুলওয়ামায় এত বড় হামলার পরেও নিহত জওয়ানদের পরিবারের প্রতি কেবল গভীর সমবেদনা জানিয়েছিল চিন। কিন্তু জইশ দায় স্বীকার করার পরেও, সে বিষয়ে কিছুই বলেনি।

সাম্প্রতিক ঘটনার পরে এবং অডিও ক্লিপ প্রকাশের পরে ওই তিন দেশের আশা, এর পরে চিন হয়তো আজহারের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করায় বাধা দেবে না। মঙ্গলবার আমেরিকার ট্রাম্প সরকার এ বিষয়ে তাদের স্পষ্ট মত জানিয়ে দিয়েছে। জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবেই যথেষ্ট অপরাধের ইতিহাস রয়েছে মাসুদ আজহারের।

এর পরে মাসুদ আজহারকে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণা করা হবে কি না, তা আজই জানাবে রাষ্ট্রপুঞ্জ। আমেরিকা ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের আবেদনের ভিত্তিতেই মাসুদকে নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পর্ষদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.