সুরক্ষা বলয় মজবুত করতে কী ব্য়বস্থা নিচ্ছে হোয়াটস্অ্যাপ, জবাব চাইল ভারত। সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এই মেসেজিং অ্যাপের সুরক্ষা কবচে ফাটল ধরিয়েছে ইসরায়েলি সংস্থা ‘এনএসও’ (NSO), , আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় যারা পরিচিত ‘সাইবার অস্ত্রের ডিলার’ হিসেবে। হ্যাকারদের নিশানায় রয়েছে ভারতের একাধিক নেতা-মন্ত্রী, সাংবাদিক, আইনজীবী, সমাজকর্মীদের মতো বিশেষ কিছু পেশার মানুষজন। মনে করা হচ্ছে, ‘ভয়েস কলিং’ ফিচার ব্যবহার করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির মোবাইল সেটে নজরদারি সফটওয়্যার ইনস্টল করে দিচ্ছে হ্যাকাররা। ফলে গোপন ও ব্যক্তিগত তথ্য নিমেষে চলে যাচ্ছে বিদেশি সংস্থার হাতে।
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ টুইট করে বলেছেন, “ভারতীয়দের হোয়াটস্অ্যাপের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেটা আগামী তিন দিনের মধ্যে জানাতে হবে কর্তৃপক্ষকে। এই ম্যালওয়ারকে নষ্ট করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিক হোয়াটসঅ্যাপ। ” ভারত সরকার এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, ভারতের সাইবার বিশেষজ্ঞদের কাছে উন্নতমানের প্রটোকল রয়েছে। রাজ্য ও কেন্দ্রের নেতা-মন্ত্রী ও বিশেষ ব্যক্তিদের সুরক্ষা দেওয়াটা আমাদের কর্তব্য।
কীভাবে হোয়াটস্অ্যাপের সুরক্ষা বলয় ভাঙছে ইজরায়েলের ওই সংস্থা সেটা এখনও স্পষ্ট নয় সাইবার বিশেষজ্ঞদের কাছে। তবে মনে করা হচ্ছে, হোয়াটস্অ্যাপের ‘ভয়েস কলিং’ ফিচার ব্যবহার করে সুরক্ষার বাঁধুনী ভেঙে চলেছে হ্যাকাররা। কোনও একটি নির্দিষ্ট মোবাইল সেটে ‘ভয়েস কল’ করে ওই নজরদারি সফটওয়্যার ‘ইনস্টল’ করে দিচ্ছে হ্যাকাররা। ফলে ওই নির্দিষ্ট মোবাইল সেট থেকে যাবতীয় গোপন ও ব্যক্তিগত তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে হ্যাকারদের কাছে।
হোয়াটস্অ্যাপের এক মুখপাত্র বলেছেন, “ভারতের সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা মূল নিশানা। তা ছাড়াও রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মীরাও রয়েছেন। অন্তত ১৪০০ জন ইতিমধ্যেই আক্রান্ত। গোপনে তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে নিচ্ছে হ্যাকারদের সফটওয়্যার। এখনও অবধি আক্রান্তদের নাম ও মোবাইল নম্বর আমরা জানতে পারিনি। তবে খুব দ্রুত হোয়াটস্অ্যাপের সুরক্ষা কবচ মজবুত করার চেষ্টা চলছে।”
হোয়াটস্অ্যাপের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামলার ধরন দেখে এটা নিশ্চিত, আড়ি পাতার সফটওয়্যারটি তৈরি করেছে ইজ়রায়েলের সাইবার সুরক্ষা সংস্থা ‘এনএসও গ্রুপ’ এবং ‘কিউ সাইবার টেকনোলজি।’ সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই সংস্থাই একসময় বানিয়েছিল কুখ্যাত ‘পেগাসাস’ সফটওয়্যার, যা যে কোনও মোবাইলে আড়ি পাততে সক্ষম। নির্দিষ্ট মোবাইল সেটে একবার জমিয়ে বসতে পারলেই এই সফটওয়্যার সেই ব্যক্তির অবস্থান, তার যাবতীয় জরুরি ও ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে নিতে পারে নিমেষের মধ্যে। পেগাসাসের বৈষিষ্ট্য হল এরা গ্রাহককে ‘exploit link’-এ ক্লিক করতে বাধ্য করে। একবার এই লিঙ্কে ক্লিক করলে সেই গ্রাহকের মোবাইলের সুরক্ষা কবচ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। ছবি, অডিও-ভিডিও, লোকেশন তো বটেই গোপনীয় পাসওয়ার্ডও হাতে এসে যায় হ্যাকারদের।
এর আগে অ্যাপলের দুর্ভেদ্য সুরক্ষা বলয়ও ভেঙে ফেলেছিল ইজরায়েলি সাইবার হ্যাকারদের এই গোপন সংস্থা।
বিভিন্ন দেশকে গোপনে ‘সাইবার অস্ত্র’ সরবরাহ করার অভিযোগও আছে এনএসও-র বিরুদ্ধে। এই সাইবার অস্ত্রের মাধ্যমে কোনও শত্রু দেশের সমস্ত পরিকাঠামো ধ্বংস করে দিতে পারে ইজরায়েলের এই সাইবার হ্যাকাররা। বিভিন্ন সময় তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে অ্যামনেস্টি সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাও। আন্তর্জাতিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, এই দলের পিছনে রয়েছে ইজরায়েলি সেনার হাত। কয়েক বছর আগে ‘স্টাক্সনেট’ ভাইরাস দিয়ে সাইবার হামলা চালিয়ে ইরানের পরিকাঠামো ধ্বংস করতে অনেকটাই সফল হয়েছিল তারা।