ঘুমিয়ে পড়ায় সিগন্যাল দেখতে পাননি! ওন্দার রেল দুর্ঘটনায় চালক-সহ চার জন সাসপেন্ড

বাঁকুড়ার ওন্দায় রেল দুর্ঘটনার তদন্তে নেমে দুর্ঘটনাগ্রস্ত মালগাড়ির চালক ও সহকারী চালক-সহ চার জনকে সাসপেন্ড করলেন রেল কর্তৃপক্ষ। রবিবার ভোরে বাঁকুড়ার ওন্দাগ্রাম স্টেশনে ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনার পরপরই তদন্ত শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। তদন্তে উঠে আসে, চলন্ত মালগাড়ির চালক ও সহকারী চালক সিগন্যাল ‘ওভার স্যুট’ (সিগন্যাল অমান্য করা) করে গতি নিয়ন্ত্রণ না করায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। রবিবারই দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) মণীশ কুমার বলেন, ‘‘চালকের ভুলের কারণেই এই দুর্ঘটনা। মনে হচ্ছে, ওঁর চোখ লেগে এসেছিল। ভোর ৪টের সময় মাঝেমাঝে ঘুম এসে যায়। তাই চালক সিগন্যাল দেখতে পাননি। সিগন্যাল লাল ছিল। পয়েন্ট লুপ লাইনের দিকে সেট করা ছিল। সেখানে অন্য মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। পিছন থেকে সেই মালগাড়িটিতে ধাক্কা মারেন চালক।’’

রবিবার ভোর ৪টে নাগাদ ওন্দাগ্রাম স্টেশনের কাছে লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালগাড়ির পিছন দিক থেকে সজোরে ধাক্কা মারে অন্য একটি মালগাড়ি। ঘটনায় চলন্ত মালগাড়ির ইঞ্জিন-সহ বেশ কয়েকটি বগি বেলাইন হয়ে ছিটকে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দু’টি মালগাড়ির মোট ১৩টি বগি। ঘটনার জেরে রবিবার আদ্রা-খড়গপুর শাখার মোট ২২টি ট্রেন বাতিল করতে বাধ্য হন রেল কর্তৃপক্ষ। দূরপাল্লার ট্রেনগুলিকে অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকদের দিয়ে শুরু হয় তদন্তও। তাতেই জানা যায়, লুপ লাইনে একটি মালগাড়ি আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও ডাউন লাইনের পয়েন্ট লুপ লাইনের দিকে করা ছিল। পয়েন্টের ঠিক আগে লাল ছিল একটি সিগন্যাল। সিগন্যাল যথাযথ ভাবে অনুসরণ করলে ডাউন লাইন থেকে লুপ লাইনে প্রবেশের আগেই চলন্ত মালগাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করে থামাতে হত। কিন্তু সেই সিগন্যাল ‘ওভার স্যুট’ (সিগন্যাল অমান্য) করে চলন্ত মালগাড়িটি একই গতিতেই লুপ লাইনে ঢুকে পড়ে। যার জেরেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

রেল সূত্রে খবর এই দুর্ঘটনার জেরে রেলের ১০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়। রবিবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাস্থলে যান দক্ষিণ পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অর্চনা জোশী। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পাশাপাশি রেলের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। এর পরেই চলন্ত মালগাড়ির চালক, সহকারী চালক-সহ মোট চার জনকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

রবিবার ভোরে দুর্ঘটনার পরেই লুপ লাইন থেকে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া রেল ইঞ্জিন ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা বগিগুলি সরানোর কাজ শুরু করে রেল। দুপুরের দিকে আপ লাইনে ও সন্ধ্যার মুখে ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচলও শুরু হয়। দুর্ঘটনায় লুপ লাইন ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রবিবার দুপুরের পর থেকেই শুরু হয় ওই লাইন মেরামতির কাজ। উপড়ে যাওয়া রেল লাইন ও ভেঙে যাওয়া সিমেন্টের স্লিপার সরিয়ে নতুন করে রেললাইন পাতা হয় । দুর্ঘটনার জেরে ছিঁড়ে যাওয়া ওভারহেড তারও নতুন করে লাগানো হয়। দুর্ঘটনাস্থলে ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুতের সাবস্টেশনটিও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামত করে রেল। রাতভর কাজ চালিয়েও সোমবার দুপুর পর্যন্ত লুপ লাইনটিকে সারানো সম্ভব না হওয়ায় ওই লাইনে আপাতত ট্রেন চলাচল বন্ধই রেখেছেন রেল কর্তৃপক্ষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.