৬ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ৫৩ মিনিটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ইসরোর ডাকে আর সাড়া দেয়নি চন্দ্রযানের ল্যান্ডার ‘বিক্রম।’ কেটে গেছে ১৩ দিন। বিক্রমের খোঁজ নেই। মুখ বন্ধ ইসরোরও। চাঁদের কক্ষপথে পাক খেতে থাকা চন্দ্রযানের অরবিটার ক্রমশ এগোচ্ছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ওই অংশে, যেখানে সম্ভবত ‘হার্ড ল্যান্ড’ বা ‘ক্র্যাশ ল্যান্ড’ করেছে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। হাল ছাড়েনি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসাও। চন্দ্রযানের অরবিটারের আগেই নাসার লুনার অরবিটার Lunar Reconnaissance Orbiter (LRO) পৌঁছে গেছে দক্ষিণ মেরুর উপর। কী ধরা পড়েছে অরবিটারের অপটিক্যাল ইমেজে?
গত ১০ বছর ধরে চাঁদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে নাসার লুনার অরবিটার এলআরও। গত মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উপর দিয়ে পাক খেয়েছে সে।
দক্ষিণ পৃষ্ঠের একাধিক ছবিও তুলে পাঠিয়েছে গ্রাউন্ড স্টেশনে। এলআরও ডেপুটি প্রজেক্ট হেড জন কেলার জানিয়েছেন, দক্ষিণ মেরুর এক অংশ ছায়ায় ঢেকেছে। তাই চন্দ্রযানের ‘বিক্রম’ যদি সেখানে ল্যান্ড করে থাকে, তাহলে তার সঠিক অবস্থান বার করা এই মুহূর্তে অসম্ভব। একটা সম্ভাবনাও প্রবল হচ্ছে। সেটা হলো, অপটিক্যাল ইমেজে দক্ষিণ মেরুর কিছু জায়গায় স্পট দেখা গেছে। সেটা চাঁদের পিঠের ছায়ার জন্য। হতে পারে সেই ছায়াতেই লুকিয়ে ল্যান্ডার ‘বিক্রম?’
নাসার প্ল্যানেটারি সায়েন্স ডিভিসনের অফিসার জোসুয়া এ হ্যান্ডেল অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘এলআরও মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। এখনও অবধি চন্দ্রযানের ল্যান্ডারের খোঁজ মেলেনি। লুনার অরবিটারের সমস্ত ইমেজের চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। তবে ক্যামেরার ফিল্ড ভিউ তেমন কিছু জানাতে পারেনি।’’

বিক্রমের অবস্থা যাই হোক না কেন, ভারতের চন্দ্রযাত্রা যে বিফল হয়নি সে কথা আগেই জানিয়েছে নাসা। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, চাঁদের দক্ষিণ মেরু অভিযান যে কোনও মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসেই একটা চ্যালেঞ্জ। ইসরো সেখানে ৯৫ শতাংশ সফল। ৫ শতাংশ ধোঁয়াশা রয়েছে শুধু ল্যান্ডারের পরিণতি নিয়ে। সেটা জানার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরো টেলিমেট্রি, ট্র্যাকিং অ্যান্ড কম্যান্ড নেটওয়ার্ক (ISTRAC) টিম। নাসা জানিয়েছে, ইসরোর পরবর্তী ঘোষণার আগেই ল্যান্ডারের কিছু সম্ভাব্য ইলাস্ট্রেশন সামনে আনতে পারে তারা। যেখানে ডায়াগ্রাম করে দেখানো হবে কী ভাবে বিক্রম হার্ড ল্যান্ড করতে পারে চাঁদের মাটিতে এবং তার জেরে বর্তমানে বিক্রমের অবস্থা ঠিক কেমন হতে পারে।

ইসরো জানিয়েছিল, অরবিটারের থার্মাল ইমেজে বিক্রমের অবস্থান সম্পর্কে একটা আন্দাজ পাওয়া গেছে। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। রেডিও যোগাযোগ তৈরির জন্য একটি অ্যান্টেনা বিক্রমের মাথায় বসানো ছিল উল্টানো গামলার মতো। যাতে সে কাজ করতে পারে ১৮০ ডিগ্রি ব্যাসার্ধে ঘুরে ঘুরে । অর্থাৎ অরবিটার যে প্রান্তেই থাকুক না কেন (মাথার উপরে হোক বা পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণে)তার সঙ্গে ঠিক যোগাযোগ তৈরি হয়। কোনও কারণে যদি বিক্রম ‘হার্ড ল্যান্ড’ করে থাকে, তাহলে এই অ্যান্টেনা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বেঙ্গালুরুর বিয়ালালুতে ইসরোর ৩২ মিটারের ডিপ স্পেস নেটওয়ার্ক অ্যান্টেনা থেকে ক্রমাগত সিগন্যাল পাঠানো হচ্ছে বিক্রমকে। নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবোরেটরির (JPL-Jet Propulsion Laboratory) ৭০ মিটারের অ্যান্টেনা থেকেও রেডিও যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তবে সব আশাই ব্যর্থ হয়েছে।