লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে চলা ভারত-চিন সংঘর্ষে শহিদ হলেন বীরভূমের জওয়ান রাজেশ ওরাং

সাতদিন আগেই বোনের সঙ্গে কথা হয়েছিল । বলেছিলেন, “পাহাড়ে উঠতে হচ্ছে , আমাকে আর পাবি না ” । তবে কয়েকদিনের জন্য নয় । চিরদিনের জন্য দাদার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেল বোনের । সোমবার রাতে লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে ভারত-চিন সীমান্তে দুই পক্ষের সংঘর্ষে শহিদ হয়েছেন 25 বছরের রাজেশ ওরাং ।

সোমবার রাতে লাদাখের ভারত-চিন নিয়ন্ত্রণরেখায় নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয় ৷ যার জেরে শহিদ হন ভারতীয় সেনার তিন জন । গুরুতর জখম হয়েছিলেন 17 জন ৷ ভারতীয় সেনার তরফে জানানো হয়েছে, অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে ওই জখম 17 জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ মোট 20 জওয়ান শহিদ হয়েছেন । তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বীরভূমের রাজেশ ওরাং । বাড়ি বীরভূমের মহম্মদবাজার থানা বেলঘড়িয়া গ্রামে । গতকাল বিকেলে তাঁর মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছাতেই ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা ।


জানা গেছে , 2015 সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি । সরস্বতী পুজোয় শেষ বাড়িতে এসেছিলেন । এরপর বাড়িতে আসার কথা থাকলেও লকডাউনের জেরে পারেননি । বিয়ের জন্য দেখাশোনাও চলছিল । কিন্তু সোমবারের ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল । বাড়ি আসা আর হল না রাজেশের ।

রাজেশের ভাই অভিজিৎ ওরাং বলেন , “মৃত্যুর খবর আসতেই প্রশাসনের তরফে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ।” প্রথমে গতকাল রাতে তাঁর বোনের কাছে ফোন আসে । রাজেশের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয় । দাদার মৃত্যুর খবর শুনে ভেঙে পড়ে বোন । তিনি এর বদলা চান । বলেন , “বদলা চাই , প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাব ।”

বীরভূমের মহঃ বাজারের বেলগড়িয়া গ্রামে ৯৬ ঘর আদিবাসী দের বাস। সকলের মত সুভাষ ওরাং ও চাষ বাস করেই বহু কষ্টে দু মেয়ে এক ছেলে কে বড় করেছে। এখন তিনি রোগ সজজায। তবুও চিকিৎসা হত ফৌজি ছেলের পাঠানো টাকায়। কিন্ত মঙ্গলবারের একটা ফোন সব বদলে দিল। সেনা কর্মকর্তারা ফোন করে জানিয়ে দেয় – ভারত-চিন সীমান্তে লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে চিনা বাহিনীর আক্রমনে শহিদ হয়েছেন  রাজেশ ওরাং। বয়স মাত্র ২৬ বছর।
     মূহুর্তেই অজ্ঞান হয়ে যান ছোট বোন শকুন্তলা ওরাং। তখন কিছু বুঝতে পারে নি মা মমতা ওরাং। বিহার রেজিমেনট সিপাই পদে ছিল রাজেশ। সন্তান হারানোর কথা জানতে পেরে মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছেন রাজেশের মা-বাবা। মাটিতে পরে  চোখের জল মুছতে মুছতে শোকবিহ্বল সুভাষ ওরাং বলেন,  ‘দেশের জন্য ছেলে শহিদ হওয়ায় আমি গর্বিত। তবে ওর রোজগারে আমরা খেতে পেতাম ।’

সারা গ্রাম আজ ভেঙে পরেছে প্রিয় ছেলেটার জন্য। কিন্ত ঐ একটা ফোন যে আর ও একটি নতুন জীবন শুরু মুখেই ছন্দ পতন করল তা জানতো না গ্রামের অনেকেই। ছোট বোন শকুন্তলা কাঁদতে কাঁদতে জানালো সে কথা। “দাদা, তুই কত সাধ করে খাট করালি বিয়ে করবি বলে। ওর কি হবে রে।”
     রাজেশের বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল। এই আষাঢ মাসেই ছুটি তে বাড়ি এসে বিয়ে অনুষ্ঠান হত। কিন্তু সব শেষ। পুজো ছুটিতে বাড়ি এসে বোলপুর লাগোয়া কাশী পুরে এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল রাজেশ। সেখানেই আলাপ হয় একটি মেয়ের সঙ্গে। বাড়ি তে জানাতেই দুই পরিবার কথা বলে বিয়ে পাকা করে। সিউড়ি ২ নং ব্লকের পুরন্দরপুরের বাসিন্দা চন্দনা সর্দারের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় রাজেশের। চন্দনা দেবী জানান, “ছুটিতে এলে বিয়ে কথা ছিল। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।”
    নিজের ভিটে বাড়িতে পাকা বাড়ি তৈরি করছিল রাজেশ। এখন কাজ শেষ হয়নি। ছুটি তে সব ঠিক করার কথা বলেছিল মা কে। গত মাসে শেষ মায়ের সঙ্গে কথা হয় রাজেশের। মা
মমতা দেবী বলেন, ” মা আমি আর ও উপরে পাহাড়ে যাচ্ছি। এখন আর প্রতিদিন কথা হবে না। ফোনে ও পাবে না। কিন্তু কখনও বলে নি যুদ্ধে যাচ্ছি।”

মহঃ বাজারের মালাডাং শেওডাকুডি বংশীধর হাইস্কুলে পড়াশুনা রাজেশের। ওই স্কুলেরই সহপাঠীরা আজ বাড়িতে ভিড় করেছে। সুমন দাস, আশীষ মাহারা, সিদ্ধার্থ ঘোষালরা। বন্ধুদের কথায়, “স্কুলের  বন্ধুদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে ৷ তাতে রাজেশও ছিল ৷ সেই গ্রুপে বিভিন্ন সময় ফৌজি জীবনের ছবি পাঠাত ৷  আর আসবে না রাজেশের মেসেজ ৷ চিন সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ায় রাজেশ বলেছিল চিনের জিনিস ব্যবহার করিস না। ওরা বিশ্বাস ঘাতক। কখন কি করে তার ঠিক নেই।”
      সকাল থেকেই মুষল ধারে বৃষ্টি। গ্রামের রাস্তা কাদা। হাঁটার উপায় নেই। কিন্ত গ্রামের ছেলে টাকে বাড়িতে আনার জন্য সকলেই কোদাল হাতে রাস্তা ঠিক করছে। প্রতিবেশী নমিতা সর্দার, ফুলেশবরী ওরাং বলেন,” সেনায নাম লেখাবে বলে খডার সময় ময়ূরাক্ষী নদীর বালি তে দৌড়ত। একবারেই পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়ে গেল।”
দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে ভেঙে পরেছে ছোট বোন। তবুও শকুন্তলা, দাদার মৃত্যুর বদলা নিতে ফৌজে যেতে চায় ।

একমাত্র রোজগেরেকে ঘিরেই ওরাং পরিবারের যত আশা। মঙ্গলবার বিকেলে গ্রামের বাড়িতে ফোন এসেছিল লে-র আর্মি হাসপাতাল থেকে। তাঁর জ্যাটতুতো ভাই অভিজিত ওরাং বলেন বলেন, “ফোনে করে জানিয়ে দেয় দাদা শহিদ হয়েছে। প্রথমে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। মঙ্গলবার বিকেলে মৃত্য়ু হয় হাসপাতালে। খুব ভাল স্পোর্টসম্যান ছিল। দাদার প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে কাজ করার। সিউড়ি কলেজে পড়ার সময় লোক নিয়োগ চলছিল। সিউড়িতেই মাঠ হয়েছিল। তখনই চাকরি পেয়ে যায় আর্মিতে।”

অভিজিতের কথায়, “২০১৫ সালে আর্মিতে যোগ দেয় দাদা। প্রথম পোস্টিং ছিল জম্মু। তারপর দুবছর ধরে রয়েছে লাদাখে। বাড়িতে আসার কথা ছিল। লকডাউন হওয়ায় ওর বাড়ি ফেরা আটকে যায়। নতুন বাড়ি বানিয়েছে। সেই বাড়ির অনেক কাজ বাকি রয়েছে। এক বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক বোনের বিয়ে দেওয়ার কথা চলছিল। আমরা বিশ্বাস করতেই পারছি না। দাদা নেই।”

   
বীরভূমের মহঃ বাজারের বেলগড়িয়া গ্রামে ৯৬ ঘর আদিবাসী দের বাস। সকলের মত সুভাষ ওরাং ও চাষ বাস করেই বহু কষ্টে দু মেয়ে এক ছেলে কে বড় করেছে। এখন তিনি রোগ সজজায। তবুও চিকিৎসা হত ফৌজি ছেলের পাঠানো টাকায়। কিন্ত মঙ্গলবারের একটা ফোন সব বদলে দিল। সেনা কর্মকর্তারা ফোন করে জানিয়ে দেয় – ভারত-চিন সীমান্তে লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে চিনা বাহিনীর আক্রমনে শহিদ হয়েছেন রাজেশ ওরাং। বয়স মাত্র ২৬ বছর।
মূহুর্তেই অজ্ঞান হয়ে যান ছোট বোন শকুন্তলা ওরাং। তখন কিছু বুঝতে পারে নি মা মমতা ওরাং। বিহার রেজিমেনট সিপাই পদে ছিল রাজেশ।
রাজেশের বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল। এই আষাঢ মাসেই ছুটি তে বাড়ি এসে বিয়ে অনুষ্ঠান হত। কিন্তু সব শেষ। পুজো ছুটিতে বাড়ি এসে বোলপুর লাগোয়া কাশী পুরে এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল রাজেশ। সেখানেই আলাপ হয় একটি মেয়ের সঙ্গে। বাড়ি তে জানাতেই দুই পরিবার কথা বলে বিয়ে পাকা করে।
নিজের ভিটে বাড়িতে পাকা বাড়ি তৈরি করছিল রাজেশ। এখন কাজ শেষ হয়নি। ছুটি তে সব ঠিক করার কথা বলেছিল মা কে। গত মাসে শেষ মায়ের সঙ্গে কথা হয় রাজেশের। মা
মমতা দেবী বলেন, ” মা আমি আর ও উপরে পাহাড়ে যাচ্ছি। এখন আর প্রতিদিন কথা হবে না। ফোনে ও পাবে না। কিন্তু কখনও বলে নি যুদ্ধে যাচ্ছি।”

মহঃ বাজারের মালাডাং শেওডাকুডি বংশীধর হাইস্কুলে পড়াশুনা রাজেশের। ওই স্কুলেরই সহপাঠীরা আজ বাড়িতে ভিড় করেছে। সুমন দাস, আশীষ মাহারা, সিদ্ধার্থ ঘোষালরা। বন্ধুদের কথায়, “স্কুলের বন্ধুদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে ৷ তাতে রাজেশও ছিল ৷ সেই গ্রুপে বিভিন্ন সময় ফৌজি জীবনের ছবি পাঠাত ৷ আর আসবে না রাজেশের মেসেজ ৷ চিন সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ায় রাজেশ বলেছিল চিনের জিনিস ব্যবহার করিস না। ওরা বিশ্বাস ঘাতক। কখন কি করে তার ঠিক নেই।”
সকাল থেকেই মুষল ধারে বৃষ্টি। গ্রামের রাস্তা কাদা। হাঁটার উপায় নেই। কিন্ত গ্রামের ছেলে টাকে বাড়িতে আনার জন্য সকলেই কোদাল হাতে রাস্তা ঠিক করছে। প্রতিবেশী নমিতা সর্দার, ফুলেশবরী ওরাং বলেন,” সেনায নাম লেখাবে বলে খডার সময় ময়ূরাক্ষী নদীর বালি তে দৌড়ত। একবারেই পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়ে গেল।”
দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে ভেঙে পরেছে ছোট বোন। তবুও শকুন্তলা, দাদার মৃত্যুর বদলা নিতে ফৌজে যেতে চায় ।

একমাত্র রোজগেরেকে ঘিরেই ওরাং পরিবারের যত আশা। মঙ্গলবার বিকেলে গ্রামের বাড়িতে ফোন এসেছিল লে-র আর্মি হাসপাতাল থেকে। তাঁর জ্যাটতুতো ভাই অভিজিত ওরাং বলেন বলেন, “ফোনে করে জানিয়ে দেয় দাদা শহিদ হয়েছে। প্রথমে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। মঙ্গলবার বিকেলে মৃত্য়ু হয় হাসপাতালে। খুব ভাল স্পোর্টসম্যান ছিল। দাদার প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে কাজ করার। সিউড়ি কলেজে পড়ার সময় লোক নিয়োগ চলছিল। সিউড়িতেই মাঠ হয়েছিল। তখনই চাকরি পেয়ে যায় আর্মিতে।”

অভিজিতের কথায়, “২০১৫ সালে আর্মিতে যোগ দেয় দাদা। প্রথম পোস্টিং ছিল জম্মু। তারপর দুবছর ধরে রয়েছে লাদাখে। বাড়িতে আসার কথা ছিল। লকডাউন হওয়ায় ওর বাড়ি ফেরা আটকে যায়। নতুন বাড়ি বানিয়েছে। সেই বাড়ির অনেক কাজ বাকি রয়েছে। এক বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক বোনের বিয়ে দেওয়ার কথা চলছিল। আমরা বিশ্বাস করতেই পারছি না। দাদা নেই।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.