ভারতের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল ১০ বছর আগে। কিন্তু বারবার আবেদনের পরেও ফল মেলেনি। অবশেষে বুধবার চিনের আপত্তি তুলে নেওয়ার পর মাসুদ আজহারকে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এমনকী তাঁর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের এই ঘোষণার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বললেন, এটা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বড় জয়। ভারতে সন্ত্রাসবাদ খতম করার লক্ষ্যে এটা প্রথম পদক্ষেপ, এমনটাই বক্তব্য মোদীর।
বুধবার রাজস্থানের জয়পুরে একটি নির্বাচনী জনসভায় মোদী বলেন, “এখন থেকে যখনই কোনও দেশ ভারতে সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা করবে, আমরা তাদের ঘরে ঢুকে তাদের মারব। তারা গুলি ছুড়লে আমরা বোমায় তার জবাব দেব।” জনতার উল্লাসের মাঝে মোদীর বক্তব্য, “গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সবাই ভারতের কথা শুনতে শুরু করেছে। আমাদেরকে আর অবহেলা করা যাবে না। আমি বুক ঠুকে বলতে পারি, এটা সবে শুরু। শুধু অপেক্ষা করুন, এরপরে কী হবে।” এ দিনের সভা থেকেই লস্কর প্রধানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য আমেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেনকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোদী। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে আজহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য বারবার আবেদন করেছে এই তিন দেশ। মোদী বলেন, “ভারতের পাশে আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন-সহ একাধিক দেশ দাঁড়িয়েছে। তাদের সাহায্যের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তাই আমি ১৩০ কোটি দেশবাসীর হয়ে তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
এই ধরণের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের পর যে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষও পাক সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে, এ দিনের সভা থেকে সে কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর কথায়, এই জয় শুধুমাত্র সরকারের নয়, জয় সাধারণ মানুষেরও। সেইসঙ্গে বিরোধীদেরও এক হাত নেন তিনি। মোদী বলেন, “আমাদের এই জয়ের পরেও ভারতে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিল। কেউ কেউ আমাদের ব্যঙ্গ করেছিল। কিন্তু আমরা নিজের কাজ করে গিয়েছি। কিন্তু আমি তাদের বলতে চাই, আজ এই জয় মোদীর জয় নয়, এই জয় ১৩০ কোটি ভারতবাসীর জয়।” মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পরে একদিকে যেমন বিজেপি নেতারা মোদীর প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে তখন বিরোধীরা প্রশংসা করেছেন কূটনৈতিক মহলের।
২০০১ সালে কাশ্মীরের বিধানসভায় জঙ্গি হামলার পিছনেও ছিলেন মাসুদ। এই হামলায় ৩০ জন নিহত হয়েছিলেন। ভারতের সংসদেও হামলা চালায় জইশ জঙ্গিরা। ২০১৬ সালে পাঠানকোট বায়ুসেনা শিবির এবং ২০১৮ সালে উরির সেনা ছাউনিতেও হামলা চালিয়েছিল মাসুদ আজহারের জঙ্গি দল জইশ ই মহম্মদ। সম্প্রতি পুলওয়ামায় নিরাপত্তা বাহিনীর কনভয়ের উপর হামলার ঘটনাতেও দায় স্বীকার করেছিল জইশ ই মহম্মদ। বস্তুত তার পর থেকেই মাসুদকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের উপর চাপ বাড়িয়েছিল নয়াদিল্লি। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বেজিং। ১০ বছর ধরে এই আবেদনের পরে অবশেষে নিজেদের আপত্তি তুলে নিয়েছে চিন।