মার্কিন সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিনের সাম্প্রতিক একটি প্রচ্ছদ সম্পর্কে অনেকেই অবগত আছেন। প্রচ্ছদে ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীকে ‘ইন্ডিয়া’স ডিভাইডার ইন চিফ বা ভারতে বিভাজন নীতির মুখ্য কারিগর’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। সচরাচর একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে, অন্য দেশের কেউ এভাবে অপমান করলে অপমানিত দেশের রাজনীতিকরা অপমানকারীর বিরুদ্ধে ফুসে উঠতেন, একজোট হয়ে লড়াই করতেন। নেহরুয় ভারতবর্ষে অবশ্য সেসবের বালাই নেই, অন্যে অপমান করবে আমরা সেই অপমান সহ্য করব, অন্যে আমাদের দেশ আক্রমণ করবে, আমরা আমাদের ভূখণ্ডকে তাদের হাতে তুলে দেব— ‘৪৭-এর পর থেকে এসবে আমাদের অভ্যস্ত হতে হয়েছে।
নেহরুর দৌহিত্র পুত্রটি অবশ্য আরও এককাঠি ওপরে। সন্ত্রাসবাদীর জন্মদিন পালনে সোচচার হওয়ার যে অপূর্ব নিদর্শন, প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে দাঁড়িয়ে চোখ মারার যে অভূতপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরাকাষ্ঠা তিনি দেখিয়েছেন, তার ওপরে ঠাকুমার বাবার ‘কালচারালি মুসলিম, এডুকেশনালি ইংলিশ’ হওয়ার সাধ পূর্ণ করে কমিউনিস্ট দীক্ষায় দীক্ষিত হয়েছেন, নেহরু সাহেবও প্রকাশ্যে এহেন গলাগলি দেখাতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। অতঃপর নেহয় ভারতবর্ষে আপনাকে স্বাগত। নচেৎ টাইম ম্যাগাজিনের আলোচনা। ঠিক জমবে না। অমর্ত্য সেন অকপটে বলবেন নু, ‘মোদী ফের প্রধানমন্ত্রী হোক চাইনা, কিন্তু হবে ভেবে কষ্ট হচ্ছে। নইলে বিদেশের মাটিতে সোনিয়া-পুত্র ভারতীয় নিরাপত্তাকে নস্যাৎ করে বিদেশি শাসকের তবে আর মৌজ করবেন না। না হলে মাসুদ আজহার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীর তকমা পেলে চীন কী কী সুবিধা ভারত থেকে আদায় করবে, তাতে দেশের কতটা ক্ষতি হবে, এবং এর জন্য মাসুদের আন্তর্জাতিক তকমার আর দরকার নেই, এমন অর্বাচীন বাক্যও তো অশ্রুতপূর্ব থাকবে। মিডিয়ার দালালিও যে আর চলবে না! এটাই তো নেহরুয় ভারত। যার একমাত্র শত্রু নরেন্দ্র মোদী।
ফলে টাইম ম্যাগাজিনে আতীশ তাসির বলে একজন যখন লেখেন ‘পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র কি আরও পাঁচ বছরের জন্য মোদী সরকারকে সহ্য করতে রাজি? তখন তো আমাদের উল্লাস প্রকাশ করতেই হয়, গণশক্তি নামক কমিউনিস্ট মুখপত্রের প্রথম পাতায় গোটা হরফে লিখতেই হয় দেখছে দেশ, বলছে বিদেশি মিডিয়াও’, এই না হলে নেহরুর ভারত। মোদীর ভারত থেকে যে ভারতে আমাদের প্রত্যাবর্তন করানোর জন্য বাজারি’য় সংবাদপত্রের বুদ্ধিজীবীগণের এত আকুলতা। কে এই আতীশ তাসির ? পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ সলমন তাসির, যিনি শেষ জীবনে পাক-শাসিত পঞ্জাবের গভর্নর হয়েছিলেন তারই সুপুত্র। তিনি ২০১১ সালের ১৬ জুলাই ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে তার মহান পিতৃদেবের সম্পর্কে একটি মূল্যবান প্রবন্ধ লিখেছিলেন :“আমার বাবা কেন ভারতবর্ষকে ঘৃণা করতেন?’ সেই অসামান্য প্রবন্ধে নেহরুয় ভারতবর্ষের কী যে অকল্পনীয় রূপ ফুটে উঠেছিল তা বলা যায় না। তাসির লিখেছিলেন : ভারতের প্রতি পাকিস্তানের ঘৃণার কারণ, একটি বিশেষ ইন্দ্রিয় দ্বারা, এই মৃগীরোগের (হিস্টিরিয়া) হেতু বুঝতে হবে। ভারতের সংস্কৃতি, অতীতের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে। পাকিস্তানিদের ভারতকে বর্জনের উদ্দেশ্য। পাকিস্তান নির্মাণ ধারণার হৃদয় থেকে যার উৎস। সত্যি কথা বলতে কী এই হলো নেহরুয় ভারত। কাশ্মীরে কাশ্মীরি পণ্ডিতরা উদ্বাস্তু হবেন, ভিটেমাটি ছেড়ে পথে বসবেন। আর সন্ত্রাসবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী পরম নিশ্চিন্তে দিন কাটাবেন। সঙ্গে ফ্রি এন্টারটেনমেন্ট ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর ওপর পাথর ছোঁড়া কিংবা লাশ গোনা।
সত্যি কথা বলতে কী স্বাধীনতার পর কম বেশি ৬০ বছর আমরা এমনটিই দেখেছি। প্রথমে বাজপেয়ী সরকারের পোখরান, কার্গিল, পরে মোদীর আমলে এই যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, ডান্ডা মেরে দুষ্কৃতীদের ঠাণ্ডা করে দেওয়া এসব নেহরর শান্তিকামী ভারতের পক্ষে সাজে না। তাই আতীশ তাসির কিংবা অর্মত্য সেনের কথাই নেহরুয় ভারতবর্ষের প্রকৃত সত্য। ফলে আতীশতাসির সেই ‘বিভাজনকারী প্রবন্ধে একেবারে ঠিক বলেছেন নরেন্দ্র মোদীর ২০১৪-য় লোকসভা নির্বাচনে জয় ভারতের জাতীয় বিপর্যয়। এতটাকাল সযত্নে নেহরুয় ভারতের সত্তা লালিত পালিত হচ্ছিল, ন্যুজ, কু জ ভারতবর্ষের হতদরিদ্র চিত্র আর মুসলমান। অনুপ্রবেশকারীর মিলিত সংস্কৃতির ভারতবর্ষে মোদী এসেছে কোথাও একটা সজোরে ধাক্কা দিয়েছেন তাতে। আর এর ফলেই উঠে পড়েছে। ত্রাহি ত্রাহি রব, ইসলামি সংস্কৃতি আর ব্রিটিশ শিক্ষা ফিরিয়ে আনার আর্তি ও আর্তনাদ, ‘অ্যাক্সিডেন্টালি হিন্দুদের দগদগে ক্ষতে যা। বুলোতে আতীশ তাসিররা ছিলেন, আছেন, থাকবেন। দেশ দেখছে, বিদেশি মিডিয়াও বলছে।
বিশ্বামিত্রের কলম
2019-05-17