‘ভুল হয়ে গিয়েছে’! ইংরেজি মাধ্যমের শর্ত প্রত্যাহার করে বাংলার কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইল লরেটো কলেজ

ক্ষমা চাইল লোরেটো কলেজ। বিবৃতি জারি করে জানাল, কলেজে ভর্তির জন্য পড়ুয়াদের যোগ্যতার যে শর্ত তারা দিয়েছিল, তা ভুল করে দেওয়া হয়েছিল। সেই শর্ত প্রত্যাহার করে নিচ্ছে তারা। আর ওই শর্ত দেওয়ার জন্য বাংলার মানুষের কাছে তারা ক্ষমাপ্রার্থী।

লোরেটো কলেজে ভর্তি হতে হলে ছাত্রীদের বাংলা বা অন্য কোনও আঞ্চলিক ভাষার মাধ্যমে পড়াশোনা করলে চলবে না বলে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাতে স্পষ্ট লেখা ছিল, যে সমস্ত পড়ুয়া দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, হিন্দি বা অন্য কোনও আঞ্চলিক ভাষার মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন তাঁদের লোরেটো কলেজে ভর্তি নেওয়া হবে না। এই নোটিস ঘিরেই তৈরি হয় বিতর্ক। বাংলার কলেজে বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীদের ব্রাত্য করার কথা শুনে বিস্মিত হয়েছিল শিক্ষামহল। খবর পেয়ে লোরেটো কলেজের অধ্যক্ষকে মঙ্গলবারই তলব করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এর পরই মঙ্গলবার বেলায় লোরেটো কলেজের তরফে একটি নতুন বিবৃতি জারি করা হয়। তাতেই নিঃশর্ত ভাবে বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছে তারা।

ওই বিবৃতিতে লোরেটো কলেজ কর্তৃপক্ষ লিখেছেন, ‘‘কলকাতার লোরেটো কলেজের ঐতিহ্য এবং সেবার ইতিহাস গৌরবময়। গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলায় সার্বিক শিক্ষার পরিষেবা দিয়ে আসছে এই প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সম্প্রতি যে ভর্তির নীতি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল, তাতে আমাদের বহুলালিত মূল্যবোধের প্রতিফলন দেখা যায়নি। এই ভুল আমাদের।’’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন লোরেটো কলেজ। সোমবার সেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রেই জানানো হয়, ভর্তির এমন নোটিস নিয়ম-বহির্ভূত। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মঙ্গলবার লোরেটো কলেজের অধ্যক্ষকে ডেকে জানিয়ে দেন এ রকম কোনও বিজ্ঞপ্তি যেন আগামী দিনে না দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সেই সাক্ষাতে কী হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে এর পরেই ক্ষমা চেয়ে দুই অনুচ্ছেদের একটি বিবৃতি দেন লোরেটো কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাতে তাঁরা আরও লিখেছেন, ‘‘কলকাতার লোরেটো কলেজ নিঃশর্ত ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী বাংলার মানুষের কাছে। ভর্তির ওই নোটিস প্রত্যাহার করা হচ্ছে। আমরা নতুন করে বাংলাকে পরিষেবার দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’

লোরেটো কলেজ তাদের পুরনো ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, যে হেতু এই কলেজে পড়াশোনা এবং ক্লাস ইংরেজিতেই হয়, তাই পড়াশোনার সুবিধার জন্যই ছাত্রীদের ইংরেজিতে সড়গড় হওয়া জরুরি। তাই বাংলা বা হিন্দির মতো আঞ্চলিক ভাষার মাধ্যমে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন যাঁরা, তাঁদের কলেজে ভর্তি নেওয়া হবে না। মঙ্গলবার সেই নোটিস প্রত্যাহারের কথা বললেও পড়ুয়াদের একাংশের প্রশ্ন, খাতায়কলমে হলেও কাজে কি তা হবে? পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, এ বছর প্রথম খাতায়কলমে এমন বিজ্ঞপ্তি দিলেও লোরেটো বরাবরই ইংরেজি মাধ্যমের পড়ুয়াদেরই পছন্দ করে এসেছে। বাংলা মাধ্যমের ছাত্রীদের নাম সাধারণত ভর্তির তালিকায় ঠাঁই পায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.