বিশ্ব প্লাস্টিক-ব্যাগ মুক্তি দিবস

আমরা সাধারণভাবে ভেবে থাকি যে আমার একার প্রচেষ্টায় আর কতটুকুই বা হবে? সেই কারণেই হয়তো নতুন কোনো উদ্যোগে সহজে এগিয়ে আসা হয় না। কিন্তু এই একক আমি-কে নিয়েই যে গোটা সমাজ গড়ে ওঠে, তা আমরা ভুলে যাই । অনেক গুলো ছোটো ছোটো জল বিন্দুই একদিন একটি গোটা সাগরে পরিণত হয়। তাই যারা মনে করেন যে আমার একটা প্লাস্টিকের থলেতে কতটুকুইবা ক্ষতি হবে তাদের এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এটা বেশি করে ভাবা উচিত যে, আমার এই একটা প্লাস্টিক ব্যবহার না করলে কতটা বর্জ্য কমবে, সমবেতভাবে সেই পরিমাণটা কত। ধীরে ধীরে অভ্যাসগতভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহারটাই একদিন বন্ধ করতে পারবে। একদিনে হয়তো হবে না, তবে একদিন নিশ্চয়ই হবে।
কি কি করণীয়:
১. আমরা অনায়াসেই বাজারে যাওয়ার সময় পাটের তৈরি ব্যাগ কিম্বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে পারি। তাতে single use plastic এর ব্যবহার অনেক অংশেই কমানো সম্ভব ।
২. বিক্রেতারাও কাগজের ঠোঙ্গা বা wrapping paper (যা অবশ্যই জৈবপচনশীল হতে হবে) এ জিনিস দিতে পারেন ।
৩. যে ক্ষেত্রে কোনোভাবেই প্লাস্টিক এড়ানো সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে reusable অথবা recycle যোগ্য প্লাস্টিক (যেহেতু প্লাস্টিক পচনশীল নয়, তা সহজেই বছরের পর বছর মাটির ক্ষতি করে ) ব্যবহার করতে হবে যাতে প্লাস্টিকজাত বর্জ্য কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হয়।
৪. দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি ক্ষেত্রে প্লাস্টিককে যতটা সম্ভব বর্জন করতে পারি।
৫. আর পারি আশেপাশের মানুষদেরকে সচেতন করতে। তবে এক্ষেত্রে সবার আগে নিজের বাড়ি আর পরিবারের মানুষদের দিয়ে শুরু করতে হবে।
কারণ ইংরেজিতে একটা কথা আছে “charity begins at home”. পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখা মানে যে নিজেকেও সুস্থ ,সুন্দর, প্রাণবন্ত রাখা, এটা মাথায় রেখে যেন আমরা এই ছোটো ছোটো অভ্যাসগুলোকেই জীবনের অঙ্গ বানিয়ে ফেলি। তবেই একদিন প্লাস্টিক মুক্ত পরিবেশ আমরা গড়ে তুলতে পারবো। সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় “বিন্দু বিন্দুতেই সিন্ধু” গড়ে উঠবে।

৩ রা জুলাই বিশ্ব প্লাস্টিক-ব্যাগ মুক্তি দিবস। এই দিনে আমাদের সমবেত শপথ হোক যথাসম্ভব প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবহার এড়িয়ে চলার প্রয়াস। পরিবর্তে সহজে পচনশীল জৈব উপাদানে তৈরি কৃষিপণ্য আমরা ব্যবহার করতে পারি। পাটজাত ব্যাগের ব্যবহার বাড়ুক, বাড়ুক তুলোর ব্যাগ, কলার উপকাণ্ডের আঁশ দিয়ে তৈরি ব্যাগ, শণ-মেস্তা-অ্যাগেভ থেকে প্রাপ্ত তন্তুজ ব্যাগ ইত্যাদি। এই উদ্যোগ যেন একটি দিন পালনের মধ্যে সীমায়িত হয়ে না যায়। আমাদের অঙ্গীকার হোক, অন্তত আজ থেকে নিজের নিজের পক্ষ থেকে প্লাস্টিকের ব্যবহার যথা সম্ভব বন্ধ করা এবং দূষণ মুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বার্তা রেখে যাওয়া।

পূজা উপাধ্যায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.