আজকের দিনে (২৬ শে জুলাই) বাঙালি কবি ও সাহিত্য সমালোচক এবং প্রাবন্ধিক মোহিতলাল মজুমদারের প্রয়াণ ঘটেছিল। চলতি কাব্যরীতিতে তাঁর বিদ্রোহের স্বর তাঁকে আলাদাভাবে চিনিয়ে দিয়েছে। তাঁর জন্ম ১৮৮৮ সালে ২৬শে অক্টোবর এবং মৃত্যু ১৯৫২ সালের ২৬শে জুলাই। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রস্তুত নিবন্ধ।
মোহিতলাল মজুমদার বাংলার নবজাগরণ ও সিস্টার নিবেদিতার জীবনবোধ প্রসঙ্গে যে মন্তব্যটি করেন তা কৃষি-সংস্কৃতির নিরিখে এক গুরুত্বপূর্ণ অভিব্যক্তি :
“বাংলার মাটিতে হলকর্ষণের পর যখন নবজীবনের বীজবপন ও বারিসেচন আরম্ভ হইয়াছে, তখন দিকে দিকে যত অঙ্কুর দেখা দিয়াছিল, তাহারই মধ্যে এই আর একটি বীজ যেন সকলের দূরে এক কোণে — নিজেকেই ফুলেপুষ্পে বিকশিত করিবার জন্য নয় — অপরগুলির সাররূপে ব্যবহৃত হইবার জন্য এমন ফসলের আকাঙ্ক্ষা করিয়াছিল, যাহা বাজার পর্যন্ত পৌঁছায় না, সে কেবল সার হইবার ফসল।”
কৃষিবিজ্ঞানে সার হবার ফসলকে বলে Green manure/ Green leaf manure অর্থাৎ সবুজসার বা সবুজপাতা সার। সবুজসারের বীজ জমিতে ফেলে অপরিণত অবস্থায় চাষ দিয়ে মূলজমির খাদ্যোপাদান বাড়ানো হয়। সেই সারগাছ বা পাতা নিঃশেষিত হয়ে অন্য ফসল বাড়ে, পরিণতপ্রাপ্ত হয়, ফসল বাজারমুখী হয়।
নিবেদিতা বাংলার নবজাগরণে এমনই সবুজসার। নবজাগরণের মাঠকে সমৃদ্ধ করেছেন। শিক্ষা, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, শিল্প, রাজনীতি — জাতীয়তাবাদের সকল ধারার মণীষাকে উৎসাহ দিয়েছেন, তাদের শিক্ষা দিয়েছেন, পান্ডুলিপি লিখে বা দেখে দিয়েছেন দিনের পর দিন। না, নিজের নাম কেনেন নি তিনি। নিজেকে তিল তিল করে বাংলা তথা ভারতীয় নবজাগরণের প্রবুদ্ধ সমাজকে সেচ-সার দিয়েছেন। এখানেই তিনি অন্য সকলের থেকে অনন্য। কৃষিবিদ হিসাবে আমরা মনে করি, নিবেদিতা হলেন বাঙালী কৃষ্টির সবুজসার; Nivedita was an important input of Bengali Renaissance — Green Manure.
আজও যখন আকাশকটাহে ধূম্র মেঘের ঘটায় কার বিরাট মুন্ডতে ভীমকুন্ডল জটা দৃশ্যমান হয়, যখন অসীম অতল ভেদ করে মিহিরকে গ্রাস করতে, রশ্মিছটাকে ছিন্ন করতে চৈত্র বৈশাখে কালো মেঘের ঘনঝড় নেমে আসে তখন
তাঁর ‘কালবৈশাখী’ কবিতাখানা মনে পড়ে —
“মধ্যদিনের রক্ত নয়ন অন্ধ করিল কে !
ধরণীর ‘পরে বিরাট ছায়ার ছত্র ধরিল কে !
কানন-আনন পাণ্ডুর করি
জলস্থলের নিশ্বাস হরি
আলয়ে-কুলায়ে তন্দ্রা ভুলায়ে গগন ভরিল কে!”
কল্যাণ চক্রবর্তী এবং অরিত্র ঘোষ দস্তিদার।