কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত -র প্রয়াণ দিবসে (১৭ ই সেপ্টেম্বর, ১৯৫৪) শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখলেন

শিবপুর ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজের প্রকৌশলী হয়ে উঠেছিলেন এক কবি

যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তর ‘হাট’ কবিতাটি (‘মরীচিকা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত, ১৯২৩ প্রকাশকাল) ছাত্রজীবনে আমাকে দারুণ ভাবে প্রভাবিত করেছিল। গ্রামের হাট, প্রভাতে যেখানে ঝাঁট পড়ে না, সন্ধ্যায় যেখানে প্রদীপ জ্বলে না। সেই দশবারোখানি গাঁয়ের মাঝে একটি হাট — পড়ে থাকে আঁধারে। হাটের দোচালায় মুদে আসে নয়ান। অথচ এই হাটেই তো ছিল সকাল থেকে কত বিকিকিনি! শত হাতের পরখে কত পণ্য — প্রভাতে নিয়ে আসা শিশির-বিমল ফলের কী অন্তিম দশা; আর তারই জন্যে কত অনন্ত কোলাহল — মাল চেনার, দর জানার বাচনিক। এমন করেই জীবনের উন্মুক্ত হাট বসে আবহমানকাল ধরে, যেন নিত্য নাটের খেলা মনে হয়। জীবনের কড়ি গাঁটে বেঁধে নিজ নিকেতনে ফেরার গল্প। ‘হাট’ কবিতার কয়েকটি লাইন আজোও মনে পড়ে, কীভাবে হাটে সন্ধ্যা নামে তার বর্ণনা — “বকের পাখায় আলোক লুকায়/ছাড়িয়া পূবের মাঠ” অথবা “নিশা নামে দূরে শ্রেণীহারা একা/ক্লান্ত কাকের পাখে” অথবা “নির্জন হাটে রাত্রি নামিল/একক কাকের ডাকে”।

যতীন্দ্রনাথের কলেজ জীবনে (১৯১১ সালে স্নাতক) রবীন্দ্র কাব্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটে, তারপর প্রণয়-কলহ, তারপর বলা যায় রবীন্দ্রে-বন্দী কিংবা রবীন্দ্রেই মুক্তি। ‘বাইশে শ্রাবণ’ (‘ত্রিযামা’ কাব্যগ্রন্থ, ১৯৪৮/১৩৫৫) কবিতায় রবীন্দ্র-বিষাদে মর্মাহত তিনি– “আমি ফুল দিইনি বন্ধু, / আমার পথে ফুলের দোকান পড়ে না।” অবশেষে করজোড়ে, নতশিরে প্রণাম করেছেন বিচিত্র শোভায়, বিচিত্র সাজে চলমান এক ব্যক্তিত্বকে মহাপ্রস্থানের পথে; আর পরাজয়ের জয়োল্লাসে চুপিচুপি চোরের মতো নিজে ঘরে ফিরে গেছেন হয়তো রবীন্দ্র-ভবনেই।
এই সেই কবি যার কবিতার উজ্জ্বল উদ্ধার আমাকে বারবার ধার নিতে হয়, যেমন নিতে হয়েছিল কল্লোল যুগকে — “চেরাপুঞ্জির থেকে, /একখানি মেঘ ধার দিতে পারো গোবি-সাহারার বুকে?” কবি আর আমাকে কত ঋণী করবেন? আজ তাঁর ঋণের বোঝা স্মরণ করছি প্রয়াণ দিবসে কবিতা-যাপনে।

ড. কল্যাণ চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.