গত ১০জুলাই২০২৫,গুরুপূর্ণিমা উপলক্ষে সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত জেলায়-জেলায়, আয়োজন করে সংস্কৃতির আদিগুরু নটরাজ স্মরণে ‘নটরাজ বন্দনা’ এবং সনাতন সংস্কৃতির ধারক ও বাহকদের প্রতি শিল্পী সম্মাননা জ্ঞাপন।
চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় ভাবসঙ্গীত, দীপমন্ত্র সহযোগে দীপ প্রজ্বলন ও নটরাজের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ, সংস্কৃতির আদিগুরু “নটরাজ বন্দনা” আধারিত গুরু-বন্দনা,নৃত্য-গীতিআলেখ্য,কবিতা পাঠ নিবেদনের মধ্যে দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং কল্যাণ মন্ত্র উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা। প্রান্তের বরিষ্ঠ কার্যকর্তাগন জেলার এই কার্যক্রমে পর্যবেক্ষক রূপে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সুচিন্তিত বৌদ্ধিক প্রদান জেলার সদস্যরা আগামীদিনের প্রস্তুতি তে সুচিন্তিত পথ নির্দেশ পায়।
এদিন যথাক্রমে, সংস্কার ভারতী উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নটরাজ বন্দনা ও শিল্পী সম্মাননা দিবস গোবরডাঙ্গা সমাদ্দার পাড়া স্থিত বোধন সেবাকেন্দ্রের কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সঙ্গীত শিল্পী মানস মন্ডল ও যন্ত্রানুসঙ্গ শিল্পী বীরেন্দ্র নাথ কুন্ডু এই দুই বিশিষ্ট শিল্পীজনকে জেলার পক্ষ থেকে শিল্পী সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়।
সংস্কার ভারতী গ্রামীণ হাওড়া বাগনান, সরস্বতী আশ্রমে এক সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে নাটরাজ পূজন ও নাটরাজ বন্দনার মধ্যে দিয়ে গুণীজন শিল্পী সম্বর্ধনা দিবস নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে।
নদীয়া জেলার অন্তর্গত বারহুইদা,কৃষ্ণনগর প্রমুখ অঞ্চলে সনাতন সংস্কৃতিকে নবপ্রজন্মের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে নটরাজ বন্দনা ও শিল্পী সম্মাননা প্রদান দিবস পালন করে এবং সার্বিক সফলতা পায়।একই সঙ্গে সংস্কার ভারতী নদীয়া জেলার নবদ্বীপ চর্চাকেন্দ্রের সদস্যরা বিশিষ্ট নাগরিক কবি সংস্কার ভারতীর প্রবীণতম কার্যকর্তা শ্রী যুক্ত বিজন কৃষ্ণ কুণ্ডু মহাশয়কে শিল্পী সম্মাননা দেন।

অপরদিকে, গুরুপূর্ণিমা উপলক্ষে
প্রান্তের দক্ষিণ কলকাতা জেলা নটরাজ বন্দনা পালন করে দেশপ্রিয় পার্কের নিকটস্থ মাতৃ মন্দিরে। এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রখ্যাত সংস্কৃত ভাষাবিদ ও নাট্যকার অধ্যাপক মাননীয় শান্তি নাথ ঘোষ মহাশয় কে শিক্ষাগুরু রূপে সম্বর্ধিত করা হয়।
একই ভাবধারায়, সংস্কার ভারতী হাওড়া নগর জেলার সদস্যরা বিশিষ্ট মৃৎশিল্পী ও শ্রীরাম মূর্তি নির্মাণে খ্যাত শ্রী বাবলু পাল মহাশয়কে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। তিনি শ্রীরামের প্রতি তাঁর আন্তরিক শ্রদ্ধা, শিল্পচর্চার অভিজ্ঞতা এবং পারিবারিক ঐতিহ্যের আলোকে শ্রীরাম মূর্তি নির্মাণের ইতিহাস শ্রোতৃমণ্ডলীর সামনে তুলে ধরেন॥
সংস্কার ভারতী মেদিনীপুর জেলার সদস্যরা তাঁদের সদস্য আশিষ সিংহের বাড়ির নাট-মঞ্চে নটরাজ বন্দনা এবং সংস্কৃতির ধারক ও বাহকদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে।
বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সাধক মাননীয় শ্রী গোপাল চন্দ্র নাগ মহাশয়কে জেলার পক্ষ থেকে এই দিন শিল্পী সম্মাননা দেওয়া হয়।

অপরদিকে,বাঁশবেড়িয়ার ‘গন্ধেশ্বরী নাটমন্দির’প্রাঙ্গনে সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের হুগলি জেলা আয়োজন করে গুরু পূজন ও শিল্পী সম্মাননা দিবস। নানাবিধ ঐতিহ্যবাহী আচারের দ্বারা – চরণ প্রখালোন, তিলক রচনা, এবং অন্যান্য পদ্ধতি – বিদ্যাবিহার ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাননীয়া শ্রীমতী গীতশ্রী মুখার্জীকে গুরুরূপে বরণ করে নেয়। সাংস্কৃতিক উপস্থাপনায় আমন্ত্রিত নৃত্যগোষ্ঠী মেঘমল্লার কালচারাল সোসাইটি এবং পায়েল ডান্স ইন্সটিটিউটের নিবেদন বহুজন প্রশংসিত॥
সোনারপুরের বৈকুন্ঠপুরে রিদ্ধি -সিদ্ধিভবনে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা আয়োজন করে গুরু পূজন ও শিল্পী সম্মাননা দিবস।
নানাবিধ ঐতিহ্যবাহী আচারের দ্বারা তিলক রচনা করে মাননীয় শ্রী সন্দীপ মল্লিক , আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কত্থক নৃত্য গুরু এবং শ্রী রঘুনাথ নন্দী,প্রসিদ্ধ তবলা বাদককে এইদিন গুরু রূপে বরণ করে নেওয়া হয়।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ডঃ জয়ন্ত রায় চৌধুরী মহাশয়, বিশিষ্ট সমাজসেবী, রাজপুর
বিদ্যানিধি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক, ডঃ পার্থসারথি দাস পট্টনায়েক, বিশিষ্ট তবলা বাদক, বিজ্ঞানী কৃষি দফতর,প:ব: সরকার , বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী মাননীয় অশোক ঘোষ॥
একইদিনে,বীরভূমের রবীন্দ্রসদন মঞ্চে সংস্কার ভারতী বীরভূম জেলা সমিতি গুরুপূর্ণিমা উপলক্ষে নটরাজ পুজন এবং সেই সাথে শিল্পী সম্মাননার আয়োজন করেছিল। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত কীর্তন শিল্পী অনাথবন্ধু ঘোষ মহাশয়কে শিল্পী গুরুরূপে বরণ করে নেওয়া হয়। একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপক রতন কাহার মহাশয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সাহিত্যিক নারায়ন ভট্টাচার্য্য মহাশয়। মাননীয় শিল্পী অনাথবন্ধু ঘোষের গৌর চন্দ্রিকা বর্ণনা ও ব্যাখ্যা ভাবের পরিবেশ তৈরি করে।অপূর্ব সুরেলা কন্ঠ এবং গায়কী শৈলী ও জ্ঞানগর্ভ শাস্ত্র আলোচনার মাধ্যমে এই ধ্রুপদী ঘরানার সহজিয়া সাধক-জন্মান্ধ শিল্পী অনাথবন্ধুর কন্ঠ নিঃসৃত কীর্তন বীরভূম জেলা সদরের সংস্কৃতির তীর্থস্থান রবীন্দ্রসদন অঙ্গনে সংস্কার ভারতীর মঞ্চে শ্রবণ করে দর্শকমন্ডলী এক অতীন্দ্রিয় ভাবময় ঈশ্বরীয় জগতে পৌঁছে গিয়েছিল।
অপরদিকে,সংস্কার ভারতী উত্তর কলকাতা জেলার সদস্যরা গুরু পূর্ণিমা উপলক্ষে কলকাতার ‘বয়েজ ওন’ হলে, এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জেলার সদস্যরা বন্ধু গৌরব ব্রহ্মচারী মহারাজকে সম্মাননা প্রদান করে।
পূজনীয় বন্ধু গৌরব ব্রহ্মচারী মহারাজের দেবাদিদেব নটরাজ এর প্রতি অন্তরের শ্রদ্ধা ও বর্তমান মূল্যবোধ ও ভাবধারা সম্বন্ধে প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা সমৃদ্ধ করে॥
সংস্কার ভারতী বর্ধমান জেলাও একই ভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে নটরাজ পূজন ও শিল্পী সম্মাননা দিবস পালন করে এবং বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী মাননীয়া সায়ন্তি ভট্টাচার্যকে শিল্পী সম্মাননা জানানো হয় । শ্রীগুরু পূর্ণিমায় আদিগুরু শ্রী নটরাজ পূজনের গুরুত্ব সকলের সামনে তুলে ধরেন শ্রী চন্দন সাহা॥
বাঁকুড়া জেলার উদ্যোগে নটরাজ পূজন দিবস মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয় বাঁকুড়া শহরের রামপুরের পাঞ্চজন্য ভবনে। এই অনুষ্ঠানে উদ্বোধক রূপে উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়া জেলার সঙ্ঘচালক শ্রী রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়॥
শুভ গুরুপূর্ণিমার দিন “গুরু সাক্ষাৎ পরমব্রহ্ম” এই রূপকথার সংস্কার ভারতী পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের তত্ত্বাবধানে নটরাজ বন্দনা ও শিল্পী সম্মাননা দিবস আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হোলো ভারতীয় সনাতনী সংস্কৃতি ও গুরু-শিষ্যপরম্পরা ভাবধারার যে আদর্শ তা জনসমক্ষে তুলে ধরা এবং প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে সেই ধারার প্রবাহমানতা অক্ষুণ্ণ রাখা॥
