প্রচলিত আছে, হিন্দু বাঙালীর পতন ১৯৭৭ এর পর থেকে l কিন্তু তার আগে কি আমরা খুব ভালো ছিলাম? নাকি ক্যান্সার শরীরে ছিল, আমরা বুঝতে পারিনি?

আসুন তপন সিনহা কি বলছেন একবার শুনি l সত্যজিৎ রায়, মৃনাল সেন বা ঋত্বিক ঘটকের মত তিনি বামপন্থী ছিলেন না বলে তাকে নিয়ে আলোচনা করতে বা তার কাজ নিয়ে বিশ্লেষণ করতে রাজি হন না বামপন্থীরা l এমনকি তরুণ মজুমদার বামপন্থী হয়েও সিপিএম এর প্রচার না করে ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করায় তাকেও বামপন্থীরা খুব একটা পছন্দ করেন না l এখন ইতিহাসের পাতায় বহু জিনিস লেখা থাকবে না, কারণ ইতিহাস বিজয়ীরা লেখে এবং সেই সময় বিজয়ী নেহেরু এবং ইন্দিরা গান্ধী l তাই তাঁদের তৈরি নারেটিভ মেনে জমিদারি কেড়ে নেয়া, ভূমি সংস্কার, বীমা, ব্যাংক ইত্যাদি জাতীয়করণ ইত্যাদি আজও বাঙালী গর্বের সঙ্গে স্মরণ করে l কিন্তু এই সংস্কার হিন্দু বাঙালী কোথায় দাঁড় করায়, সেটা আমাদের জানা দরকার l তপন সিনহা তাই ইতিহাসের কিছু সূত্র দিয়ে গেছেন তার এই কাজে l

ডঃ রণজিৎ গুহ বলেছিলেন ইতিহাসের একটা বড় উপাদান পাওয়া যায় সমকালীন সাহিত্য থেকে l আর আমাদের দেশের বিজ্ঞানী বা দার্শনিকরা শ্লোকের মাধ্যমে সব লিখে গেছেন l একটু ঘুরিয়ে লিখেছেন বহু সময়, যাতে রাজা বুঝতে না পারে যে তার সমালোচনা হচ্ছে l যেমন গুপী গায়েন বাঘা বায়েন বা হীরক রাজার দেশে l

কিন্তু আরও একটা কাজ যা আমরা জানি না বা বিশ্লেষণ করিনি, তা হল এই ‘হারমোনিয়াম’ l এক জমিদার তার কন্যার জন্য হারমোনিয়াম কেনেন এবং কিছুদিনের মধ্যে উনি মারা যান l মেয়ে বিধবা হয়ে ফিরে এসে এবং জমিদারি হারিয়ে সেটা বিক্রি করেন l কেনে এক মধ্যবিত্ত(প্রফুল্ল সেনের সময়), তারপরে সেটা যায় সোনাগাছিতে (নক্সাল আমলে) এবং সেইখান থেকে ২৫ বছর পরে(সিদ্ধার্থ রায়ের পরের দিকে) চলে আসে সেই জমিদার কন্যার কাছেই l এবং তখন সেই জমিদার কন্যা একজন আইএএস অফিসারের মেয়ের দেখাশুনার কাজ করে l মাত্র দুই দশকে বাঙালী হিন্দু জাতি নেহেরুভিয়ান সমাজতন্ত্রের জন্য কোথায় নেমে যায় তাকে একটা দুই ঘন্টার সিনেমায় দেখিয়ে গেছেন তপন সিনহা এবং জমিদার কন্যা হিসেবে তার স্ত্রী অরুন্ধুতি দেবী l একটা হারমোনিয়ামের মালিকানার পরিবর্তনকে কাহিনী বানিয়ে l

১৯৭৭ এর আগের দশ বছর পশ্চিমবঙ্গর সামাজিক পতনের উপর শঙ্কর, রমাপদ চৌধুরী, বাণী বসুর মত অনেকেই লিখে গেছেন, যা নিয়ে পরবর্তীকালে কিছু সিনেমা হয়েছে l যেমন চৌরঙ্গী, আপনজন, এখনই, শঙ্কর নারায়ণ ব্যাংক ইত্যাদি l সরাসরি লিখলে হয়তো তাঁদের লেখা ছাপাই হত না l

এক কথায় ১৯৭৭ কে না দাগিয়ে, ১৯৭৭ এর আগের পলিসি মেকারদের কি কি ভুলের জন্য কলকাতা ধংস হয় সেটাও আমাদের গবেষণা প্রয়োজন l সেই ভুল না শুধরালে এবং বহু পলিসির সংস্কার না আনলে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, পুরো উত্তভারত এবং উত্তর পূর্ব ভুগবে l আগামী দিনে কি কি সংস্কার আমাদের রাজ্যে প্রয়োজন সেটা বুঝে আমাদের কাজ শুরু করতে হবে l প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে গবেষণা করতে দেয়া উচিত l

এই বছর তপন সিনহা এবং অরুন্ধুতি দেবী দুই জনেরই জন্মশতবার্ষিকী l প্রণাম তাঁদের l

সুদীপ্ত গুহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.