UNESCO কে বলতে ইচ্ছে করছে – You should know, কেন? প্রথমেই বলি ইউনেস্কো ঠিক কি? United Nations Educational Scientific and Cultural Organization অর্থাৎ জাতিসংঘের তরফে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি প্রসারের জন্যই এই সংস্থা।
সম্প্রতি কোলকাতার দূর্গাপুজো ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেল। তাতে আমরা খুবই গর্বিত হলাম। আমার মতন নির্বোধ মানুষটা কিন্তু ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না যে সার্বজনিন দূর্গাপুজোর মধ্যে যে কালো মেঘ ছড়িয়ে আছে তাকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে ইউনেস্কো কিভাবে এই সিদ্ধান্ত নিল।
![](https://ritambangla.com/wp-content/uploads/2022/08/301408655_485120693440579_884169970357321645_n.jpg)
বারোয়ারী দূর্গাপুজোটা এখন পুরোপুরিই রাজনৈতিক। দু/একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি ছাড়া কেউই পুজো উদ্বোধনের ডাকই পায় না। তারাও আবার ৫০/৬০ টা করে পূজো একদিনেই উদ্বোধন করে। উদ্বোধনের সুবিধার্থে পূজোর সূচী এগিয়ে নিয়ে আসা হয় বা হচ্ছে। আর পূজোর উদ্যোক্তারাতো সবাই রাজনৈতিক চরিত্র। সরকার থেকে পূজোগুলোকে অনুদান দেওয়া হয়, যার পরিমান ২৪০ কোটি টাকা। এবছরই সেটা বাড়ান হয়েছে। যে রাজ্যের ৫.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা দেনা এবং যেখানে টাকার অভাবে কর্মিদের মাইনে দিতেও অসুবিধা হয় বা কোর্টের আদেশ সত্ত্বেও সরকার বকেয়া মেটাতে পারে না, সেখানে কোন যুক্তিতে যে ক্লাবগুলোকে এত টাকা দেওয়া হয় তা বুঝতে পারি না। তার সাথে বিদ্যুৎ বিলের ছাড়ও তো রয়েছে।
![](https://ritambangla.com/wp-content/uploads/2022/08/301484676_485120636773918_514368229692313719_n.jpg)
ব্যাপকভাবে শহরে গাছ-ছাটা দিয়ে পূজো-কম্মের সূচনা হয়। কেউ কি কখনও খেয়াল করেছি যে কোলকাতায় অল্প ঝড়েই এত গাছ পড়ে কেন? গাছগুলো দুলে দুলে ঝড়ের মোকাবিলা করে কিন্তু একদিকে বা অবৈজ্ঞানিক ভাবে গাছ ছাঁটার কারণে ওরা হাওয়ার সাথে লড়ার জন্য নাচতে পারে না। তাই অকালে ঝড়ে পরে, আর মরে।
সার্বজনীনটা শুরু হয় গাছ ছাটা দিয়ে আর শেষটা আমরা করি গঙ্গা বা নদী-নালাগুলোতে ঠাকুর ভাষান দিয়ে জল-দূষণ সৃষ্টির মাধ্যমে। মাঝপথে চাঁদার জুলুম, তারস্বরে মাইক বাজান, বিসর্জনের শোভাযাত্রায় শক্তি-প্রদর্শন ও শব্দ-দূষণ ঘটান, পার্ক ও খোলা জায়গাগুলো, এমনকি কোথাও কোথাও রাস্তা বন্ধ করে পূজোর আগে দু-মাস ও পরে একমাস ধরে তার দখল নেওয়া, একমাস যাবৎ দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটান, দরিদ্র নারায়ণ সেবা, বালক ভোজন এবং সংগঠকদের এমনকি এলাকার জনগণকেও চব্য/চোষ্য দিয়ে ভুড়ি ভোজনের ঢালাও বন্দোবস্ততো রয়েছেই। বিদ্যুৎ চুরির কথা আর নাই বা বললাম।
জনগণের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তার কোন হিসেব-নিকেশ পেশ না করে টু-পাইস কামানতো আছেই। এখন আবার কর্পোরেট সংস্থাগুলোও স্পনসর করছে। এই স্পনসরশিপের দুটো দিক রয়েছে। মোটা টাকা চাঁদা দিয়ে ওরা প্রভাবশালীদের প্রভাব বকলমে খরিদ করেন ও নিজেদেরকে বিজ্ঞাপিত করে থাকেন। আসলে টাকাটা কিন্তু জনগণের কাছ থেকেই সুদে ও আসলে তুলে নেওয়া হয়।
![](https://ritambangla.com/wp-content/uploads/2022/08/300600538_485120870107228_3875331444447348118_n.jpg)
রাজনৈতিক দাদারা কোন আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে পূজো সংগঠিত করার নামে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রচারপর্ব সমাধা করেন। তারসাথে বস্ত্রদান ও অর্থপ্রদান তো রয়েছেই। দেশের সব রাজ্যতেই একটা করে মূল উৎসব পর্ব থাকে কিন্তু কোথাও রাজ্য সরকারী অফিসে তারজন্য ১১ দিন ছুটি দেওয়া হয় না।
এখানেই শেষ নয়। এবার আবার নতুন একটা পালা যোগ হয়েছে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়াটা সেলিব্রেট করতে হবে না? তাই ১লা সেপ্টেম্বর মিছিল হবে। মিছিল নগরিতে মিছিল আমাদের গা-সওয়া – কিন্তু এই মিছিল করার জন্য সরকারি আপিস ছুটি দিয়ে দেওয়া হবে এবং কোভিড কারণে মাসের পর মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার পরেও, পড়াশোনাকে বিসর্জন দিয়ে স্কুল-কলেজগুলোকেও মিছিলে সামিল করতে হবে – এটা কেমন কথা?
তাই বলতে ইচ্ছে করছে – ইউনেস্কো – শুনতে কি পাচ্ছ? মনে হচ্ছে পাওনি, চুপিচুপি বলি তোমায়, কোলকাতার সার্বজনীন পূজোকে কেন্দ্র করে যে কান্ড-কারখানাগুলো ঘটে তা কি তোমাদের ঘোষিত শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির মানদন্ডে কখনও বিচার করে দেখেছো?
![](https://ritambangla.com/wp-content/uploads/2022/08/301509204_485120746773907_2262910901273981268_n.jpg)
একথা ঠিক যে দূর্গা-পূজোর সাথে আমাদের প্রচুর সাংস্কৃতিক ইতিহাস ও কৃষ্টি জড়িত। অনেক ভালো দিকও এর মধ্যে আমরা পাই কিন্তু এটা যে রাজনৈতিক দলগুলো পুরোপুরি হাইজ্যাক করে নিয়েছে – সেটাও তোমরা একটু দেখো – প্লিস।।
সুভাষ দত্ত