এদেশ ছিল পরম বৈভবশালী , পরবর্তীকালে বিদেশী শত্রুর আক্রমণ ও পরাধীনতার গ্লানি, দেশ জুড়ে শুরু হল স্বাধীনতার মুক্তি সংগ্রাম। দেশের স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পর্বে নতুন ভারত, সমৃদ্ধশালী ভারত গড়ার আহ্বান জানিয়ে সংস্কার ভারতী দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা- নমামি ভারতবর্ষম্।
মাতৃভূমি ভারতবর্ষের সুপ্রাচীন সংস্কৃতি তথা বেদ-বেদান্ত, রামায়ণ-মহাভারত মহাকাব্যের ঐতিহ্যকে স্মরণ ক’রে ভারতমাতার পরম বৈভবশালী অতীত বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশী শত্রুর আক্রমণ ও পরাধীনতার গ্লানি ও যন্ত্রণার কথাও বর্ণিত হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশমাতৃকার লক্ষ লক্ষ বীর সন্তানদের আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতার বীরগাথাও উল্লিখিত হয়েছে। নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানে সজ্জিত ভারতমায়ের সংস্কৃতি ও রীতিনীতির এক সম্মিলিত রূপ এবং এদেশের সনাতন ধর্ম ও সংস্কৃতির মূলমন্ত্র হ’ল কোটি কোটি সন্তানের ঐক্যসূত্র, যা অবলম্বন ক’রে আগামীদিনে নতুন ভারত, সমৃদ্ধশালী ভারত গড়ার কর্মযজ্ঞে তরুণ প্রজন্মকে ব্রতী হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে ‘নমামি ভারতবর্ষম’ নৃত্যগীতি আলেখ্যের মাধ্যমে।
দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের পাঁচটি জেলার ৫৫ জন নৃত্যশিল্পীর অংশগ্রহণে একটি সফল উপস্থাপনা রাখল সংস্কার ভারতী। অনুষ্ঠানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল নৃত্যনাট্যের ভাষ্য, সঙ্গীত রচনা, সুর সংযোজনে সংস্কার ভারতী শিল্পীরা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলা গীত, ভাষ্য রচনা ও আবহ চিত্র প্রক্ষেপণ- অমিতাভ মুখোপাধ্যায়। সুরকার ও সঙ্গীত সংযোজন ক’রে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন শিল্পী ধ্রুবজিৎ ভট্টাচার্য। যন্ত্রানুষঙ্গে অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়। আলেখ্যতে মোট সাতটি গান ব্যবহার করা হয়েছে। একটি বাংলা এবং ছয়টি হিন্দি। হিন্দি গীত রচনা করেছেন- সমাজ কুমার বসু।

নৃত্যনির্মিতিতে তিনটি সাংস্কৃতিক সংস্থার শিল্পীদের উপস্থাপনা দর্শকের প্রশংসা অর্জন করেছে । ‘ভারত আমার স্বদেশ আমার…’ এবং ‘পহাড়োসে বুলন্দ আপনে…’ গান দুটির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে সিউড়ি শৃঞ্জন সংস্থার শিল্পীরা। নৃত্য পরিচালনায় মৌমিতা বিষ্ণু সেনগুপ্ত। নৃত্যাংশে রিম্পা হাজরা, সুস্মিতা গিরি, তিতলি গিরি, দেবস্মিতা দত্ত, মৌমিতা সাহা, পর্ণশ্রী দাস, নন্দিনী পাল, তানিয়া চ্যাটার্জ্জী, পৌলমী সাধু, সপ্তিকা ঘোষ ও মৌমিতা বিষ্ণু সেনগুপ্ত। এছাড়াও হিন্দি দুটি গান- ‘মুনিঋষিয়োঁনে শুনাই…’, ‘চলিরে চলিরে চলি…’ গানে নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যরিদম্ সাংস্কৃতিক সংস্থার শিল্পীরা। পরিচালনায় মেহেন্দি চক্রবর্তী।নৃত্যাংশে- রেশমী সিং, দেবলীনা দাস, রাহুল দাস, রিয়া সরকার, স্বর্ণালী দাস, ঈশানি পাল, অন্বেষা রায়, আর্শিয়া চ্যাটার্জী ও রিপন জানা।
অপর তিনটি গান – ‘শুনকে ভারত মা কী এ পুকার…’, ‘সচ্ কী রাহপে হম চলতে রহেঙ্গে…’ ও ‘পূরব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ…’ গানে নৃত্য পরিবেশন করেন গৌড়ীয় চারুকলা ভারতী। পরিচালনায় : সৌম্য ভৌমিক। নৃত্যাংশে- শ্রীজিতা মণ্ডল, দেবত্রী মণ্ডল, বিদিত্বা চ্যাটার্জী, রাজন্যা চৌধুরী, শ্রেয়সী মণ্ডল, মেঘা বাহাদুর, স্বীকৃতি মাজী, দীপিকা সিং, পারমিতা রায়, প্রীতিরাণী দাস, পূরবী পাত্র, সৃজনা প্রামাণিক, মৌবনি বসাক, কৌশিকা সাউ, সায়নী পরামানিক, দেবজ্যোতি মল্লিক, সুরজিৎ দাস, বাবিন পাল, শ্রীদীপ কর্মকার, রাকেশ মাজী, অনুষ্কা ওঝা, শ্রেয়া পট্টনায়ক, সোনিয়া সামন্ত, সমৃদ্ধি আদক, মেকনা বাগ, স্নেহা মান্না, সুস্মিতা পাল ও সায়ন্তী মণ্ডল।
সঙ্গীতাংশে ছিলেন – ধ্রুবজিৎ ভট্টাচার্য, লক্ষ্মীনারায়ণ সরকার, বাসুদেব বসু, অরুণাভ পাত্র, রুমা মুখোপাধ্যায়, অঞ্জনা মল্লিক, রুমা মুখার্জি, দেবারতি চৌধুরী, অঙ্কিতা দাস, পারমিতা নিয়োগী, সুনীতা রায় কর্মকার, সুন্দরা ব্যানার্জি, মীরা দাস, সোনালী উত্থাসনী, কাকলি মুখার্জি, অনামিকা হালদার, সুজাতা ভট্টাচার্য ও রীতা ঘোষ।
ভাষ্য পাঠ শ্যামাপ্রসাদ ভট্টাচার্য, লিপিকা চৌধুরী ও বৈশালী ভট্টাচার্য।
সংস্কার ভারতী দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের সাধারণ সম্পাদক ভরত কুণ্ডু বলেন, স্বাধীনতার ৭৫- অমৃত মহোৎসব উপলক্ষ্যে আমরা বছর ব্যাপী সাংস্কৃতিক নানা বিধার উপর কাজ করছি। সংস্কার ভারতীর নৃত্য ও সঙ্গীত বিধার এই উপস্থাপনা দর্শকদের মনকে স্পর্শ করেছে- এটা আমাদের একটা পরম প্রাপ্তি।
কবিগুরুর জন্মদিনের মহেন্দ্র ক্ষণে সংস্কার ভারতী দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আসর বসেছিল কলকাতার আই.সি.সি.আর মঞ্চে।স্বাধীনতার ৭৫- অমৃত মহোৎসব পর্বে তৃতীয় পর্যায়ের বিশেষ অনুষ্ঠানের সূচনা হল- ‘ও আমার দেশের মাটি…’ রবীন্দ্র গানের মাধ্যমেই। সংস্কার ভারতী সঙ্গীত গোষ্ঠীর শিল্পীদের সম্মিলিত কন্ঠে রবীন্দ্র গানেই কবি প্রণাম নিবেদিত হল।
প্রারম্ভিক পর্বে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী শ্রী সুধীরচন্দ্র মৈত্র মহাশয়কে সম্মাননা জানানো হল। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সন্তুরবাদক শিল্পী পণ্ডিত তরুণ ভট্টাচার্য, সংস্কার ভারতীর কেন্দ্রীয় অধিকারী নীলাঞ্জনা রায়, সংস্কার ভারতী দক্ষিণবঙ্গ প্রান্তের সভাপতি শিক্ষাবিদ ডঃ সরূপ প্রসাদ ঘোষ প্রমুখ।