সবজি : শীতকালীন নানান সবজি চাষের জন্য বীজতলা তৈরী করুন ভাদ্রমাসে। এক মিটার চওড়া, ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং উপযুক্ত দৈঘ্যের বীজতলা বানিয়ে নিন। বীজ শোধন করে সেখানে বুনুন। উপযুক্ত পুষ্ট ও নীরোগ চারা মূল জমিতে রোপণ করুন। ভাদ্রমাস পেঁয়াজ, মাঝ-মরশুমি ফুলকপি, জলদি সাধারণ বাঁধাকপি, জলদি মটরশুঁটি, ফরাসবীন এবং গাজর বোনার বা লাগানোর সঠিক সময়। চারা বা বীজ বসাতে হবে নিম্নলিখিত দূরত্বে বড় করে পেঁয়াজ ১৫*১০ সেমি, ছাঁচি পেঁয়াজ ৩০x১৫ সেমি, জলদি ও মাঝারি ফুলকপি ৬০x৪৫ সেমি, মাঝারি ও নাবি জাতের ফুলকপি ৬০x৪৫ সেমি, জলদি বাঁধাকপি ৬০x৪৫সেমি, জলদি মটরশুঁটি ৩০x৫-১০ সেমি, লতানে ফরাস-বীন ৯০x১৫-২০ সেমি, বেঁটে ফরাস-বীন ৪৫x১৫-২০সেমি।
শীতকালীন সবজির জমি তৈরির জন্য উপযুক্ত মাত্রায় কেঁচোসার বা গোবরসার প্রয়োগ করতে হবে। হেক্টর প্রতি জৈবসার প্রয়োগের মাত্রা নিম্নরূপ, পেঁয়াজে ৫-৬ টন কেঁচোসার এবং ফুলকপি, বাঁধাকপি, ফরাস-বীন ও গাজরে ১৫-২০ টন এবং মটরশুঁটিতে ২০-২৫ টন গোবরসার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি হেক্টর পরিমাণ জমির জন্য পেঁয়াজে ১২০ঃ৫০-৬০৬০-১০০, ফুলকপিতে ১২৫ – ২০০৮০-১০০ঃ৬০-১০০, বাঁধাকপিতে ১৫০- ২০০ঃ৮০-১০০ঃ ৮০- ১০০, মটরশুঁটিতে ২০-২৫ ৬০-৮০ঃ৫০-৬, ফরাস-বীনে ৬০-৮০ ৬০-৮০ঃ৪০ এবং গাজরে ৫০ঃ৪০ঃ৫০ কেজি নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। অণুখাদ্যের অভাবজনিত কারণে সুপারিশকৃত অণুখাদ্য প্রয়োগও জরুরী। এক হেক্টর হল সাড়ে সাত বিঘা পরিমাণ জমি। নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশ সারকে যথাক্রমে ইউরিয়া, সিঙ্গল সুপার ফসফেট ও মিউরিয়েট অফ পটাশে হিসেব করতে হলে ২.২, ৬.১ এবং ১.৬ দিয়ে গুণ করে নিতে হবে। জলদি ও মাঝারি জাতের ফুলকপির জন্য বিঘা প্রতি ৬০-৭০ গ্রাম, জলদি বাঁধাকপির জন্য ৮০-৯০ গ্রাম, জলদি মটরশুঁটির জন্য ১০-১২ কেজি, ফরাস বীনের জন্য ১৩-১৪ কেজি এবং গাজরের জন্য ১.৬-২ কেজি বীজ দরকার। মাঝারি ফুলকপির জাতগুলি হচ্ছে পন্থ শুভ্র, হিসার-১, ইম্প্রভ জাপানিজ, পুসাশরদ, পন্থ গোবি-৪, পাঞ্জাব জায়েন্ট-৩৫ অথবা ডি-৯৬, পুসা আর্লি সিন্থেটিক, পুসা হিমজ্যোতি, পুসা শুভ্র। বাঁধাকপির জাতের মধ্যে গ্রীন এক্সপ্রেস, রেয়ার বল, মাস্টার এক্সপ্রেস, কৃষ্ণা, হরিরাণী, ট্রপিকাল ইত্যাদি উন্নত জাত। মটরশুঁটির জলদি জাতের মধ্যে আর্কেল, হিসার হরিৎ, জওহর মটর-৪, হরভজন, আলাস্কা, আর্লি বাজার, মেটিওর, আসওজি, অলডারম্যান, আজাদ পি-১ ইত্যাদি উন্নত জাত। গাজরের উন্নত জাতগুলি হল ন্যানটিস, পুসা কেশর, পুসা মেঘালী ইত্যাদি।
আমনধান : শ্রাবণমাসে ধান রোয়ার কাজ শেষ না হয়ে থাকলে ভাদ্রমাসের মধ্যে রোয়ার কাজ শেষ করুন। যারা শ্রাবণ কিংবা আষাঢ়মাসের শেষে ধান রোয়া করে ফেলেছেন তারা সময় বুঝে প্রথম (রোয়ার ৩ সপ্তাহ পর) বা দ্বিতীয়(রোয়ার ৬ সপ্তাহ পর) নিড়ানির পরে চাপান সার দিন। জমি তৈরির পর্বে শেষ চাষের সময় সুপারিশকৃত নাইট্রোজেন সারের এক চতুর্থাংশ, সম্পূর্ণ ফসফেট ও অর্ধেক পরিমাণ পটাশ সার দেওয়া হয়। এখন প্রথম চাপান-সার হিসাবে অর্ধেক নাইট্রোজেন ও অর্ধেক পটাশ সার দিতে হবে। দ্বিতীয় চাপানের সময় বাকী এক চতুর্থাংশ নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হবে। আগাছা দমনের জন্য চারা রোয়ার চার দিনের মাথায় প্রতি বিঘা জমির জন্য ৬০ লিটার জলে ২৫০ মিলি বুটাক্লোর ৫০ ইসি গুলিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। তা না হলে নিড়ানির সাহায্যে বা হাতে আগাছা তুলে ফেলতে হবে চাপান সার দেবার ঠিক আগে। আমনধানে প্রথম চাপান হিসাবে বিঘা প্রতি কেজি নাইট্রোজেন এবং ৩ কেজি পটাশ এবং দ্বিতীয় চাপান হিসাবে ৩ কেজি নাইট্রোজেন প্রয়োগ করতে হবে।
আখঃ শ্রাবণ মাসে আখে সুপারিকৃত চাপান সার দিয়ে ভেলি তুলে দেওয়ার কাজ শেষ হয়ে থাকলে ভাদ্রমাসে শুকনো পাতা দিয়ে কয়েক বাণ্ডিল আখ একসঙ্গে বেঁধে দেওয়ার কাজ শেষ করতে হবে, যাতে ঝড়বৃষ্টিতে আখ মাটিতে পড়ে না যায়। এইসময় আখের মাজরা পোকা ও ধ্বসা রোগের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জলদি আলু ঃ জলদি আলু আশ্বিনমাস থেকে লাগানো শুরু হলেও ভাদ্রমাস থেকেও লাগানো যায়। কুফরি অশোকা, কুফরি জ্যোতি, কুফরি চন্দ্রমুখী, কুফরি জওহর জাতের আলু বীজ পরিমাণ মত সংগ্রহ করে ফেলতে হবে। বিঘা প্রতি আড়াই থেকে তিন কুইন্টাল বীজ আলুর দরকার হবে। বীজ আলু শোধন করে বসাবেন, ম্যানকোজেবের ০.২৫ শতাংশ দ্রবণে ১০ মিনিট ভিজিয়ে শোধন করা যায়। বিঘা প্রতি মোট ১০ কুইন্টাল জৈবসার এবং যথাক্রমে ৩০, ২০ এবং ২০ কেজি হারে নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশ সার ব্যবহার করতে হবে। শেষ চাষের সময় জৈবসার ছাড়াও বিঘা প্রতি ১০ কেজি নাইট্রোজেন এবং পুরোটা ফসফেট ও পটাশ সার প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া প্রয়োজন অনুসারে বিঘা প্রতি ৩ কেজি হারে জিঙ্ক সালফেট মূল সার হিসাবে জমিতে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে আলু বসানোর ২০ ও ৪০ দিনের মাথায় বাকী নাইট্রোজেন সারের অর্ধেক করে প্রয়োগ করতে হবে। আলু বসানোর সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৬০ সেন্টিমিটার এবং সারিতে গাছের দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার।
কলাই : ভাদ্রমাসে খরিফ ফসল হিসাবে কলাই বোনা যাবে, যা শ্রাবণের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই শুরু করা যায়। বিঘা প্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন কেজি বীজ লাগবে, বীজ শোধন করতে প্রতি কেজিতে ২ গ্রাম কার্বেণ্ডাজিম মিশিয়ে দিতে হবে। বীজের সঙ্গে নির্দিষ্ট রাইজোবিয়াম জীবাণু সার ব্যবহার করা উচিত। কলাই-এর উন্নত জাতগুলি হচ্ছে সারদা, গৌতম, উত্তরা, কালিন্দী প্রভৃতি। জমি তৈরি করতে জৈবসার ছাড়াও বিঘা প্রতি যথাক্রমে ৩, ৫ এবং ৫ কেজি নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী