একে বন্যার জলে ডুবেছে কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের (Kaziranga National Park) বিস্তীর্ণ অংশ। দিশেহারা বন্যপ্রাণীরা প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতির এই বিপর্যয়ের উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে নেমে এসেছে চোরাশিকারিদের উৎপাত। কাজিরাঙ্গায় অ্যান্টি-পোচিং ক্যাম্প অর্থাৎ একেবারে রক্ষাকারীদের নাকের ডগা থেকে একটি একশৃঙ্গ গণ্ডারকে মেরে তার খড়গ কেটে নিয়ে গেল চোরাশিকারির দল। উদ্ধার হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। এই ঘটনা কার্যত ধাক্কা খেয়েছেন বনকর্তারা। চোরাশিকারি সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে বলে কাজিরাঙ্গা উদ্যান সূত্রে খবর।
শনিবার বেলা ১১টা নাগাদ নজরে পড়ে ঘটনাটা। কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের গবরাইয়ে অ্যান্টি-পোচিং ক্যাম্পের সামনে একটি স্ত্রী একশৃঙ্খ গণ্ডারের দেহ পড়ে রয়েছে। তার খড়গটি নেই। গণ্ডারের দেহ ঘিরে পড়ে কয়েকটি বুলেট, থ্রি নট থ্রি রাইফেলের খালি কার্তুজ। সেসব দেখেই সকলে বুঝতে পারেন, গণ্ডারটিকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। আর তারপর খড়গটি কেটে নিয়ে চলে গিয়েছে চোরাশিকারির দল।
এই দৃশ্যে কার্যত স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন বনকর্তারা। কীভাবে তাঁদের নজর এড়িয়ে অ্যান্টি-পোচিং ক্যাম্প থেকেই এমনটা ঘটল, তা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না কেউ। এক বনকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, শুক্রবার ভোররাতে গণ্ডারটি মারা হয়েছে। তারপর সকালের দিকে পালিয়েছে চোরাশিকারি। কর্দমাক্ত জমিতে তাদের পায়ের ছাপ দেখে অনেকটাই স্পষ্ট বনকর্মীদের কাছে। সেই সূত্র ধরেই একজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কাজিরাঙ্গা কর্তৃপক্ষ।
কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান বিখ্যাত একশৃঙ্গ গণ্ডারের জন্য। সেই কারণেই এরা সবসময় চোরাশিকারিদের টার্গেট। একসময়ে এত বেশি একশৃঙ্গ গণ্ডার শিকার হত যে বিরল এবং বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে এদের চিহ্নিত করে লাল তালিকাভুক্ত করেছিল আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংস্থা। তারপর থেকে এদের বাঁচিয়ে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে কাজিরাঙ্গা কর্তৃপক্ষ। তবুও এই মুহূর্তে একশৃঙ্গ গণ্ডারের সংখ্যা হাতে গোনা। প্রতি বছর বর্ষার সময়ে কাজিরাঙ্গায় চোরাশিকারিদের দাপট বাড়ে। তা প্রতিরোধে ব্যবস্থাও করা হয়। আর এ বছর বন্যার জলে ভেসেছে জাতীয় উদ্যান। বাস্তুহারা হয়েছে অনেক বন্যপ্রাণীই। তাতেও এমন একটি ঘটনায় স্বভাবতই উদ্বেগ অনেকটাই বেড়েছে।