দিল্লীতে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ফল নিয়ে আজ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্নধরণের বিজেপি-বিরোধীদের উল্লাস বেলাগাম হয়ে উঠেছে প্রত্যাশা মতোই। কিন্তু এঁদের কিছু কথা মনে করিয়ে দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।
১) দিল্লি বিধানসভা দেশের বহু বিধানসভার একটি। ভারতীয় জনতা পার্টি জিততে পারেনি কিন্তু, সিট ও ভোট বেড়েছে বই কমেনি। সুতরাং “বিজেপি’র মুখ পুড়ল”, “হতাশ মোদি-শাহ” ইত্যাদি পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিচ্ছু নয়।
২) এই দলটির নাম ভারতীয় জনতা পার্টি। এটি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নয় যে, ঠিক ইলেকশনের আগের মূহুর্তে মনে পড়বে, আমাদের এবার মাঠে নামতে হবে। যদি দলটিকে চিনে থাকি তবে, আত্মসমালোচনা এবং বিশ্লেষণ আজ থেকেই শুরু হয়ে যাবে। সেদিক থেকে দেখলে এই হার সাপে বর। আত্মতুষ্টি আসতে দেবে না নেতা-কার্যকর্তা-কর্মী-সদস্য-সমর্থকদের মধ্যে।
৩) জনসাধারণের রায় মাথা পেতেই নিতে হয়। কিন্তু, একথাও অনস্বীকার্য যে, এই পরাজয়ে বিজেপির নিজের দায় যেমন আছে তেমনি, এই হার কিছুটা হলেও ডোল-রাজনীতির কাছে হার। বিজেপি ভারতীয় রাজনীতির দীর্ঘদিনের এই ধারাকে মোকাবিলার রাস্তা চিন্তনের মাধ্যমে বের করতে সক্ষম হবে না এমন ভাবনায় খুব একটা যুক্তি নেই।
৪) ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদের সংখ্যা একার ক্ষমতাতেই ৩০০’র উপরে। এত বড় যাদের শরীর, তাদের দিল্লিতে খাওয়া সামান্য ছ্যাঁকা সারাতে কিলো কিলো ত দূর, এক টিউব বার্নলও লাগে না। একটু ঠান্ডা জল ছোঁয়ালেই কাজ হয়ে যায়। কাজেই, যাঁরা বিজেপির দফতরগুলিতে বার্নলের লরি পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন তাঁরা বরং ওগুলো নিজেদের গুদামেই রেখে দিলেই ভালো করবেন। কারণ সাম্প্রতিক অতীতের কথা মনে করলেই, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলা যায় যে, অতীতের বহুবারের মতোই বিজেপি এঁদের বার্নল লাগানোর মতো বহু বহু পরিস্থিতি উপহার দেবে।
৫) আমাদের অঙ্গরাজ্যের শাসক “সর্ব্বভারতীয়” দলটির দিল্লিতে একটিও প্রার্থী দেয়ার মুরোদ হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও যদি তাঁরা দিল্লির ফলাফলে মামাটিমানুs এর জয় দেখতে পান তবে সেটা তাঁদের মানসিক সমস্যা। কোনো ঘটনায় কিছু মানুষের মাথায় ডোপামিন নিঃসরণ ঘটলে তাতে ক্ষতি নেই ঠিকই কিন্তু, সেটা ভুল স্টিমুলেন্টের জন্যই যদি ক্রমান্বয়ে হতেই থাকে তবে ব্যাপারটা কিন্তু ইমমিডিয়েট মেডিক্যাল এটেনশন দাবি করে।
৬) ঐ যাদের নামও নিতে নেই, দিল্লি নির্বাচনে তাদের ভোটের শতাংশঃ রুশপন্থী – ০.০৩ এবং চীনপন্থী – ০.০১। মহাভারতে রাজা পান্ডুর, নিয়োগপ্রথার মাধ্যমে নিজের স্ত্রীদের গর্ভবতী করার পর যে-আনন্দ, এদের আনন্দ ঠিক সেই গোত্রের। বীর্য তার নয় ত কী, গর্ভ ত তার বিয়ে করা স্ত্রী এরই! হিন্দু মহাকাব্য যে এখনও কতো প্রাসঙ্গিক তা এই আমি-লজ্জিত-আমি-হিন্দু’রাই যেভাবে বুঝিয়ে দেয় তা চমকপ্রদ বটে।
৭) কাশ্মীর হয়েছে, রামমন্দির মামলায় জয় হয়েছে, সিএএ কার্যকরী হয়ে যাবে। কিন্তু সেসব মিটতে না মিটতেই এবার নতুন ঝটকা দিতে আসছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। ভারতীয় জনতা পার্টি নিজের কাজ করেই যাচ্ছে আর, আপনারা স্রেফ নিষ্ফল লম্ফঝম্প আর ফেবু-বিপ্লব ছাড়া আর কিচ্ছু করছেন না। করতে পারবেনও না। মাণিকবাবু ছাগলের তৃতীয় সন্তান শুধু লালেদেরকে বলেছিলেন। বস্তুতঃ বিজেপি আর কংগ্রেস ছাড়া, সর্বভারতীয় রাজনীতির নিরিখে আর সকলেই তাই এবং, দ্বিতীয় দলটি আর কতদিন “জাতীয়” থাকতে পারবে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
অতএব, যান, ঠান্ডা হয়ে বসুন। ডিপ্রেশনের মতোই, ইউফোরিয়াও বাড়াবাড়ি মাত্রায় হলে স্নায়ুবৈকল্য থেকে মস্তিষ্ক বিকৃতি পর্যন্ত সবই ঘটতে পারে। বিরোধীবিহীন শাসন কোনো শাসকের পক্ষেই ভালো নয় আমাদের মতো ব্যবস্থায়। ভারতীয় জনতা পার্টির স্বার্থেই চাইছি আপনারা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন। নইলে লোকে বলবে বিজেপি ফাঁকা মাঠে গোল দেয়।
~ চম্পকদ্যুতি মজুমদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.