SIR Case: ভয়ংকর! SIR-এর কাজের চাপে আত্মঘাতী BLO! এনুমেরাশন ফর্ম হাতে নিয়েই বন্ধ ঘরে…

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision বা SIR) প্রক্রিয়ার অতিরিক্ত কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরে কেরলে (Kerala) এক বুথ লেভেল অফিসার (BLO) আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কান্নুরের পয়ান্নুরের বাসিন্দা আনিস জর্জ (Anis George) (৫৫) নামে এই বিএলও-র ঝুলন্ত দেহ রবিবার দুপুরে তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিস। এই মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেরল সহ পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিএলও-দের উপর কাজের চাপ নিয়ে তীব্র বিতর্ক ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

কেরলে আত্মহত্যার ঘটনা এবং অভিযোগ

পেশায় পিয়ন হলেও আনিস জর্জ স্থানীয় একটি সরকারি স্কুলে কাজ করতেন এবং নির্বাচন কমিশনের নিযুক্ত বিএলও হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। পরিবার ও বন্ধুদের দাবি, এসআইআর-এর কাজ নিয়ে আনিস ভয়ানক মানসিক চাপে ছিলেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু শ্যাম জানিয়েছেন, আনিসকে সবসময় চিন্তিত দেখাত।

পরিবারের অভিযোগ, শনিবার গভীর রাত দুটো পর্যন্ত আনিস ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য ডেটা গোছানো এবং এনুমারেশন ফর্ম তৈরির কাজ করছিলেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিলি ও সংগ্রহ করার দ্বৈত দায়িত্ব তাঁর উপর ছিল। এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রায়ই ফোন করে দ্রুত কাজ শেষ করার তাগাদা দিতেন বলে পরিবার জানিয়েছে।

কেরলে কাজ বয়কট এবং রাজনৈতিক চাপানউতোর

আনিস জর্জের মৃত্যুর পর কেরলে এসআইআর-এর কাজ প্রায় থমকে গেছে। অতিরিক্ত কাজের চাপের প্রতিবাদে বুথ স্তরের আধিকারিক (বিএলও)-রা এই কাজ বয়কটের ডাক দিয়েছেন। রাজ্যের শিক্ষক ও সরকারি কর্মীদের সংগঠনগুলি তিরুঅনন্তপুরমে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে অতিরিক্ত কাজের চাপ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে।

এই ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। কেরলের বিরোধী দল কংগ্রেস শাসক দল সিপিআই(এম)-এর দিকে আঙুল তুলেছে। বিরোধী দলনেতা ভিডি সতীশন অভিযোগ করেছেন যে বিজেপি এবং সিপিআই(এম) আসলে কংগ্রেসের ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে চাইছে এবং এই কাজে বাধা দেওয়ায় আনিসকে সিপিএম কর্মীরা হুমকিও দিয়েছিল। তিনি এই মৃত্যুতে সিপিএম কর্মীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, সিপিএম নেতা ইপি জয়রাজন জানিয়েছেন, নিহতের পরিবার তাঁদের জানিয়েছে যে তিনি এসআইআর-এর কাজের জন্য চাপে ছিলেন এবং তিনি পাল্টা কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলেছেন।

পশ্চিমবঙ্গেও একই চাপ, উঠেছে মৃত্যুর বিতর্ক

এসআইআর-এর প্রস্তুতি শুধু কেরলেই নয়, পশ্চিমবঙ্গেও পুরোদমে চলছে। ঠিক এক সপ্তাহ আগে পূর্ব বর্ধমানের মেমারি এলাকায় নমিতা হাঁসদা নামে আরও এক বিএলও-র মৃত্যু ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। পরিবারের দাবি ছিল, লাগাতার কাজের চাপের জেরে তিনি ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গের বিএলও-রাও এই অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়ে অভিযোগ জানাচ্ছেন। কয়েকজন আধিকারিক কাজের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলেও খবর।

নির্বাচন কমিশনের সময়সূচি ও বিরোধীদের আপত্তি

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএলও-রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমারেশন ফর্ম বিলি করবেন। ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি ধরে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে এবং ৯ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ পাবে।

তবে এসআইআর নিয়ে শুরু থেকেই বিরোধীরা আপত্তি জানাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাপ দিচ্ছে কর্মীদের উপর। কেরলেও শাসক সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস – উভয় দলই একই সুরে কথা বলছে। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা রিজিল মাক্কুট্টি অভিযোগ করেছেন, ‘বিজেপির এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিএলও-দের শোষণ করা হচ্ছে।’

আনিস জর্জের পরিবার সুবিচারের দাবিতে অনড়। তাঁদের একটাই দাবি— যাঁদের মানসিক চাপে আনিসের মৃত্যু, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.