আট মাসের মেয়েকে শতরান উপহার রাহুলের, ভারতীয় সেনাকে সেঞ্চুরি উৎসর্গ জওয়ান-পুত্র জুরেলের

ইংল্যান্ড সফরে ভাল পারফরম্যান্সের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টেই শতরান। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাহীন ভারতীয় দলকে ব্যাট হাতে ভরসা দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, শুক্রবার অহমদাবাদে শতরানের পর মুখে দুই আঙুল ঢুকিয়ে নতুন ধরনের উচ্ছ্বাস প্রকাশও করেছেন। দিনের খেলা শেষে সব কিছু নিয়ে কথা বললেন রাহুল। শতরান করেছেন ধ্রুব জুরেলও। তাঁর উচ্ছ্বাসের ধরনও নজর কেড়েছে।

দলকে সাহায্য করতে পেরে খুশি ৩১ বছরের রাহুল। সাবলীল ইনিংস খেলেও জানিয়ে দিলেন অহমদাবাদের ২২ গজ ব্যাট করার জন্য খুব সহজ ছিল না। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে শতরান তাঁকে তৃপ্তি দিচ্ছে। তার উপর ৩২১১ দিন পর দেশের মাটিতে দ্বিতীয় টেস্ট শতরান করলেন। শতরানের পর বিশেষ ধরনের উচ্ছ্বাস প্রকাশ নিয়ে রাহুল বললেন, ‘‘তেমন কিছু নয়। মেয়েকে উপহার দিলাম শতরানটা। ওর জন্যই ও ভাবে উচ্ছ্বাস করেছি।’’ উল্লেখ্য, গত মার্চে রাহুলের স্ত্রী আতিয়া শেট্টি প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তাঁদের মেয়ে এভারার বয়স এখন আট মাস।

গত অক্টোবরে ভারতের এক দিনের এবং টেস্ট দলের প্রথম একাদশ থেকে বাদ পড়েছিলেন রাহুল। টানা ব্যর্থতা তাঁকে ছিটকে দিয়েছিল। ৩১ বছরের ব্যাটারের ক্রিকেটজীবন নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। কিন্তু নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার তাগিদে ফিরে এসেছেন চেনা মেজাজে। এখন ধারাবাহিক ভাবে রান করছেন। তাঁকে প্রথম একাদশের বাইরে রাখার কথা ভাবতে পারছেন না গৌতম গম্ভীরও। গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে ঋষভ পন্থ থাকা সত্ত্বেও তিনিই ছিলেন প্রথম উইকেটরক্ষক।

নিজেকে নতুন ভাবে ফিরে পাওয়া নিয়ে রাহুল বলেছেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে ব্যাটিং দারুণ উপভোগ করছি। বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে খেলছি। ইংল্যান্ডে রান পেয়ে দারুণ লেগেছে। মজা পেয়েছি ওখানে খেলে। ওই সিরিজ়টা আমাকে প্রচুর আত্মবিশ্বাসও দিয়েছে। বেশ কিছু রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছি। সেটার সুবিধা পেয়েছি।’’

ইংল্যান্ড সিরিজ়ের পর কিছু দিন বিশ্রাম পেয়েছেন। অনেক তরতাজা ভাবে মাঠে নামতে পারাও কি সাহায্য করেছে? রাহুল বলেছেন, ‘‘তা ঠিক ন। গত সপ্তাহেও একটা ম্যাচ খেলেছি। তবে এই ম্যাচটা খেলার আগে একটু চাপে ছিলাম। কারণ তার আগে কয়েক সপ্তাহ খেলিনি। হঠাৎ মাঠে নেমে রান করা সহজ নয়। তা ছাড়া চার বা পাঁচ দিন খেলার একটা ধকল থাকে। শারীরিক ভাবে বেশ চ্যালেঞ্জের। বিশেষ করে এখানকার আবহাওয়ায়। গত সপ্তাহের ম্যাচটায় খুব একটা ভাল খেলতে পারিনি। তবে মাঠে বেশ কিছুটা সময় কাটাতে পেরে উপকৃত হয়েছি।’’

বিদেশের তুলনায় দেশের মাঠে খেলা কি বেশি চ্যালেঞ্জের? রাহুল বলেছেন, ‘‘এ ভাবে বলা কঠিন। তবে গত কয়েক বছর নিজের ব্যাটিং নিয়ে প্রচুর পরিশ্রম করেছি। বিশেষ করে ছন্দ ধরে রাখার ব্যাপারে। প্রস্তুতির ওই পর্বগুলো দারুণ উপভোগের হয় না। উত্তেজক কিছুও থাকে না। তবে নিজের জন্য করতেই হয়। বিদেশে বাউন্স, সুইয়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার থাকে। সেটা নিশ্চিত ভাবে চ্যালেঞ্জের। আবার দেশের মাঠে পিচগুলো স্পিন সহায়ক হয়। তিন জন স্পিনার নিয়ে খেলে সব দল। এমন পরিস্থিতিতে পরিশ্রম করতে হয় রানের জন্য। খুচরো রানের উপর বেশি নির্ভর করতে হয়। চার-ছয় মারা সহজ হয় না। সব রকম পরিস্থিতিতে খেলার মতো করেই নিজেকে তৈরি করতে হয়েছে।’’

প্রয়োজনীয় পরিবর্তনটা করেন কী ভাবে? রাহুল বলেছেন, ‘‘এটা অনেকটাই মানসিক। পরিস্থিতি উপভোগ করার চেষ্টা করতে হয়। মানসিকতা পরিবর্তন করতে হয়। মূলত খুচরো রানের উপর নির্ভর করে শতরানটা ভালই উপভোগ করেছি। খুব সমস্যা হয়নি। কারণ গত কয়েক বছর ধরে এই বিষয়টা নিয়ে কাজ করছি। আমার মনে হয় বিদেশে খেলা আর দেশে খেলার এটাই আসল পার্থক্য। পরিশ্রমের ফল পাচ্ছি। মনে হয় এই পরিবর্তন আগে সহজে করতে পারতাম না বা মানিয়ে নিতে পারতাম না বলেই ঘরের মাঠে আগে আমার পারফরম্যান্স খুব ভাল হত না।’’

শুভমন গিলের দলের অন্যতম সিনিয়র ক্রিকেটার রাহুল। কোহলি-রোহিতের অনুপস্থিতিতে নতুন অধিনায়ককে ভরসা দিচ্ছেন। এখন আর নেতৃত্ব নিয়ে আগ্রহী নন। ব্যাটার হিসাবে নিজেকে আরও পরিণত, আরও উন্নত করতে চান। তাঁর এই আন্তরিক চাওয়ার সুফল পাচ্ছেন গম্ভীর, শুভমনেরা। নতুন রাহুল বুঝতে দিচ্ছেন না দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের অবসরের ধাক্কা। তবে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে রাহুল অভাব বোধ করেছিলেন কোহলি-রোহিতের। বলেছেন, ‘‘প্রথম যখন দেখলাম আমাদের ড্রেসিংরুমে ওরা নেই, কীরকম ফাঁকা ফাঁকা লেগেছিল।’’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে সাফল্য পেয়েছেন জুরেলও। অর্ধশতরান এবং শতরান পূর্ণ করার পর তাঁর উচ্ছ্বাসের ধরনও নজর কেড়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘পঞ্চাশ করার পর বাবাকে উৎসর্গ করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলাম। আর শতরানটা উৎসর্গ করেছি ভারতীয় সেনাকে।’’ উল্লেখ্য জুরেলের বাবা প্রাক্তন সেনা কর্মী। কার্গিল যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। শুক্রবার অর্ধশতরানের পর স্যালুট করে বাবাকে সম্মানিত করেছেন তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। আর শতরানের পর ব্যাটকে বন্দুকের মতো করে ধরে ‘গান স্যালুট’ দিয়ে তা উৎসর্গ করেছেন সেনাবাহিনীকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.